অভয়া ধর্ষণ-খুন কাণ্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১৫ অক্টোবরের দ্বিতীয় শুনানিও প্রথমটির মতোই দেশের মানুষকে হতাশ করেছে। সিবিআই যে স্ট্যাটাস রিপোর্ট এ দিন সুপ্রিম কোর্টে পেশ করেছে তাতে প্রথম শুনানির থেকে আলাদা কিছুই পাওয়া যায়নি।
৯ আগস্টের আর জি করের ঘটনার পরদিন কলকাতা পুলিশ সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেফতার করে এবং ধর্ষণ-খুনের জন্য তাকেই দায়ী করে। তারপর সিবিআই তদন্তভার নেয় এবং ঘটনার ৫৮ দিনের মাথায় ৭ অক্টোবর তার প্রথম চার্জশিট জমা দেয়। তাতে দেখা যায় কার্যত কলকাতা পুলিশের রিপোর্টটির জেরক্স কপিই তারা জমা দিয়েছে। যে একজনকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, সিবিআই তার বাইরে কিছুই করতে পারেনি। তা হলে দুক্সমাস ধরে সিবিআই যে এত তদন্ত চালাল তার রিপোর্ট কোথায়? এর উত্তর পায়নি দেশের মানুষ। সিবিআই অফিসাররা শুধু বলেছিলেন, আরও কাউকে যদি দোষী হিসাবে পাওয়া যায় তাদের নাম অতিরিক্ত চার্জশিট হিসাবে পরে জমা দেওয়া হবে। স্বাভাবিক ভাবেই সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির জন্য। কিন্তু ১৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতেও কোনও নতুন নাম পাওয়া গেল না। আশ্চর্যের বিষয়, গোটা শুনানি পর্বে অভয়ার খুন-ধর্ষণের প্রসঙ্গ প্রায় উঠলই না বলা চলে। আইনজীবী এবং বিচারপতিরা মূল বিষয়– অভয়ার ধর্ষণ-খুন এবং তার ষড়যন্তে্র কারা যুক্ত তা শনাক্ত করার পরিবর্তে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ বিষয় নিয়েই কাটিয়ে দিলেন। অর্থাৎ রাজ্য সরকারের বক্তব্যেই যেমন সিবিআই সিলমোহর দিচ্ছে, তেমনই সুপ্রিম কোর্টও প্রকারান্তরে তাতেই সিলমোহর দিয়ে চলেছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অভয়ার খুন-ধর্ষণে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে সিবিআইয়ের যতখানি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তার থেকে বেশি সময় তারা ব্যয় করছে হাসপাতালের দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয়ের তদন্তে। অন্তর্বর্তীকালীন কিছু পর্যবেক্ষণ দেখে যেখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত বিচলিত বোধ করেছিলেন, সেখানে এতদিন পর কলকাতা পুলিশের রিপোর্টের অনুরূপ চার্জশিট পেশ করে একজনকেই এত বড় একটি ষড়যন্ত্র এবং ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের চার্জশিটে আসামী করে দেখানো শুধু হতাশাজনক নয়– তা সারা দেশের চিকিৎসক-সমাজ সহ সকল মানুষের ন্যায়ের অধিকার ও প্রত্যাশার প্রতি এক চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দুর্নীতির তদন্ত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও তা খুন-ধর্ষণের তদন্ত থেকে আলাদা। পরীক্ষা ব্যবস্থায় দুর্নীতি, টাকা নিয়ে পাশ করানো, জাল ওষুধ ও নিম্ন মানের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ, মৃতদেহ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি, থ্রেট কালচার প্রভৃতি নানা বিষয় নিয়ে পূর্বতন অধ্যক্ষের যে বিরাট দুর্নীতিচক্র, যে চক্রেরই শিকার ওই চিকিৎসক-ছাত্রী, তার তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু সিবিআই যে অভয়ার ধর্ষণ-খুনে দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে, সেটিই এই মুহূর্তে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই দাবি নিয়েই সারা রাজ্য, সারা দেশের মানুষ ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’ স্লোগান দিয়ে বারবার পথে নেমেছেন, রাত জেগেছেন– সেটাকেই পিছনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কেন? আড়াই মাস হতে চলল, পুলিশের তদন্তের বাইরে এখনও দোষীদের ব্যাপারে সিবিআই কেন নতুন কিছু যুক্ত করতে পারল না?
