Breaking News

একুশের আহ্বান

সেদিন একুশে জানুয়ারির মহামিছিলের প্রচার করতে গিয়ে এক নতুন ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলাম। আর জি করের ঘটনার সাথে জড়িত দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না পাওয়ায় এখনও মানুষের মধ্যে কতখানি ক্ষোভ রয়েছে, তা দেখা গেল এক মাধ্যমিক পড়ুয়া ভাইয়ের মধ্যে। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ স্টেশনে আমরা কয়েকজন কর্মী লিফলেট নিয়ে মহামিছিলের প্রচার করছিলাম।

আমাদের আবেদন শুনে তরুণ ছাত্রটি দাঁড়িয়ে পড়ে এবং জানতে চায় ‘আমার দিদির’ অর্থাৎ অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবিই আমরা তুলছি কি না। লিফলেটের প্রথম দাবি অভয়ার ন্যায়বিচার দেখে ছেলেটি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কিন্তু তার দুঃখ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় কলকাতা যেতে পারবে না। দেখলাম ছেলেটির চোখ দুটি ছলছল করছে। বলল, দিদি আমার মনে হয় ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি দেশের মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য এই আন্দোলনগুলিতে ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার। প্রথমে ভাবতাম পুলিশ মিলিটারিরা দেশসেবার কাজ করে। তাই ভাল করে পড়াশোনা করে পুলিশ মিলিটারি হয়ে দেশসেবা করব। কিন্তু আর জি করের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা দেখে মনে হল পুলিশ-মিলিটারিরা শাসক দলের কথামতোই উঠবোস করে। এখন মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের বাঁচার একটাই পথ– আন্দোলন। তাই নিজেকে একজন আন্দোলনকারী হিসেবেই ভবিষ্যতে গড়ে তুলতে চাই। দিদি, এখন এইসব কথা শোনার মতো লোকের সময়ের বড় অভাব। তুমি যে সত্যিকারের দিদির মতো আমার কথা এতটা সময় দিয়ে শুনলে তার জন্য ধন্যবাদ। এর পর ছেলেটি আমাকে প্রণাম করে এবং তার দু’চোখ বেয়ে জল ঝরে পড়ে। বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় বারবার বলে যায়, দিদি আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখো। তোমাদের খুব প্রয়োজন আমার জীবনে।

ছেলেটির সাথে কথা বলে নিজের মধ্যে কাজ করার নতুন প্রেরণা পেলাম। মনে হয় একুশে জানুয়ারি শুধুমাত্র একটা মহামিছিল নয়, একটা ‘একুশের আহ্বান’। এই মহামিছিলের দিকে চেয়ে আছে হাজার হাজার মানুষ, তাদের কাছে মহামিছিলের বার্তা পৌঁছানো খুবই জরুরি।

মোবাস্বরা খাতুন, উত্তর দিনাজপুর