
প্রতিবাদী ছাত্রের ওপর দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর কনভয়ের গাড়ি চালিয়ে দেওয়া ও কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও থ্রেট সিন্ডকেট বন্ধের দাবিতে ৩ মার্চ এআইডিএসও-র ডাকা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মঘটে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল সমর্থন লক্ষ্য করে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতী-টিএমসিপি একযোগে হামলা চালায়। তাদের সাহায্য করে রাজ্য সরকারের পুলিশ বাহিনী। মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুষ্কৃতী বাহিনী এবং পুলিশের যৌথ আক্রমণে সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা তনুশ্রী বেজ সহ ছাত্র-ছাত্রী কর্মীরা গুরুতর আহত হন। এক ছাত্রী কর্মীর জামা ছিঁড়ে দেওয়া হয়। সেই অবস্থাতেই পুলিশ আবার তাদের শারীরিক আক্রমণ করে এবং গ্রেপ্তার করে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া বনমালী কলেজে সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা কমরেড নিরুপমা বক্সী সহ সংগঠনের অন্য কর্মীদের ওপর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুষ্কৃতী বাহিনী নৃশংস আক্রমণ চালায়। মহিলা কর্মীদের ওপর ওই দুষ্কৃতী বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করে। কোচবিহার শহরে এআইডিএসও-র জেলা সম্পাদক কমরেড আসিফ আলমকে তৃণমূল দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করলে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন। পুলিশ আক্রমণকারীদের বদলে আক্রান্ত এআইডিএসও কর্মীদেরই গ্রেফতার করে। ওই জেলার হলদিবাড়ি কলেজে পিকেটিং চলার সময় তৃণমূলআশ্রিত বহিরাগত দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করলে চারজন ছাত্র কর্মী গুরুতরভাবে আহত হন। শিলিগুড়িতে তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীদের আক্রমণে পাঁচজন আহত হয়েছে, দুজন গুরুতরভাবে জখম হয়।
একই ভাবে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁকুড়া জেলার খ্রিস্টান কলেজ সহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুষ্কৃতী এবং পুলিশ যৌথ আক্রমণ চালায়। সারা রাজ্যে এই আক্রমণে ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রী কর্মী অহত হয়েছেন। ১৩ জনের আঘাত গুরুতর। পুলিশ নৃশংস আক্রমণ নামিয়ে এনে ১১ জন ছাত্র নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

১ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে ছাত্র-ছাত্রীরা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা, কলেজগুলিতে থ্রেট কালচার বন্ধ করা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে চরম দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দিতে যান। ছাত্রদের কথা শোনার ধৈর্য না দেখিয়ে মন্ত্রীর কনভয় ছাত্রদের ধাক্কা মেরে ছুটতে শুরু করে, তাঁর গাড়ি ও তৃণমূলের এক নেতার গাড়ির ধাক্কায় দু’জন ছাত্র গুরুতর আহত হন। সারা রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এর প্রতিবাদে ধিক্কারে ফেটে পড়েন। এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিবাদেই ৩ মার্চ রাজ্য জুড়ে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এআইডিএসও।
এআইডিএসও-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক কমরেড বিশ্বজিৎ রায় বলেন, শত বাধা উপেক্ষা করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী সমস্ত ছাত্র সমাজকে আমরা সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমরা তৃণমূল এবং পুলিশের এই যৌথ আক্রমণকে তীব্র নিন্দা করছি। প্রতিবাদে ৪ মার্চ রাজ্যজুড়ে ধিক্কার দিবস পালনের আহ্বান জানায় এআইডিএসও।

কলেজে এবং ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে শাসকের থ্রেট সিন্ডিকেট এবং দুর্নীতির প্রতিবাদে, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়ে মার্চ মাস জুড়ে সারা রাজ্যে জুড়ে প্রতিরোধ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সংগঠন। ৪ মার্চ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান, ৬ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান সহ মার্চ মাস জুড়ে রাজ্যব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান অনুষ্ঠিত হবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শিবাশিস প্রহরাজ সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচানোর দাবিতে এবং ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আন্দোলনকে তীব্রতর করার ধারাবাহিক সংগ্রামে সামিল হওয়ার জন্য দেশের ছাত্রসমাজের কাছে আহ্বান জানান। ৪ মার্চ সর্বভারতীয় সংহতি দিবসের আহ্বান জানান তিনি। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের উপর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার তীব্র নিন্দা করেন এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য।
