আর জি কর আন্দোলনের লক্ষ্য ন্যায়বিচারের সাথে স্বাস্থ্যের হাল ফেরানোও

বিচারহীনতার ৯০ দিনে ডব্লিউবিজেডিএফ-এর ডাকে কলেজ স্কোয়ার থেকে এসপ্ল্যানেড মিছিল। ৯ নভেম্বর

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালের ভিতরেই সেখানকার চিকিৎসক-ছাত্রী ‘অভয়া’র নারকীয় হত্যার ভয়াবহ ঘটনার তিন মাস পার হয়ে গেল। ন্যায়বিচার মেলা দূরের কথা, এখনও খুনিদেরই চিহ্নিত করতে পারল না সিবিআই। ব্যতিক্রমী হওয়া সত্ত্বেও শিয়ালদহ আদালতে আর পাঁচটা মামলার মতোই গয়ংগচ্ছ ভাবে চলছে অভয়া মামলার কাজ। সুপ্রিম কোর্ট স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা হাতে তুলে নেওয়ায় দ্রুত ন্যায়বিচার মিলবে ভেবে আশান্বিত হয়েছিলেন যাঁরা, আদালতের রকমসকম দেখে হতাশ হওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় থাকছে না। কোর্টে তারিখের পর তারিখ দেওয়া হচ্ছে, আর ন্যায়বিচারও যেন দিনে দিনে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

হাসপাতালের ভিতরের একটি ঘরে অভয়ার মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আর জি করে তাঁর সহকর্মী জুনিয়র ডাক্তাররা আঁচ করেন যে, কর্তৃপক্ষ যেভাবে এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তা আসলে এক ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করার চেষ্টা। তাঁরা আরও বুঝতে পারেন যে, রাজ্যের গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও মেডিকেল কলেজগুলি জুড়ে যে ভয়ঙ্কর চুরি-দুর্নীতি ও হুমকি-সংস্কৃতি চলছে, এই হত্যাকাণ্ড সে সবের পিছনে থাকা শাসকদল-পোষিত নানা বিষচক্রের কুকীর্তিরই পরিণাম। ফলে সেই মুহূর্তেই বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন শুরু করেন। যোগ দেন অন্য মেডিকেল কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন চিকিৎসকরা। কর্মবিরতিতে যান জুনিয়র ডাক্তাররা। অভয়া হত্যার প্রতিবাদে গোটা রাজ্যে আন্দোলনের ঝড় ওঠে। সে ঝড় ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে তো বটেই, এমনকি দেশের বাইরেও। একটি হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন ঐতিহাসিক মাত্রা পায়। নেতৃত্বকারী জুনিয়র ডাক্তাররা অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। ন্যায়বিচার সহ স্বাস্থ্যব্যবস্থার খোলনলচে পাল্টানো ও চিকিৎসকদের সুরক্ষার যে দশ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তার বেশ কয়েকটি অর্জিতও হয়।

জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার

আন্দোলনের এই সময়কালে চিকিৎসা পরিষেবা সঙ্গত কারণেই খানিকটা ব্যাহত হয়। তা সত্ত্বেও রোগী ও তাঁদের পরিজনরা আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের পাশেই ছিলেন। অথচ দেখা যায়, পুরো সময় জুড়ে সরকার নানাভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার অবনতির জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের দায়ী করতে চেয়ে নানা মিথ্যে প্রচার চালাতে থাকে। এ নতুন কিছু নয়। গত কয়েক দশক ধরে যখনই পশ্চিমবঙ্গ সহ নানা রাজ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি বা মেডিকেল কলেজগুলিতে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের ধর্মঘটের মতো ঘটনা ঘটেছে, প্রতিবারই দেখা গেছে, বিশেষ করে জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলনে নামলেই শাসকদের মধ্যে একটা ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে যায়। কারণ এই আন্দোলনে ক্ষমতাসীন সরকারের উপর একটা চাপ তৈরি হয়, এমনকি তাদের ভোটব্যাঙ্কেও টান পড়ে। ফলে শাসকরা আন্দোলনকারীদের উপর প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সময় শাসক দলের গুন্ডাবাহিনীও লেলিয়ে দেওয়া হয়, সাধারণ মানুষকে উস্কানি দিয়ে তাদের ডাক্তারদের বিরুদ্ধে প্ররোচিতও করা হয়।

কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা কাজ না করলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে এত শোরগোল তোলা হয় কেন? এঁরা তো শিক্ষানবিশ। তাহলে এঁরা কিছুদিন কাজ না করলেই পরিষেবার এত বিঘ্ন কেন ঘটে? সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা কি তাহলে এঁদের উপর ভর করেই দাঁড়িয়ে আছে?

