Breaking News

বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পূর্বাঞ্চলীয় কনভেনশনে স্মার্ট মিটার চালুর বিরুদ্ধে দেশজোড়া আন্দোলনের ডাক

বৃহৎ কর্পোরেট গোষ্ঠীর স্বার্থে সম্পূর্ণ জনবিরোধী প্রিপেড স্মার্ট মিটার চালুর বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (আইকা)-র উদ্যোগে পূর্বাঞ্চলীয় কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় আসামে। ২৮ অক্টোবর গুয়াহাটি জেলা গ্রন্থাগার প্রেক্ষাগৃহে আসাম সহ পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ত্রিপুরা ইত্যাদি রাজ্য থেকে সহস্রাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন এই কনভেনশনে। স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ক্ষোভ এতটাই তীব্র যে, আসামের দুটি রুটে ওই দিন সমস্ত ট্রেন বাতিল হওয়া সত্ত্বেও কয়েক শত বিদ্যুৎ গ্রাহক অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে কনভেনশনে উপস্থিত হন। সভাপতিত্ব করেন আইকা-র সর্বভারতীয় সভাপতি স্বপন ঘোষ। উদ্বোধন করেন আসাম পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড(এপিডিসিএল)-এর অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তথা বিদ্যুৎ আন্দোলনের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বিমল দাস। তিনি বলেন, গৃহস্থ গ্রাহকের ঘরে রিচার্জ পদ্ধতিতে মিটার স্থাপন জনবিরোধী। সরকার কোনও পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই স্মার্ট মিটার সংযোগ করছে। এটা বিদ্যুৎ আইন ২০০৩-কে লঙ্ঘন করছে।

আমন্ত্রিত বক্তা, শিলং-এর সেন্ট এডমন্ড কলেজের ইলেকট্রনি’ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ওয়ান্ডেল পাশা বলেন, ভারতে ৬০ শতাংশ মানুষের কাছে এখনও স্মার্ট ফোন নেই, প্রত্যন্ত অঞ্চলে নেটওয়ার্ক নেই, তখন এই স্মার্ট মিটার ব্যবস্থা মানুষকে বিপাকে ফেলবে। তিনি বলেন, যেসব দেশে স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে, সেখানে মানুষের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। ভারত সরকারের এই স্মার্ট মিটার প্রকল্প বাতিল করার জন্য তিনি দাবি জানান।

সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন,স্মার্ট মিটার সংযোজনের সাথে সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা করা হচ্ছে বৃহৎ কর্পোরেট গোষ্ঠীর মুনাফার স্বার্থে। একচেটিয়া পুঁজিপতিরা দেশের বন, জল, জঙ্গল, প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন কুক্ষিগত করছে তেমনি এখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকেও নিজেদের দখলে নিতে চাইছে। এদের স্বার্থেই সরকার বিদ্যুতের বেসরকারিকরণের সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ করে তুলেছে। সরকারের এই চক্রান্ত সফল হলে দেশের সাধারণ গরিব মানুষ মারাত্মক ভাবে পুঁজিপতিদের শোষণের মুখে পড়বেন। অত্যন্ত চড়া দামে মানুষকে বিদ্যুৎ কিনতে বাধ্য করবে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীরা। এর বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে ঐক্যবদ্ধ গ্রাহক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি আহ্বান জানান।

কনভেনশনের সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান ভারত সরকারের শক্তি বিভাগের প্রাক্তন সচিব এ এস শর্মা, অল ইন্ডিয়া পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ফেডারেশনের অধ্যক্ষ শৈলেন্দ্র দুবে, অল ইন্ডিয়া ফোরাম এগেইনস্ট প্রাইভেটাইজেশনের অধ্যক্ষ ডঃ এ ম্যাথু এবং আইকার সাধারণ সম্পাদক কে ভেনুগোপাল ভাট।

মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ অজয় চ্যাটার্জী। প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন অল ইন্ডিয়া পাওয়ার মেনস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সমর সিনহা, ইয়ুথ এগেইনস্ট সোসাল ইভিল-এর সভাপতি সঞ্জীব রায়। তা ছাড়া বক্তব্য রাখেন অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাস, অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অজয় আচার্য সহ সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। শেষে সমগ্র দেশে বিদ্যুৎ গ্রাহক আন্দোলন শক্তিশালী করা এবং জেলায় জেলায়, অঞ্চলে অঞ্চলে বিদ্যুৎ গ্রাহক কমিটি গড়ে তোলার অঙ্গীকার নেন গ্রাহক প্রতিনিধিরা।