পাঠকের মতামতঃ চালু হোক জেলাভিত্তিক ছুটি

বিগত কয়েক বছর থেকেই পশ্চিমবঙ্গে ছুটির তালিকার বাইরেই হুট করে গ্রীষ্মের ছুটি দেওয়ার একটা রেওয়াজ শুরু হয়েছে। এপ্রিল-মে মাস থেকে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলা বিশেষত কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়িতে গরম কেবল শুরু হয়। মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্ত কিছু দিনের তাপপ্রবাহ ছাড়া বাকি দিনগুলোতে অনেকটা মনোরম আবহাওয়াই থাকে। কিন্তু কলকাতা যে তখন পুড়ছে! মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীরা তখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বের হয়েই ঘোষণা করে দেন–কাল থেকে সারা রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল ছুটি। নেতা-মন্ত্রীদের তো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে! কিন্তু কালের নিয়মে সবেতেই আজ ভেজাল। মন্ত্রীদের দৃষ্টি দক্ষিণবঙ্গের সীমা টপকে উত্তরের পাহাড়ঘেরা জঙ্গলে প্রবেশই করতে পারে না। তাই তো একবার উত্তরবঙ্গের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাদর জড়িয়েও স্কুলে গিয়ে গ্রীষ্মের ছুটির ঘোষণা করতে হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, প্রথম পর্বের মূল্যায়ন কোচবিহার জেলার অধিকাংশ স্কুলে এখনও হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের কারণে মূল্যায়ন অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়ে গেল গ্রীষ্মের ছুটি। যে দিন থেকে স্কুলে ছুটি ঘোষণা হল সেই দিন থেকেই মূল্যায়ন শুরু হওয়ার কথা। প্রস্তুতি নিয়ে স্কুলে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা ছুটির কথা শুনে বাড়ি ফিরে গেল। রাজ্য নেতৃত্ব, জেলা নেতৃত্ব– সবারই আচরণে এটা স্পষ্ট যে সরকারি স্কুলের পরীক্ষা না হলেও কোনও ব্যাপার না। নইলে তারা এই বিষয়টা নিয়ে একটু হলেও ভাবত। উত্তরবঙ্গে ছুটির প্রয়োজন জুন-জুলাই মাসে। সে সময়ে গ্রামবাংলার অনেক স্কুলই বন্যার কারণে বন্ধ রাখতে হয়। আবার উত্তরবঙ্গে ভ্যাপসা গরম শুরু হয় জুন মাসে। সুতরাং অসময়ের ছুটি ভোগ করার পরে প্রবল বর্ষা এবং গরমে স্কুল করতে হয় উত্তরবঙ্গের ছাত্র-ছাত্রীদের।

সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসকারী নীতির মধ্যে এই ছুটি-ঐতিহ্য অন্যতম। বেসরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা যেখানে দিব্যি স্কুল করে চলেছে, সেখানে সরকারি স্কুলে এমনকি মূল্যায়নকেও মান্যতা না দিয়েই ছুটি ঘোষণা করে দিল সরকার। দক্ষিণবঙ্গে এই ছুটির প্রয়োজন হয়ত ছিল, কিন্তু উত্তরবঙ্গে এই ছুটি সত্যিই অপ্রয়োজনীয়। অবশ্য দক্ষিণবঙ্গেও ছুটি না দিয়ে সকালে স্কুল করলেও হয়তো কাজ হত। তাই ছুটির ক্ষেত্রে অন্তত জেলাভিত্তিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। জেলাভিত্তিক ছুটির প্রচলন যে আগে ছিল, সেটাই বিজ্ঞানসম্মত। শিক্ষার মতো বিষয়ের কেন্দ্রীকরণ ঠিক নয়। তাই দাবি উঠুক–জেলাভিত্তিক ছুটি চালু হোক আবার।

সুস্মিতা বর্মন

কোচবিহার