‘এ রাজনীতিরজাতই আলাদা’

শেষ দফা ভোটের দিনে মধ্য কলকাতার ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে একটু ফাঁক পেতেই খোসগল্পে মেতে তৃণমূলের এক ডামি প্রার্থীর এজেন্ট হিসাব করছিলেন ওই বুথে যতজন এজেন্ট বসেছেন, তাঁরা কে কত টাকা পেয়েছেন। বিজেপির এজেন্ট জানালেন এজেন্ট পিছু সাত হাজার বরাদ্দ, তৃণমূল, সিপিএম-কেংগ্রেস জোটের এজেন্টরাও স্বীকার করে নিলেন, তাঁরা কেউ ৩ হাজার, কেউ ২ হাজার টাকা পেয়েছেন বুথ সামলানোর জন্য। আর এস ইউ সি আই সি-র এজেন্ট?

প্রশ্নটা উঠতেই হাঁ-হাঁ করে উঠলেন প্রায় সবাই। ওই বুথে দলের এজেন্ট হয়ে বসেছেন এআইডিএসও-র এক ছাত্রী কর্মী। অন্য দলের এজেন্টরাই প্রায় সমস্বরে বলে উঠলেন, আরে ওদের নিয়ে এ সব প্রশ্নই ওঠে না। বিজেপির হয়ে বসেছিলেন পুরনো সিপিএম কর্মী একজন, তাঁর কথায়– কী করে যে এস ইউ সি এত ইয়ং ছেলেমেয়েকে পায় আমরা ভাবতেই পারি না। আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েগুলোকে পারব সারা দিন এ ভাবে বুথ আগলে বসে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে? টাকা তো দূরের কথা ওদের খাবার পর্যন্ত আসবে কি না সন্দেহ!

এস ইউ সি আই সি-কে একটু খোঁচা দিতে চেয়ে কংগ্রেসের হয়ে বসা সিপিএম কর্মী বলে উঠলেন, ওদের টাকার অভাব? তা হলে নতুন একটা বাড়ি করছে কী করে?

একটু হেসে দলের এজেন্ট ছাত্রী কর্মীটি বললেন, কাকু আর সব দল টাকা পায় ইলেক্টোরাল বন্ড থেকে, বড় ব্যবসায়ীদের থেকে। ওটা লোকের রক্ত চোষা টাকা। আমাদের দলের টাকা আসে রক্ত দিয়ে– পার্থক্যটা এটাই। দলের প্রয়োজন হলে সমর্থকরা জমি বেচে, গয়না বেচে, বাড়ি বেচে দলকে টাকা দেয়। প্রতিদিনের খরচ থেকে বাঁচিয়ে টাকা জমিয়ে কর্মীরা দলকে দেয়। এ ছাড়াও আমাদের কর্মীদের সারা দিন রাস্তায় চাঁদা তুলতে! খোঁজ নাও তোমার ঘরেই, এ বারের ভোটেই কাকিমা আমাদের কত চাঁদা দিয়েছে!

ক্রিক রো-র একটি স্কুলের বুথে একজন পোলিং অফিসার বলেই দিলেন, এই দলটাকে স্যালুট করি আমি। এই দলটার যেন জাতটাই আলাদা। অন্য দলের এজেন্টদের উদ্দেশে বললেন, কিছু মনে করবেন না– এ রাজনীতির খোঁজ আর কোনও দল দিতে পারে না। লেনিন সরণির ওপরে একটি স্কুলের বুথে এআইডিএসও-র আর এক ছাত্রী কর্মীর এজেন্ট হিসাবে ভূমিকায় অভিভূত অন্য দলের এক এজেন্ট বলে গেলেন, তোমরাই কিন্তু ভবিষ্যৎ।