Breaking News

জল-জঙ্গল-জমি রক্ষায় আন্দোলনের অঙ্গীকার জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির

৫ জানুয়ারি কলকাতার রামমোহন হলে অল ইন্ডিয়া জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির সর্বভারতীয় কনভেনশন সংগঠিত হল। সভাপতিত্ব করেন জল-জমি-জঙ্গল রক্ষা ও গরিব মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা আন্দোলনের বিশিষ্ট জননেতা শম্ভুনাথ নায়েক। উদ্বোধনী ভাষণ দেন বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত শিল্পী ও জঙ্গল রক্ষার আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা মধু মনসুরি (হাসমুখ), বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, জঙ্গল রক্ষা আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা মধ্যপ্রদেশের জেএওয়াইএস সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বিক্রম আছালিয়া, ভাটনগর পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ সৌমিত্র ব্যানার্জী এবং অল ইন্ডিয়া জন অধিকার সুরক্ষা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা স্বপন ঘোষ প্রমুখ।

মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিসম্বর মুড়া। ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশে উন্নয়নের নামে ড্যাম, জলাধার, কলকারখানা তৈরি করা, রাস্তাঘাট সহ পরিকাঠামো উন্নয়ন, খোলামুখ খনি প্রভৃতি প্রকল্প গড়ে তোলার নামে লক্ষ লক্ষ গাছ কেটে হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। এর ফলে ভয়ানক ভাবে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ উচ্ছেদ হচ্ছেন। কেবল আদিবাসী নয়, নানা স্তরের মূলত গরিব মানুষের উপর এই আক্রমণ ঘটে চলেছে।

ডঃ সৌমিত্র ব্যানার্জী বলেন, ইদানিং উন্নয়ন উন্নয়ন বলে একটা কথা খুব সামনে আসছে। উন্নয়ন কে না চায়? কিন্তু কার জন্য বা কাদের জন্য উন্নয়ন– এটাই মুখ্য বিষয়। গুটিকয়েক কর্পোরেট, নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ? তিনি কর্পোরেট পুঁজিমালিকদের স্বার্থে উন্নয়নের নামে বনাঞ্চল ধ্বংস ও বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ বিশদে তুলে ধরে বলেন, জল-জমি-জঙ্গল রক্ষার আন্দোলন আজ অত্যন্ত সময়োপযোগী।

বিক্রম আছালিয়া বলেন, এখানে আদিবাসী অধিবাসী সকলে মিলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আলোচনা করছেন। আমরা সামাজিক সংগঠনগুলির নেতৃত্ব একত্রিত হয়ে কাজ করছি। একত্রিত হয়ে কাজ করলে শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বক্ষেত্রে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আয়োজক কমিটির মুখ্য উপদেষ্টা স্বপন ঘোষ বলেন, বনাঞ্চল, পাহাড়, খনি, নদীর জল প্রভৃতি সবকিছুর উপরে কর্পোরেটরা থাবা বসিয়েছে সরকারগুলোর সহযোগিতায়। ভারতের ৩৭ কোটির বেশি মানুষ বনাঞ্চলে বাস করে। প্রত্যক্ষভাবে এদের জীবন জীবিকা মারাত্মক সঙ্কটাপন্ন। বিশেষজ্ঞদের শত সতর্কতা সত্ত্বেও বনাঞ্চল কেটে শেষ করার এই প্রবণতা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার বন সংরক্ষণ রুলস ২০২২ এবং বন সংরক্ষণ (সংশোধনী) আইন ২০২৩ বলবৎ করে জঙ্গল ধ্বংসের ক্ষেত্রে যেটুকু আইনি বাধা ছিল তা কার্যত বিলোপ করতে মরিয়া। ব্রিটিশ শাসকদের মতোই স্বাধীন ভারতের শাসক হিসেবে যারা যখন ক্ষমতায় বসেছে একইভাবে মুনাফাবাজদের স্বার্থে আইন প্রণয়ন করে আদিবাসী ও চিরাচরিত বনবাসীদের জবরদখলকারী তকমা দিয়ে বনাঞ্চল ধ্বংস করে আরও বিপুল সংখ্যক মানুষকে উচ্ছেদ করে চলেছে। দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে অর্জিত ‘অরণ্যের অধিকার আইন-২০০৬’-এ বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু ব্যবস্থা ঘোষিত হয়েছিল সেটাও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

কনভেনশন থেকে দাবি ওঠে– বন সংরক্ষণ রুলস ২০২২ অবলম্বে বাতিল করতে হবে, বন (সংরক্ষণ) সংশোধনী আইন ২০২৩ প্রত্যাহার করতে হবে, অরণ্যের অধিকার আইন-২০০৬ সম্পূর্ণরূপে চালু করতে হবে, আদিবাসী, চিরাচরিত বনবাসী ও গরিব শোষিত মানুষকে তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে কোনও ভাবেই বঞ্চিত করা চলবে না। তাদের বাসস্থান, চাষাবাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা ও জঙ্গলে প্রবেশের অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।