সিবিআই-এর তদন্তে ধীরগতি কেন?
স্বাভাবিক ভাবেই জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে, তবে কি সিবিআই কোনও কারণে ধীরে চলো নীতি নিয়ে চলছে? কলকাতার শিয়ালদহে সিবিআই আদালতে তারা যে রিপোর্ট দিচ্ছে, দেখা যাচ্ছে বিচারকও বলছেন, তাতে অনেক ফাঁক। এই রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সিবিআই কি যথার্থ মনোযোগ দিচ্ছে? সিবিআই কে চালায়? কেন্দ্রীয় সরকার। তবে কি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কোনও বোঝাপড়া হয়ে গেল? দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিলে গণআন্দোলনের জয় সূচিত হয়ে যাবে এবং তা আগামী দিনে দেশ জুড়ে মানুষকে যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে উদ্বুদ্ধ করে তুলবে– একেই কি কেন্দ্র-রাজ্য উভয় সরকারই ভয় পাচ্ছে? না হলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এত বড় একটা সুযোগ পেয়েও প্রধান বিরোধী দলের দাবিদার বিজেপি হাত গুটিয়ে আছে কেন? কেন আজ পর্যন্ত দেশের প্রধানমন্ত্রী এমন ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে মুখই খুললেন না? কেন এমন একটা জ্বলন্ত ইস্যুকে ছেড়ে দিয়ে বিরোধী নেতা সিঙ্গুরে গিয়ে সদ্য প্রয়াত টাটার ছবি নিয়ে মিছিল করে টাটা গোষ্ঠীকে হাতে-পায়ে ধরে ফিরিয়ে আনার নাটক করছেন?
সিবিআইকে ঘিরে ওঠা নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায়িত্ব সিবিআই-এরই। তাদেরই প্রমাণ করতে হবে যে, তাদের সম্পর্কে বহুল প্রচলিত ‘খাঁচার তোতা’ অভিধা সত্য নয়। প্রমাণ করতে হবে তারা একটি নিরপেক্ষ সংস্থা, কেন্দে্রর বিজেপি সরকারের হাতের পুতুল নয়।
বাস্তবিক সারা দেশের মতো এ রাজ্যেও সিবিআইয়ের ট্র্যাক-রেকর্ড খুবই খারাপ। খুব কম মামলাই সিবিআইয়ের হাতে সাফল্যের মুখ দেখেছে। এ রাজ্যে তারা যতগুলি তদন্ত চালিয়েছে তার কোনওটিতে সাফল্য আসেনি। এই অবস্থায় জনআন্দোলনের প্রবল চাপ বজায় না রাখলে তদন্ত যে গতি হারাবে এবং দোষীরা যে ধরা পড়বে না তা জোর দিয়েই বলা যায়।
সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা
সুপ্রিম কোর্টই বা এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছে কেন? কে না জানে ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনায়েড’ অর্থাৎ, বিচারে বিলম্ব বাস্তবে বিচারহীনতারই নামান্তর। একটা সত্য এখন স্পষ্ট যে, আর জি কর আন্দোলন দেশ জুড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে দেখে তড়িঘড়ি সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করে (সুয়োমটো)। তাতে অনেকেই ভাবতে শুরু করেন– সুপ্রিম কোর্টই বিচার এনে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝিয়ে দিচ্ছে, আন্দোলন না থাকলে আদালতও বিচারের বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখবে।
সিবিআই তদন্তে গতি আনতে আন্দোলনের চাপ জরুরি
এই মুহূর্তে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্তে শ্লথ গতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তীব্রতর করতে হবে। অভয়ার বিচারের দাবিকে কোনও অবস্থাতেই পিছনে ঠেলে দেওয়া চলবে না। এটাই এ রাজ্য সহ দেশজোড়া জনগণের আকাঙক্ষা। এই আকাঙক্ষাকে মূল্য দিয়েই এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) সিবিআইয়ের উপর চাপ তৈরিতে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। মেডিকেল সার্ভিস সেন্টার, সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম ও নার্সেস ইউনিটি ৯ অক্টোবর সল্টলেকে সিবিআই দফতর অভিযানের কর্মসূচি নেয়। বিপুল সংখ্যায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী সহ বহু সাধারণ নাগরিক সেই অভিযানে অংশ নেন। একই ভাবে প্রায় দেড়শো নাগরিক সংগঠনের মঞ্চ ‘সিটিজেন্স ফর জাস্টিস, জাস্টিস ফর অভয়া’-র ডাকে হাজার হাজার মানুষ উৎসবের মধ্যেও ১২ অক্টোবর সিবিআই দফতর ঘেরাও করেন। আবার ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখাক্সর আহ্বানে ১৭ অক্টোবর কয়েক হাজার মহিলা কর্মসূচিতে যোগ দেন।
