পাঠকের মতামতঃ মূল্যবৃদ্ধি কেন

গণদাবীর ২১ জুন সংখ্যায় মূল্যবৃদ্ধির ওপর যে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং বিশ্লেষণমূলক। লেখাটির সংযোজনী হিসাবে দু-তিনটি বিষয় রাখছি। প্রথমত, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর বলেছেন, কোর ইনফ্লেশন বা মূল মুদ্রাস্ফীতি কমলেও খাদ্যপণ্যের দাম কমেনি। শুনলে মনে হয় যেন কত পাণ্ডিত্যপূর্ণ কথা, কিন্ত কথাটার কোনও মানে নেই। খাদ্যপণ্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যদি আকাশছোঁয়া হয়, তবে মুদ্রাস্ফীতি কী করে কমে তা তাঁদের মতো ‘পণ্ডিত’রাই বলতে পারবেন! কবির ভাষায় এ সব হচ্ছে, বাজে কথার ফুলের চাষ।

দ্বিতীয়ত, পাইকারি বাজারের মূল্যের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামের এত বিস্তর ফারাক কেন, তা সরকারি পণ্ডিতরা কখনওই উল্লেখ করেন না। করলে এই চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত ঘুণে ধরা ব্যবস্থাটার স্বরূপ ফাঁস হয়ে যাবে। শুধু পরিবহণের খরচ বৃদ্ধির অজুহাত তুলে ‘মধ্যবর্তী দুষ্টচক্রের’ উপস্থিতি, পকেট ভারী করা, দাপিয়ে বেড়ানো ইত্যাদিকে আড়াল করা যাবে না।

তৃতীয়ত, সকলেই জানেন, এক শ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী, ফড়ে, মজুতদার, কালোবাজারি, গ্রামীণ বাহুবলী, সরকারি প্রশাসন, পুলিশ, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা, ফাটকাবাজ নিয়ে গড়ে ওঠা এক অশুভ চক্র পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করে। এরা নামমাত্র দামে চাষিদের থেকে ফসল কিনে নিজেদের ভাণ্ডার যথেচ্ছ ভাবে পূরণ করার পর কৃত্রিমভাবে খুচরো বাজারে দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু সকলেই লাভের ভাগ পায়, তাই টাস্ক ফোর্স হোক বা টহলদারি পুলিশ সকলেই চোখ বুজে থাকে।

চতুর্থত, মজুতদার মূলত কারা? সকলেই জানেন আনাজ, ফল ইত্যাদি কোল্ড স্টোরেজে ধরে রাখা হয়। এই বড় বড় কোল্ড স্টোরেজের মালিকরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে মজুত রেখে কৃত্রিম অভাব তৈরি করে। তারপর বেশি দামে গুদামজাত পণ্য কিস্তিতে ছাড়ে। সরকার কিছু বলে না। কারণ, এই মজুতদাররাই তো সরকারি দলকে টাকা জোগায়। আবার সাথে সাথে এরাই রটিয়ে দেয় যে, ওমুক মাসে রমজান আছে তাই ফলের বাজার চড়বে, জামাইষষ্ঠী আছে তাই আনাজপাতির দাম বাড়বে। আজ নীলষষ্ঠী, কাল গঙ্গাপুজো, পরশু রক্ষাকালীর পুজো– বারো মাসে তেরো পার্বণ, ফলে জিনিসের দাম বাড়া বন্ধ হওয়ার ফুরসত কোথায়? সাধারণ মানুষ ভাবে বুঝিবা তাই সত্য। এক ঢিলে দুই পাখি মারা– দামও বাড়ানো গেল আর ক্রেতাকূলকেও বোকা বানানো গেল। সরকারি মদতে প্রশাসনের নাকের ডগায় তো এটাই চলছে।

সব শেষে আপনাদের লেখায় একটি তথ্যগত ভুল চোখে পড়েছে। ডেরিভেটিভ ট্রেডিং বা খাদ্যপণ্যের ওপর ফাটকা খেলার প্রবর্তন বিশ্বায়নের উদারনীতির হাত ধরে অনেক আগেই হয়েছে ক্যাপিটাল মার্কেট সংস্কারের নামে। এটা বিজেপি আমলে শুরু হয়েছে, এই তথ্য ঠিক নয়। শুরু হয়েছে কংগ্রেস আমলে।

অধ্যাপক এস কে দাশগুপ্ত

কলকাতা-৩১