দেখা যাক, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কী।

বর্তমানে এ রাজ্যে হাউসস্টাফ, পিজিটি, পিডিটি সব মিলিয়ে সরকারি হিসেব অনুযায়ী জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা মোটামুটি সাত হাজারের কাছাকাছি। রাজ্যে মেডিকেল কলেজ মোট ২৬টি। এর নিচে জেলা, মহকুমা স্তরের হাসপাতাল, স্টেটজেনারেল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এবং আরও নিচে রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অর্থাৎ মধ্যম ও প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালগুলি। এই সব হাসপাতালে কিন্তু জুনিয়র ডাক্তার নেই। ঘটনা হল, বতর্মানে জেলা হাসপাতাল বাদ দিলে মধ্যম স্তরের হাসপাতালগুলিতে ৩৫ শতাংশের উপরে বিশেষজ্ঞের পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। কোনও কোনও বিভাগে ডাক্তার ঘাটতির মাত্রা মাঝেমধ্যেই চরমে পৌঁছয়। সরকার নতুন করে বিশেষজ্ঞ পদে স্থায়ী নিয়োগ করছে না। ফলে একেবারে অস্থায়ী ও নবীন বিশেষজ্ঞদের উপরেই বতর্মানে মধ্যম স্তরের পরিষেবার দায় এসে পড়েছে। তৈরি হচ্ছে পরিষেবায় নানা ধরনের সঙ্কট।

জেলার হাসপাতালে পরিকাঠামোর বেহাল দশা

মধ্যম স্তরের হাসপাতালগুলিতে বেড, পরিকাঠামো এবং লোকবলের বিপুল ঘাটতি থাকায় জটিল যে সব রোগের চিকিৎসা এই স্তরে হওয়ার কথা, তা হয় না। ফলে গ্রাম এবং শহরের বেশিরভাগ রোগীর চাপ গিয়ে পড়ে শহরের মেডিকেল কলেজগুলিতে।প্রাথমিক স্তরের হাসপাতালেও বিপুল পরিকাঠামো ঘাটতি রয়েছে। এই স্তরেজনসংখ্যার নিরিখে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সংখ্যায় ঘাটতি রয়েছে মোটামুটি ৬৯ শতাংশ এবং ব্লক স্তরের গ্রামীণ হাসপাতালের ঘাটতি ৫৮ শতাংশ। মূলত ১৯৯১ সালের জনসংখ্যার ভিত্তিতে যে হিসাব করা হয়েছিল, তাতেই মেডিকেল অফিসারের ঘাটতি ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ। বতর্মান জনসংখ্যা এবং ইন্ডিয়ান পাবলিক হেলথ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হিসাব করলে এই ঘাটতি আরও অনেক বাড়বে। অন্য দিকে গ্রামীণ হাসপাতালে বিশেষজ্ঞের পদ বর্তমানে ৯০ শতাংশের উপরে ফাঁকা পড়ে রয়েছে। ফলে এই স্তরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক রেফারাল পরিষেবা দুটোই ভীষণভাবে মার খাচ্ছে, যার দরুণ প্রায়শই প্রাথমিক স্তরেররোগীর ভির সরাসরি গিয়ে পড়ে মধ্যম স্তরে এবং মেডিকেল কলেজ স্তরে। একইভাবে, মধ্যম স্তরের রোগীর ভিড় সরাসরি অথবা রেফার হওয়ার ফলেও মেডিকেল কলেজে গিয়ে পড়ছে। এক কথায় সরকারি নিয়োগ প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত কম হওয়ার কারণেই রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

সরকারি নীতির ফলে ভুগছে মেডিকেল কলেজগুলোও

মেডিকেল কলেজগুলোর সাম্প্রতিক চেহারাটা কী? সেখানেও লোকবল এবং পরিকাঠামোর অভাব। সম্প্রতিমেডিকেল কাউন্সিলকে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভেঙে দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক ‘ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন’ (এনএমসি) তৈরি করার ফলে মেডিকেল কলেজগুলির নিয়মাবলি ভীষণভাবে শিথিল করা হয়েছে। সরকার চটকদার ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে যত্রতত্র মেডিকেল কলেজ খুলে দিয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় অধ্যাপক নেই, ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই, হস্টেল নেই, তবুও দিব্যি চলছে। ‘মেডিকেল কলেজ’-এ মেডিকেল অফিসারের পদ তুলে দেওয়ার ফলে সম্পূর্ণ রোগীর চাপ এসে পড়ে শিক্ষক-চিকিৎসকদের উপরে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এত শিথিল করার পরেও শিক্ষকপদ প্রায় ৪০ শতাংশ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীর পদও বিপুল সংখ্যায় ফাঁকা পড়ে আছে। যেমন বিভিন্ন টেকনিক্যাল পদে প্রায় ৩০ শতাংশ ঘাটতি রয়েছে, নার্সিং-কর্মীদের পদে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ঘাটতি। জেনারেল ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট, রোগীকে তাৎক্ষণিক আরাম বা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যাঁদের গুরুত্ব অপরিসীম, সেই পদে ঘাটতিপ্রায় ৬৫ শতাংশ, সুইপার পদে ৬৮ শতাংশ। এই হল রাজ্যে চিকিৎসা পরিকাঠামোর চেহারা, যাকে আড়াল করতে যাবতীয় দোষ এ বার চাপানো হল আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর।

জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলনে নামেন বাধ্য হয়েই

কাজ শেখার জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের দিনরাত এক করে চিকিৎসার কাজে হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয়। অথচ তাঁদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কী? সেখানে না আছে থাকার বা বিশ্রামের জায়গা, না আছে কাজের উপযুক্ত জায়গা। আর ন্যূনতম নিরাপত্তা যে নেই, সে তো অভয়াই প্রমাণ করলেন জীবন দিয়ে। টানা ৩৬ ঘণ্টা, ৭২ ঘণ্টা ডিউটি, একের পর এক নির্ঘুম রাত। চারিদিকে দালাল, উন্মাদ, মাতাল অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে– কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। কোথাও কোথাও কর্তৃপক্ষের সাথে যোগসাজশেই নানা অবৈধ কাজ চলছে। তার চাপ এসে পড়ছে জুনিয়র এবং সিনিয়র ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর। এরকম একটা নৈরাজ্যের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজ করতে হয় এবং প্রথম থেকেই ঘাটতি হওয়া সিনিয়র ডাক্তারদের দায়িত্ব এমনকি অন্যান্য সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীর দায়িত্বও কাঁধে নিতে হয়। এভাবেই তাঁদের ওপর ভর করে কাজ চলে যায়, হাসপাতাল চলতে থাকে। আর সরকার তার দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে খুশি হয়ে ভাবে, এত পদ ফাঁকা থেকেও যদি হাসপাতাল দিব্যি চলে, তা হলে আর নিয়োগ করার দরকার কী? প্রতি বছর সাড়ে চার হাজার এমবিবিএস ডাক্তার পাশ করে বেরোচ্ছেন, তিন হাজারের উপরে এমডি, এমএস বেরোচ্ছেন। অথচ কোনও নিয়োগ নেই। জনগণের অর্থের, মানবসম্পদের কী বিপুল অপচয়!

সরকারের অবহেলায় সৃষ্ট এরকম একটা অরাজক পরিস্থিতিতে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কাটাতে হয় জুনিয়র, সিনিয়র ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের। এর পর যখন ঘটে যায় বড়সড় অঘটন, ডাক্তার নিগ্রহ বা অন্য কোনও ভয়ানক ঘটনা, তখন ডাক্তারদের অত্যন্ত সঙ্গত ক্ষোভ ওপ্রতিবাদ চাপা দিতে এবং নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যহত হওয়ার কাঁদুনি গাইতে থাকেন সরকারের মন্ত্রী-নেতারা। এ বার আরজি কর-এর ঘটনার ক্ষেত্রেও ঠিক এটাই ঘটেছে।

জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সমগ্র সমাজের স্বার্থেই

বর্তমানে অভয়া আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য কিছু মহল থেকে একটা কথা তোলা হচ্ছে যে, ডাক্তাররা নিজেদের পেশাগত দাবি বেশি রাখছেন, আড়ালে চলে যাচ্ছে অভয়ার ন্যায়বিচারের কথা। অথচ বাস্তব ঠিক বিপরীত। মনে রাখা দরকার, আগের সরকারের আমল থেকেই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে, হাসপাতালে গড়ে ওঠা যে দুর্নীতির দুষ্টচক্র এবং তাকে সামাল দিতে শাসকদলের মদতপুষ্টদের কল্যাণে জাঁকিয়ে বসা থ্রেট কালচার, এরই শিকার হয়েছেন অভয়া। আন্দোলনকারী ডাক্তাররা যে দাবিগুলো রেখেছেন, তা কখনওই শুধু তাদের পেশাগত দাবি নয়, এগুলির সাথে ডাক্তার সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা, হাসপাতালের পরিবেশ রক্ষা এবং অবশ্যই সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবার প্রশ্নটিও অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত। জুনিয়র ডাক্তাররা এর আগেও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন করার দাবি জানিয়েছেন বারবার, এ বারের দশ দফা দাবিও তাই।

প্রশ্ন ওঠে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার যে পরিকাঠামো এমনিতেই থাকার কথা, তা নিয়ে ডাক্তারদের বারবার আন্দোলন, ধর্মঘট করতে হচ্ছে কেন? সরকার সত্যিই যদি জনমুখী স্বাস্থ্যের কথা ভাবত, তা হলে তো এ নিয়ে দাবি তোলার, ধর্মঘট করার দরকার পড়ত না। আসলে এখানেই লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ডাক্তারদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করার কারণ। বিগত সিপিএম সরকারের ইতিহাস এবং আজকের তৃণমূল সরকারের চূড়ান্ত অপশাসনকে মেলালেই বোঝা যাবে, মুখে জনগণের সেবার কথা বলে চিকিৎসা নিয়ে লাভজনক ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়াই এদের আসল উদ্দেশ্য। জনবিরোধী স্বাস্থ্যনীতি, সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে কর্পোরেট মালিকের হাতে ক্রমাগত তুলে দেওয়ার নানা প্রকল্প, যার পরিণামে মেডিকেল কলেজ থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র পযর্ন্ত পরিকাঠামো এবং লোকবলের ব্যাপক ঘাটতি, ভোটের আগে চটকদার নানা স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের দিনরাত এক করে অমানুষিক পরিশ্রম করতে বাধ্য করা– এ সবই সেই স্বাস্থ্যের বাণিজ্যিকীকরণেরই অংশ।

সরকার আর চাইছে না স্থায়ী ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্যকর্মীর দায়িত্ব বহন করতে। সেই জন্যেই আজ স্বাস্থ্যব্যবস্থা অনেকটাই জুনিয়র ডাক্তার নির্ভর হয়ে উঠেছে। আর এই অব্যবস্থার প্রতিবাদে যখন জুনিয়র ডাক্তাররা জোট বেঁধে আন্দোলন করছেন, তখন উল্টে তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে শাসক দল ও সরকার। তাই অভয়ার ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই ঐতিহাসিক আন্দোলন আজ শুধু একটি দাবিতেই সীমাবদ্ধ নেই। সমাজে অভয়ার মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সাধারণ মানুষ যাতে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পান, হাসপাতালগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে নির্ভয়ে সুস্থ পরিবেশে কাজ করতে পারেন, সেই সমস্ত অতি প্রয়োজনীয় লক্ষ্য নিয়ে এই আন্দোলন আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, আরও সংঘবদ্ধ হচ্ছে।