২০০৯ থেকে ২০২৪। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর অতিক্রান্ত। আজও এলাকাবাসীর স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে গেল– রায়দিঘি-জয়নগর রেলপথ সম্প্রসারণের কাজ শুরু হল না।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার মথুরাপুর-২ ব্লকের অন্তর্গত রায়দিঘি সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশদ্বার। এলাকার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্রগুলির মধ্যেও রায়দিঘি অন্যতম। প্রতিদিন এখান থেকে মথুরাপুর-১ ও ২, কুলতলি ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের হাজার হাজার মানুষ কলকাতা সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। এখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ও সন্নিহিত গভীর সমুদ্রের মাছ, কাঁকড়া, চিংডি, মধু সহ অন্যান্য সামগ্রী দেশ-বিদেশে রপ্তানি হয়। রায়দিঘি থেকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে পৃথিবীবিখ্যাত ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বাদাবন, যেখানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক ও নানা সংস্থা আসে গবেষণা সহ নানা কাজে। এখানকার উর্বর জমিতে উৎপাদিত ধান, চাল, সব্জিইত্যাদি দ্রব্যের শত শত টন বাইরে যায়। এখানে আছে শতাধিক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল, ডিগ্রি কলেজ, বি-এড কলেজ। রয়েছে ব্যাঙ্ক সহ নানা সরকারি ও বেসরকারি অফিস। হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অধ্যাপক বা অফিস-কর্মচারী দূর-দূরান্ত থেকে যাতায়াত করেন।
সারা দিনে মাত্র একটি সরকারি বাস চলে। শ’য়ে শ’য়ে অটো,ট্রেকার, বাস, ম্যাজিক ইত্যাদি যাত্রীবাহী যানবাহন সারাদিন চলাচল করলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সে সব উধাও হয়ে যায়। এর ফলে রায়দিঘি বা কলকাতাগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। পরিস্থিতির বিচারে এলাকার গুরুত্ব যথেষ্ট বাড়লেও স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের মতোই থেকে গিয়েছে। সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় এখানকার বাসিন্দাদের জন্য রেলপথে যাতায়াত-ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।
পঞ্চদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০০৯ সালে রেল দপ্তরের উদ্যোগে জয়নগর থেকে রায়দিঘি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের শিলান্যাস করেছিলেন স্থানীয় সাংসদ। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক কেটে গেলেও কোনও স্তরে রেললাইন পাতার কোনও পদক্ষেপ আজও চোখে পড়ছে না। ঘটা করে পালিত শিলান্যাস অনুষ্ঠানের শিলার অস্তিত্বটুকুও আজ নেই।
এই রেলপথ সম্প্রসারণের দাবিতে স্থানীয় স্তরে এক নাগরিক কমিটি গঠিত হয়। ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জয়নগর-রায়দিঘি রেললাইনের কাজ দ্রুত শুরু করার দাবিতে এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে রায়দিঘি বাজারে এক প্রকাশ্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই নাগরিক সভার দীর্ঘ ৯ বছর পরে ওই কমিটির আর কোনও কর্মসূচি চোখে পড়ছে না। এই পত্রিকার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রেল প্রশাসন সহ স্থানীয় রাজ্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, জয়নগর-রায়দিঘি রেলপথ সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন ঘটে সে বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিন। পাশাপাশি, এই রেলপথ সম্প্রসারণের বর্তমানে প্রকৃত অবস্থা কী, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে অনুরোধ করছি স্থানীয় বিধায়ককে। সেই সঙ্গে কামনা করি, ওই রেলপথ দ্রুত সম্প্রসারণের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন পুনর্জাগরিত হোক।
মঙ্গলকুমার দাস
রায়দিঘি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা