উত্তরবঙ্গে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা-চাষি কনভেনশন

গঠিত হল উত্তরবঙ্গ ক্ষুদ্র চা-চাষি সংগ্রাম কমিটি। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা-চাষিদের প্রতিনিধিদের নিয়ে এআইকেকেএমএস এর উদ্যোগে ২৩ জুন জলপাইগুড়ির ‘নেতাজি সুভাষ ফাউন্ডেশন’ হলে এক কনভেনশনে এই কমিটি গঠিত হয়। শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

ধান-পাট-আলু এইসব প্রথাগত চাষ করে দীর্ঘদিন ধরে চাষি আর লাভ করতে পারছে না, ক্রমাগত ঋণগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁরা বিকল্প চাষ হিসেবে তাদের দু বিঘা ৫ বিঘা জমিতে চা গাছের চাষ বেছে নেয়। তাদের কাঁচা চা-পাতা ক্রয় করবার খরিদ্দার একমাত্র ফ্যাক্টরি মালিক। ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা চাষিরা প্রথম দিকে একটু দাম পেলেও এখন তারা লোকসানের মুখে। তারা যা খুশি দাম দিয়ে কাঁচা চা পাতা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে কেনে। কখনও কখনও তাঁরা উৎপাদন খরচের কম দামেও কাঁচা চা পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ফ্যাক্টরি মালিকের সাথে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাঁচা চা পাতা কেনায় ফড়েরাজের দৌরাত্ম্য চলে। ফলে চাষি আরও বেশি বিপাকে পড়ে।

চা-শিল্প আজ বেঁচে আছে এই ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষিদের কাঁচা চা-পাতা সরবরাহ করার উপর। সরকার প্রতি বছর এই চা শিল্প থেকে শত শত কোটি টাকা ট্যাক্স বাবদ আয় করে। অথচ এই চা-চাষিদের বাঁচানোর জন্য সরকারের কোনও পরিকল্পনা ও প্রকল্প নেই। কনভেনশনে দাবি ওঠে–

১) উৎপাদন খরচের কমপক্ষে দেড়গুণ দামে সরকারকে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা-চাষিদের কাছ থেকে কাঁচা চা পাতা কিনে ফ্যাক্টরি মালিকের কাছে বিক্রি করতে হবে।

২) ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা-চাষিদের অতি স্বল্পমূল্যে রাসায়নিক ও জৈব সার এবং কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে।

৩) প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে চা চাষের ক্ষতি হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪) আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপায়ে চা চাষের জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা-চাষিদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

কনভেনশনে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এ আই কে কে এম এস-এর রাজ্য সম্পাদক কমরেড গোপাল বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গের কৃষক আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা কমরেডস রুহুল আমিন, আবুল কাসেম ও তরণী রায়। নেতৃবৃন্দ বলেন, সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বাঁচার পথ নেই। দিল্লির ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। উত্তরবঙ্গের কয়েক লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা-চাষিকে সংগঠিত করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কনভেনশন থেকে হরিভক্ত সরদারকে সভাপতি ও জগদীশ অধিকারীকে সম্পাদক করে ১৭ জনের একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হয়েছে। ২৮ জুন ‘টি বোর্ডে’র অধিকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়।