অভূতপূর্ব গণজাগরণ
এ এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ। যে জনগণ অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবিতে এবং তাঁর খুনিদের, ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তির দাবিতে দিনের পর দিন মিছিল করেছেন, রাত জেগেছেন, তাঁরা তো এই মূল দাবিকে ভুলতে দিতে পারেন না। অন্য দাবিগুলি নিয়েও আন্দোলন করতে হবে, কিন্তু মূল দাবিটিকে কোনও ভাবেই পিছনে ঠেলে দেওয়া যাবে না। শাসক শ্রেণি বা কেন্দ্র-রাজ্যের ভূমিকায় মূল দাবিকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার যে চক্রান্ত চলছে তাকে ব্যর্থ করতে হবে।
এই আন্দোলনে জনগণ কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকে নয়, কোনও রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নয়, তাঁরা এসেছিলেন বিবেকের আহ্বানে। অভয়ার ধর্ষণ-খুন তাঁদের অন্তরে যে গভীর অভিঘাত তৈরি করেছে তারই প্রতিক্রিয়ায় এ ভাবে হাজারে হাজারে, লাখে লাখে মানুষ প্রতিবাদ আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। তাই আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরা দৃঢ়ভাবে লড়াইকে শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কি না, সেটাও সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে। ব্যানার ছাড়াই যে আন্দোলনের শুরু তাকে কায়েমি স্বার্থবাহী শক্তিগুলি গদি দখলের সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে চাইছে কি না, ভোটের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে কি না, তা আন্দোলনে অংশ নেওয়া সংগ্রামী জনগণকেই খেয়ালে রাখতে হবে। ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, আন্দোলনকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনার পরিবর্তে ক্ষমতালিপ্সু কিছু দল আন্দোলনকে সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাঁরা প্রকাশ্যে প্রেস কনফারেন্স করে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মসূচিতে দলের কর্মী-সমর্থকদের এমন করে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন যেন সাধারণ মানুষ মনে করে আন্দোলনটা তাঁরাই পরিচালনা করছেন। চিহ্নিত নেতারা আন্দোলনের মঞ্চে হাজির হয়ে জনমনে এমন ধারণাকেই দৃঢ় করতে চাইছেন। এই সব শক্তির হাত থেকেও আন্দোলনকে রক্ষা করার দায়িত্ব সংগ্রামী জনগণেরই।
আন্দোলনে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য জয় অর্জিত হয়েছে
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন ও নাগরিক আন্দোলন ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। আন্দোলনের চাপেই ১) সিবিআই পূবর্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে, টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে। ২) মুখ্যমন্ত্রী বাধ্য হয়েছেন স্বাস্থ্যভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের কাছে এসে তাঁদের কথা শুনতে, যা এর আগে কোনও মুখ্যমন্ত্রী করেননি। ৩) অনড় মনোভাব থেকে সরে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মতো পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থ, ডিরেক্টর অফ মেডিকেল এডুকেশন (ডিএমই), ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিসেস (ডিএইচএস)-দের তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ৪) আর জি করে জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের নেতা অনিকেত মাহাতো সহ তাঁর সহকর্মীদের আন্দোলনের চাপে থ্রেট সিন্ডিকেটের মাথাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি মেনে নিয়ে কলেজে এনকোয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি