
২৫ ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকে কৃষক ক্ষেতমজুরদের পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এআইকেকেএমএস। কেন্দ্রের এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং বিল বাতিল, এমএসপি আইনসঙ্গত করা, গ্রামীণ মজুরদের বছরে ২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি, সারের কালোবাজারি রোধ করে সস্তায় সার দেওয়ার ব্যবস্থা করা, খরা বন্যা ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি দাবিতে দল মত নির্বিশেষে কৃষকদের নিয়ে গ্রাম কমিটি গঠন করে আন্দোলন তীব্রতর করার ঘোষণা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক বিল করা নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ। বর্ধমানের ভাতার থেকে এসেছিলেন শেখ বজলুর হক। ক্ষোভের সাথে বললেন, তিন লাখ ছাব্বিশ হাজার টাকা বিল পাঠিয়েছে। মিটার খারাপ। কিন্তু তা পাল্টাচ্ছে না। যেমন খুশি বিল করে দিচ্ছে। এর প্রতিবাদে এখানে এসেছি।
একই অভিযোগ করলেন মন্তেশ্বরের দীননাথ হাজরা। একশো দিনের কাজ নিয়েও রয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ। এই প্রকল্পে নতুন জব কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় সরকার দু’বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখেছে। বছরে একশো দিন কাজ দেওয়ার কথা আইনে বলা হলেও ২৫-৩০ দিনের বেশি কাজ দেওয়া হয় না। এ ছাড়া রয়েছে এই কাজ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি। কাজ করেও বেতন পাননি বহু মজুর। রাজ্যে ৭ হাজার কোটি টাকা মজুরি বকেয়া, জানালেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার মহসিন মণ্ডল। নদিয়ার দেবগ্রামের চাষি মোরসালেম মোল্লা জানালেন, আমরা চাই মানুষ যেন সুখে থাকতে পারে। চাষ করে কৃষক যেন ফসলের ন্যায্য দাম পায়। জানালেন, পাঁচ বিঘা পাট চাষ করেছি, ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘা প্রতি ১৮ হাজার। চাষ করে খরচটাই ঠিকমতো উঠছে না। কিছুটা অতিরিক্ত না হলে চাষি বাঁচবে কী করে? পশ্চিম মেদিনীপুরের কাঠালিয়ার তপন আদকের অভিযোগ, সার ও কীটনাশকের গুণমান নিয়ে। আগে যে জমিতে যতটুকু সারে কাজ হত এখন তাতে হয় না। এ দিকে সার নিয়ে চলছে কালোবাজারি। চাষ হয়ে উঠছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ সরকার ফসলের ন্যায্য দামের ব্যবস্থা করছে না। বারো টাকা কেজি লঙ্কা। চাষের খরচ ওঠে তাতে? ক্ষোভের সাথে বললেন ঘাটালের রামকৃষ্ণ সামন্ত।
কোচবিহারের অশ্বিনী বর্মনরা সারের কালোবাজারির বিরুদ্ধে সফল আন্দোলন করেছেন। তিনি জানালেন, ডিএপি সারের দাম গত ১৫ বছরে ১৮৮ শতাংশ বেড়েছে। পটাশ সারের দাম বেড়েছে ৭২৪ শতাংশ। কোম্পানিগুলি ইচ্ছামতো সারের দাম বাড়াচ্ছে। তুফানগঞ্জে ৭৫০ বস্তা সার উদ্ধার করা হয়েছে, পুণ্ডিবাড়িতে থানা ঘেরাও হয়েছে, ১০০০ বস্তা সার উদ্ধার হয়েছে এবং ন্যায্য মূল্যে বিক্রি হয়েছে। একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে আন্দোলন ছাড়া কৃষকের বাঁচার রাস্তা নেই। কেন সারের এত দাম বৃদ্ধি? কৃষক নেত্রী সান্ত্বনা দত্ত জানালেন, ভারত এক সময় সার উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। ১৯৯০ সালে মনমোহন সিং সরকার উদার আর্থিক নীতি গ্রহণ করে। তারপর থেকেই ভারত সারের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ে। এখন ফসফেট এবং পটাশ পুরোটাই আমদানি করতে হয়। সে জন্য আমাদের দাবি সরকার পরিচালিত সার কারখানা পুনরুজ্জীবিত করে কৃষককে সস্তায় সার সরবরাহ করতে হবে। খরা বন্যা নদী ভাঙনে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন কৃষকরা। এ দিনের সমাবেশে এই সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এআইকেকেএমএস-এর নেতৃত্বে এ দিন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, তামিলনাড়ু, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্যে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতৃত্বে দেশব্যাপী আন্দোলনের যে পরিকল্পনা, এ দিনের সমাবেশ তাকে আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।










