আমার রাজনৈতিক-জীবনের ২০ বছরে কোনও দলের একক শক্তিতে এত মানুষের এত বড় মিছিল আমি দেখিনি।কেউ মানতে চাক বা না চাক, পশ্চিমবঙ্গে এসইউসিআই(সি) এখন একটা শক্তি। শ্রীমানি মার্কেটে বাজার করতে আসা এক ব্যক্তি মিছিল দেখে বিস্ময়ে চিৎকার করে বললেন, ‘এস ইউ সি-র এত লোক’!
চেনা, অল্প চেনা কর্মীদের ভিড়ে হাজার হাজার অচেনা মুখ। বিশেষত যারা দূরের জেলা থেকে আগের দিন রওনা দিয়েছেন, কিছুটা ক্লান্ত। মুড়ি খাচ্ছেন, কেউ বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা রুটি। সেই মানুষই উঠে দাঁড়ালে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠল হেদুয়া চত্বর। বুকের জমানো ব্যথা, মেহনতি মানুষের অধিকার বোধ আর ঐক্যবদ্ধ জনতার স্পর্ধা নিয়ে শুরু হল মহামিছিল।
শুধু মিছিলে হাঁটা নয়, কিছু একটা ভূমিকা পালন করতে চাইছিলাম। শ্রীমানি মার্কেট মোড়ে মিছিলের ভলান্টিয়ার হয়ে গেলাম। একদিকে দেখলাম অনিমেষদা তাঁর বন্ধুকে নিয়ে একই ভূমিকা পালন করছেন। কিন্তু উল্টোদিকে কেউ নেই– একা এক সিভিক ভলান্টিয়ার সেই ভূমিকা নিয়েছেন। দাঁড়িয়ে পড়লাম তাঁর পাশে। দীর্ঘ মিছিল। সকলেই ব্যস্ত। এতক্ষণ রাস্তা আটকে মিছিল। বিস্মিত হলাম– সকলেই দাঁড়িয়ে মিছিল দেখছে, মোবাইলে ভিডিও কল করে বন্ধু, বাড়ির লোকেদের বলছে, ‘দেখ এস ইউ সি আই-এর মিছিল দেখ, মিছিলের শেষ দেখতে পাচ্ছি না।’
এক স্কুলছাত্রীর মা বাড়ি ফিরতে দেরি হচ্ছে বলে কিছুটা বিরক্ত। দেখলাম, সেই সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁকে বোঝাচ্ছেন, কেন এই মিছিল, কেন মিছিলটা জরুরি। আর এক অবাঙালি ভাই, তিনিও মানুষকে বোঝাচ্ছেন, বাইক-সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করছেন! যেন আমার কোনও কাজ নেই, জনগণই দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছে যাতে মিছিল সুশৃঙ্খল ভাবে এগিয়ে যেতে পারে। এ মিছিল তাদেরও। হ্যাঁ, এ জনতার মহামিছিল। শেষে সেই সিভিক ভলান্টিয়ার দাদাকে ধন্যবাদ দিয়ে এলাম।
যে সমাজ, যে রাষ্ট্র, যে শাসক, যে রাজনীতি এতসব অপরাধীর জন্ম দেয়, দুর্নীতি, খুনি, ধর্ষকের জন্ম দেয়, মানবিক মূল্যবোধ, বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নেয়, সেই শাসক ও রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। মানুষ আন্দোলনে আসছেন, ভাবছেন, স্বপ্ন দেখছেন বিকল্প রাজনীতির। আজকের মিছিল সেটাই প্রমাণ করল।
অর্ক মালিক, বেলমুড়ি, হুগলি