হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে জোট বাঁধলেন ঝাড়গ্রামের মানুষ

হাতির তাণ্ডবে ঝাড়গ্রামের কয়েকটি ব্লকে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এলাকার সব্জি চাষ নষ্ট হওয়ায় কৃষি-নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছে। বুনো ছাতু (মাশরুম) কুড়িয়ে জঙ্গলমহলের বহু মানুষের যেটুকু রোজগার হত, তাও বন্ধ। হাতি ধানের বীজতলা নষ্ট করায় বেশ কিছু চাষির জমি পতিত ছিল। যখন-তখন গৃহস্থ-বাড়ি ভেঙে ধান-চাল খেয়ে যাচ্ছে হাতি। ফলচাষেরও প্রভূত ক্ষতি করছে।

সর্বোপরি বহু প্রাণহানিও ঘটেছে। গত বছর সরকারি হিসেবে হাতির হামলায় ঝাড়গ্রাম জেলায় ৬৪ জন মারা গিয়েছেন। এ বছর জুন মাসেই ৪ জন মারা গিয়েছেন। অথচ সরকার চূড়ান্ত উদাসীন। বনদপ্তর সম্পূর্ণ নীরব। স্থানীয় মানুষ বিট অফিসে অভিযোগ জানাতে গেলে কর্মচারীরা উপরওয়ালাকে জানাতে বলেন। উপরওয়ালাদের জানাতে গেলে নিচুতলার দিকে বল ঠেলে দেওয়া হয়। এই দড়ি টানাটানিতে জঙ্গলমহলের গরিব মানুষ চূড়ান্ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। শহরে কাজের সন্ধানে যাওয়া মানুষ সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতে পারবেন কি না, ছেলেমেয়েরা স্কুলে বা টিউশনে গেলে ফিরতে পারবে কি না– তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা।

হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ৯ জুলাই ঝাড়গ্রাম ব্লকের ঢোলকাট পুকুরিয়া প্রাথমিক স্কুলের মাঠে দুই শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে তপন রায়, ধনঞ্জয় মান্না ও রতন মাহাতকে আহ্বায়ক করে ‘হাতি সমস্যা বিরোধী নাগরিক কমিটি’ গঠিত হয়। পাঁচ দফা দাবিতে নানা এলাকায় কমিটি গঠন করার কথা ঘোষণা করা হয়।

তাঁদের দাবি– জঙ্গলমহল এলাকার সমস্ত দলছুট হাতিকে অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও বরাদ্দকৃত অর্থের তালিকা প্রকাশ করতে হবে, নিহতের পরিবারকে কুড়ি লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও একজনকে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে, হাতির হানায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের জন্য একর প্রতি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে, প্রতিটি বিট অফিসে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে।