কেন্দ্রীয় বাজেটে সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নয়নের কোনও দিশা নেই। ১ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ ভবানীশঙ্কর দাস এক বিবৃতিতে বলেন, বাজেটে ক্যান্সারের ওষুধের ওপর আমদানি শুল্ক ছাড় এবং আগামী পাঁচ বছরে এমবিবিএস-এ ৭৫ হাজার আসন বাড়ানোর ঘোষণা আপাত ভাবে জনমুখী পদক্ষেপ বলে মনে হলেও এই বাজেট স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল সমস্যায় দৃষ্টিপাত করতেই ব্যর্থ হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে কোনও বরাদ্দ করা হয়নি। রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা, সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা ইত্যাদি কোনও বিষয় এই বাজেটে নেই। পরিবেশ দূষণ, খাদ্যদ্রব্যের অনুন্নত মান এবং নানা যন্ত্রপাতি থেকে আসা বিকিরণ ইত্যাদি যেগুলি ক্যান্সারের কারণ হিসেবে আজ প্রধান ভূমিকা পালন করছে তা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এই বাজেটে অবহেলা করা হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যাল নীতি সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেট প্রীতি স্পষ্ট। বিদেশি কোম্পানিগুলির ক্যান্সারের ওষুধের ওপর শুল্ক ছাঁটাই করা হলেও এ দেশের দৈত্যাকার ওষুধ কোম্পানিগুলির ওষুধের দাম মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। রাষ্ট্রায়ত্ত ওষুধ কোম্পানিগুলি একের পর এক বন্ধ করা হচ্ছে। ফলে ওষুধের বাজারে বেসরকারি কোম্পানিগুলির প্রাধান্য বেড়ে চলেছে। এরই ফল ওষুধের আকাশছোঁয়া দাম এবং মাঝে মাঝেই নানা ওষুধের আকাল। সাম্প্রতিককালে সারা দেশে টিবির ওষুধের যে অভাব দেখা দিয়েছে তা সরকারের চরম অবহেলার নিদর্শন। এর ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তার মূল্যায়ন আজও হয়নি। একই সাথে দেখা যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে নিম্নমানের স্যালাইন এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের অভাবে রোগীদের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে। জনগণকে উচ্চ মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার বদলে সরকার ক্রমাগত তাদের বেসরকারি হাসপাতালের ব্যয়বহুল চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য করছে। ফলে বহু পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার সরকারের এই নীতির প্রতিবাদ বারবার করেছে এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারের দায়বদ্ধতা ও শক্তিশালী সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার দাবি করে আসছে।
তিনি বলেন, এমবিবিএস স্তরে আসন বাড়ানোর বাড়ানোর কথা বললেও বাজেটে দেখা যাচ্ছে, সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের দিকেই ঝুঁকছে। নতুন মেডিকেল কলেজের পরিকাঠামো সংক্রান্ত গাইডলাইনে ক্রমাগত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিল এবং নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি কর্পোরেট-বান্ধব নীতি তৈরি করছে। মেডিকেল শিক্ষায় প্রাইভেট কোচিং ইনস্টিটিউটের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজে নিয়োগ কার্যত বন্ধ। পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে ক্লিনিক্যাল ট্রেনিংয়ের পরিবর্তে মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন ভিত্তিক পরীক্ষা নিয়েই ডাক্তারি সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের নিম্নমানের ডাক্তার দিয়েই প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবসা চলছে। মেডিকেল শিক্ষার যথাযথ উন্নতির বদলে সরকার কর্পোরেট চিকিৎসা ব্যবসায়ীদের মুনাফার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-কর্মী তৈরিতেই মন দিয়েছে।
এই বাজেট জনস্বাস্থে্যর প্রয়োজনকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। জনগণের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার বদলে কর্পোরেটদের মুনাফার দিকেই মূল নজর রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। সরকার ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মেডিকেল শিক্ষাকে সম্পূর্ণ ব্যবসা ভিত্তিক করে তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে সম্পূর্ণভাবে বিশালাকায় কর্পোরেট হাসপাতাল, ওষুধ এবং ইনসিওরেন্স কোম্পানিদের গ্রাসে ঠেলে দিচ্ছে। মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার বাজেটকে কর্পোরেটমুখী আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা করেছে এবং পরিকল্পিতভাবে সরকারি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে সর্বস্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছে।