Breaking News

হাসপাতালে ৯১১টি ওষুধ কিন্তু রোগীরা তার দেখা পান কই!

টাকার মাত্রাতিরিক্ত অবমূল্যায়ন হলেও রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যখাতে প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ বাড়াল না। স্বাস্থ্যখাতে এ বারের এস্টিমেটেড বাজেট হল ২১৩৫০ কোটি টাকা। খাতায়-কলমে দেড় হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি দেখালেও মূল্যবৃদ্ধিকে হিসাবে নিলে বরাদ্দ দাঁড়াবে গতবারের বাজেটেরই মতো। তার উপরে টাকার অবমূল্যায়ন ধরলে বাজেট গতবারের চেয়ে কমবে অনেকটাই।

রাজ্য সরকার বলছে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ। তা হলে তো বাজেটও বাড়ার কথা ছিল। এ বছর সর্বসাকুল্যে স্বাস্থ্য বাজেট রাজ্য জিডিপির ১.০৫ শতাংশ মাত্র।

ঐতিহাসিক ভোর কমিটির সুপারিশ ছিল দেশের মোট জিডিপির ন্যূনতম ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করার। ভারতের মতো বিশাল যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যের ক্ষেত্রে এই বরাদ্দ অনেক বেশি হওয়ার কথা। কারণ জনকল্যাণমূলক কাজগুলি রাজ্য সরকারেরই উপর বেশি বর্তায়। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য বাজেট মোট বাজেটের ১০ শতাংশ হওয়ার কথা এবং রাজ্যের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বাজেট সামগ্রিক বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়ার কথা। যেখানে এস্টিমেটেড বাজেটই হল রাজ্যের মূল বাজেটের মাত্র ৬.৯ শতাংশ।

পরিবর্তিত বাজেট ধরলে এই শতাংশ আরও অনেক কমে যাবে সন্দেহ নাই। ফলে যে রাজ্যে এখনও মাতৃমৃত্যুর হার দেশের গড়ের অনেক উপরে (দেশ ৯৭ এবং রাজ্য ১০৩), সেখানে স্বাস্থ্য বাজেট না বাড়িয়ে আরও কমালে কীভাবে মাতৃমৃত্যুর হার কমানো যাবে? যে রাজ্যে নিষিদ্ধ ওষুধ কোম্পানির ওষুধের রমরমা বাজার, যেখানে হাসপাতালে অত্যন্ত নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করা হয় এবং নিম্নমানের স্যালাইনে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, সেখানে ওষুধের গুণমান রক্ষার কথা বাজেটে নেই। বাজেটে ফলাও করে বলা হয়েছে ৯১১টি ওষুধ নাকি সরবরাহ করা হয়! ভুক্তভোগী মানুষ মাত্রেই তা জানেন হাসপাতালে ক’টি ওষুধ পাওয়া যায় আর ক’টি কিনে দিতে হয়। তার উপরে ওষুধ কোম্পানিগুলির সাথে সরকারের অশুভ আঁতাতের ফলে হাসপাতালগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের ওষুধে ছেয়ে গেছে। ভেজাল ওষুধ ও স্যালাইনে রোগীমৃত্যু লেগেই আছে।

সম্প্রতি আন্দোলনের চাপে সরকার জাল ওষুধের কারবারি ওষুধ কোম্পানিগুলিকে সাময়িক সরবরাহ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে হাসপাতালগুলোতে ওষুধের সংকট সাংঘাতিক আকার ধারণ করেছে। মানুষ ওষুধ পাচ্ছেন না। ভ্রান্ত ওষুধ নীতিতে টিবির ওষুধ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। বাজেটে যৌথ উদ্যোগে চলা ফেয়ার প্রাইস শপের উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যে ওষুধের গুণমান অত্যন্ত নিম্নমানের। পিপিপি নীতিতে চলা এই ওষুধের ব্যবসায়ের মাধ্যমে মানুষের ট্যাক্সের টাকা চালান হয়ে যায় ওষুধ ব্যবসায়ীদের পকেটে। সরকার ওষুধ সরবরাহে এই নীতির উপর বেশি জোর দিয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিপুল পরিকাঠামো এবং ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি রয়েছে। যার দরুন বিনা চিকিৎসায় অথবা অর্ধ চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুমিছিল চলছে। বিপুল এই ঘাটতি মেটাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বাজেটে বরাদ্দ করা হল না, এমনকি এই ঘাটতির কথা স্বীকার পর্যন্ত করা হল না। এর থেকেই বোঝা যায় সরকার মানুষের জীবন সম্পর্কে কতটা উদাসীন। কেন্দ্র, রাজ্য উভয় সরকারই মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে একই রকমভাবে ছিনিমিনি খেলছে।