নাম মাহাত্ম্য

‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি এখন বহুশ্রুত। দেশের শাসক দল বিজেপির যে কোনও সভা, অথবা আরএসএস-এর অনুষ্ঠান হোক, বিজেপি প্রভাবিত রবীন্দ্রজয়ন্তী কিংবা রামনবমীর মিছিল থেকে মসজিদ বা গির্জায় ভাঙচুর– সবই এখন ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়েই করা হয়। কিন্তু সেই ‘রামনামের’ মাহাত্ম্য যে কত তার নিদর্শন পাওয়া গেল উত্তরপ্রদেশের ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যে। সেখানকার বিজেপি সরকার পরিচালিত ‘বীর বাহাদুর সিং পূর্বাঞ্চল ইউনিভার্সিটি’র চার জন ডি-ফার্মা (ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসি) ছাত্র তাদের পরীক্ষার খাতায় কেবল ‘জয় শ্রীরাম’ এবং কয়েকজন ক্রিকেট সেলিব্রিটির নাম লিখেছিল। পরীক্ষার কোনও প্রশ্নের এক লাইন উত্তরও তারা লেখেনি। কিন্তু এই ঘোর ‘কলিকালে’ রামনামের মাহাত্ম্য বলে তারা পরীক্ষায় শুধু পাশ করেছে তাই নয়, ৫০ শতাংশ নম্বরও পেয়েছে। একজন প্রাক্তন ছাত্র আরটিআই করায় ওই ছাত্রদের উত্তরপত্র রিভিউ করা হয় এবং দেখা যায় তারা প্রত্যেকে আসলে ‘শূন্য’ (০) পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বন্দনা সিংহ জানিয়েছেন, যে দু’জন শিক্ষক ওই ‘অবৈধ’ কাজ করেছেন, তদন্তকারী প্যানেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে তাঁদের বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। যদিও রাজ্যপালের সম্মতি এখনও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনা দেখায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি ধর্মীয় স্লোগান থেকে ক্রমশ রাজনৈতিক স্লোগান হয়ে এখন নানা অপকর্মের ছাড়পত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অবশ্য নাম মাহাত্মে স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি-ই বা কম কিসে! প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়েই ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি ১০ লক্ষ টাকা দামের যে কোটটি পরেছিলেন, তাতে সোনার সুতো দিয়ে গোটা কোট জুড়ে লেখা ছিল তাঁর নাম। সেটি নিলামে কিনতে যাঁরা ঝাঁপিয়েছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের নামে আয়কর, সিবিআই বা ইডির অভিযোগ ছিল। ২ কোটি টাকায় যিনি সেই কোট কিনেছিলেন, তাঁর নামেও ছিল কালো টাকা সংক্রান্ত অভিযোগ। আশ্চর্য হল, নামাবলি কোটটি কেনার পর বোধহয় নাম মাহাত্মেই কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলো এঁদের ভুলে যায়।