তোলাবাজি ও হুমকির জন্য দায়ী ১০ জন টিএমসিপি নেতাকে বহিষ্কার সহ ৫৯ জনকে শাস্তি দিতে বাধ্য করেছে। ৫) হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স সহ সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের নিরাপত্তার দাবিতে সিসিটিভি বসানোর মতো পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পদক্ষেপ দ্রুত নিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। সর্বোপরি জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলন দেশের মানুষের মধ্যে এক অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটিয়ে সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে, যা আগামী দিনেও যে কোনও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা নেবে।
খুন-ধর্ষণ কমবে কী করে
চিন্তাশীল মানুষের মধ্যে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, যখন আন্দোলনের উত্তাল ঢেউ বইছে তখনও খুন-ধর্ষণের ঘটনা একের পর এক ঘটতে পারছে কী করে? এর অবসানই বা কী ভাবে ঘটবে? এ সব প্রশ্ন মানুষকে খুবই ভাবাচ্ছে। বাস্তবে পুঁজিবাদের সেবাদাস শাসক দলগুলির নীতিহীন রাজনীতির পরিণামে সমাজে নীতি-নৈতিকতার মান ক্রমশ নেমে যাচ্ছে। সরকারি মদতে মদ, ড্রাগ সহ নানা নেশার প্রকোপ বাড়ছে, নোংরা ছবি, পর্নোগ্রাফির রমরমা ঘটছে। তার সঙ্গে শাসক দলগুলির টাকার বিনিময়ে বেকার যুবকদের ভোটের প্রচারে নামানো, ছাপ্পা ভোট, রিগিংয়ের কাজে লাগানো, বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের উপর দমন-পীড়ন চালানোর মতো ঘটনাও সমাজে নৈতিকতার মান যেমন দ্রুত নামিয়ে দিচ্ছে, তেমনই নতুন নতুন দুষ্কৃতীর জন্ম দিচ্ছে। এই সব কিছু মিলিয়ে সমাজ পরিবেশ যে ভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে, তারই পরিণতি ক্রমাগত খুন-ধর্ষণের মতো অপরাধী বেড়ে চলা।
প্রয়োজন জনগণের আন্দোলন কমিটি
তাই সমাজে খুন-ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বন্ধ করতে হলে এই দুষ্ট রাজনীতিকে যেমন পরাস্ত করতে হবে তেমনই সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাকে বাড়াতে শক্তিশালী বিকল্প নৈতিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মনীষীদের জীবনসংগ্রাম নিয়ে চর্চা করতে হবে। শুধু হা-হুতাশ করে কোনও লাভ হবে না। যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণের কমিটি গড়ে তুলতে হবে, সৎ ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভলান্টিয়ার বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এর পরেও জনজীবনে বহু সঙ্কট আসবে, তার বিরুদ্ধেও এমন করেই ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। লড়াই কার বিরুদ্ধে, কেন, এর প্রতিকার হিসাবে কী চাই, তাও জনগণকে ভাবতে হবে। এ সব নিয়ে আলোচনার জন্য জনগণের নিজস্ব কমিটিগুলিতে সাধারণ মানুষ নিজেরাই আন্দোলনের পদক্ষেপ নেবেন। এই পথেই আন্দোলন পৌঁছতে পারবে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে।
আন্দোলনের অর্জন
- সিবিআই কর্তৃক পূর্বতন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল প্রমুখ গ্রেফতার।
- নিজের অনড় মনোভাব থেকে সরে এসে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মতো মুখ্যমন্ত্রী কর্তৃক পুলিশ কমিশনার, ডিসি নর্থ, ডিএমই, ডিএইচএস-দের পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত।
- আর জি করে থ্রেট সিন্ডিকেটের মাথাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি মেনে কলেজে এনকোয়ারি কমিটি গঠন এবং তোলাবাজি ও হুমকির জন্য দায়ী টিএমসিপি নেতাদের মধ্যে ১০ জনকে বহিষ্কার সহ ৫৯ জনের শাস্তি।
- অভূতপূর্ব জনজাগরণ, যা যে কোনও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা নেবে।
- সিসিটিভি সহ হাসপাতালের নানা পরিকাঠামোগত উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ।