Breaking News

আমেরিকার পার্টি অফ কমিউনিস্টসের কংগ্রেস উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠালেন কমরেড প্রভাস ঘোষ

এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য আমেরিকার পার্টি অফ কমিউনিস্টস ইউএসএ (পিসিইউএসএ)-এর চতুর্থ কংগ্রেসের সাফল্য কামনা করে সাধারণ সম্পাদক কমরেড অ্যাঞ্জেলো ডি’অ্যাঞ্জোলেকে পাঠানো এক বার্তায় এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ বলেন,

এ বছর এপ্রিলে আপনাদের দলের চতুর্থ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জেনে আমরা আনন্দিত। আমরা আনন্দিত এ কথা জেনেও যে, সাম্রাজ্যবাদ ও প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রস্থল যে দেশ, তার ভিতরে আপনাদের মতো একটি কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে শ্রমজীবী শ্রেণিকে সংগঠিত করে সমাজের আমূল বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।

এমন একটা সময়ে আপনারা পার্টি কংগ্রেস আয়োজন করতে চলেছেন যখন গোটা পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া গভীর সঙ্কটে ডুবে রয়েছে। শুধু অর্থনৈতিক সঙ্কট নয়, জনসাধারণের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র আজ সঙ্কটে জর্জরিত। এরই প্রতিক্রিয়ায় প্রতিটি সাম্রাজ্যবাদী-পুঁজিবাদী দেশে সাধারণ মানুষ প্রায় প্রতিদিন নির্মম রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন অগ্রাহ্য করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিও ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু যথার্থ ও সংগঠিত কমিউনিস্ট নেতৃত্বের অনুপস্থিতির কারণে এই গণবিক্ষোভগুলি কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারছে না।

বিশ্বজোড়া আধিপত্য বজায় রাখা ও সমর-শিল্পকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ন্যাটো যুদ্ধজোটকে সঙ্গে নিয়ে সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে এবং প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে গাজায় ছায়াযুদ্ধে সামিল হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে, শত শত গ্রাম-শহর ধ্বংস হচ্ছে।

মহান স্ট্যালিনের নেতৃত্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন জয়ী হওয়ার পর ঔপনিবেশিক ও আধা-ঔপনিবেশিক দেশগুলিতে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পুঁজিবাদী দেশগুলিতে বিপ্লবী সংগ্রামের জোয়ার সৃষ্টি হয়। মহান মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে সফল চিন বিপ্লব বিশ্ব জুড়ে কমিউনিস্ট পার্টিগুলিকে উৎসাহিত করে। এই পরিস্থিতিতে ১৯৫৩ সালে মহান স্ট্যালিনের মৃত্যুর পর ১৯৫৬ সালে সিপিএসইউ-এর ২০তম কংগ্রেসে বিশ্বাসঘাতক ত্রুশ্চেভ ব্যক্তিপূজার বিরোধিতার নামে কমরেড স্ট্যালিনের বিরুদ্ধে কুৎসিত আক্রমণ হানে। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এ যুগের অন্যতম প্রধান মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ সেই ১৯৫৬ সালেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, এই আক্রমণে মহান স্ট্যালিনের অথরিটি ক্ষুণ্ন হবে, পরিণামে মহান লেনিনের মর্যাদাহানি ঘটবে এবং লেনিনবাদের বিপ্লবী মর্মবস্তু ধ্বংস করা হবে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঠিক সময়ে সংশোধনবাদের স্রোত আটকাতে না পারলে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে শোধনবাদের অনুপ্রবেশ এবং সোভিয়েট ইউনিয়নে প্রতিবিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেই সময়ে আমাদের দলের প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক শক্তি না থাকায় বিশ্বের কমিউনিস্টদের এই আশঙ্কার কথা আমরা শোনাতে পারিনি।

এ কথা সকলেই জানেন যে, এরই পরিণামে বিপর্যয় নেমে এসে কীভাবে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। কিন্তু আশার কথা, বিশ্বের দেশে দেশে আবার নানা কমিউনিস্ট পার্টি ও গোষ্ঠী গড়ে উঠছে। যদি সেই শক্তিগুলি মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের সঠিক উপলব্ধি ও তার ভিত্তিতে বর্তমান পরিস্থিতিতে তার সঠিক প্রয়োগ করতে পারে, তবে তারা শ্রমজীবী জনগণকে আন্দোলনের সঠিক দিশা দেখাতে পারবে এবং আবার একটি দুর্দান্ত শক্তি হয়ে উঠতে পারবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ও যুদ্ধ-উত্তেজনা সৃষ্টির সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্টদের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রয়োজন দিনে দিনে বাড়ছে।

মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের বিপ্লবী চিন্তাধারাকে হাতিয়ার করে ভারতে আমাদের দল সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম ও শ্রেণিসংগ্রাম গড়ে তোলার পাশাপাশি সংশোধনবাদ ও ছদ্ম কমিউনিস্ট পার্টিগুলির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে দলের ভিতরে উন্নত সর্বহারা সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের কমিউনিস্ট চরিত্র অর্জনের সংগ্রাম চলছে। এই পথেই জনগণের ক্রমবর্ধমান সমর্থনে আমাদের দলের সাংগঠনিক বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। এই সংগ্রামে আপনাদের পার্টি সহ বিভিন্ন দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম কমিউনিস্ট পার্টিগুলির সহযোগিতা ও সমর্থন আমরা আশা করি। মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ ও সর্বহারা আন্তর্জাতিকতাবাদের ভিত্তিতে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিকাশ ঘটানো ও শক্তিশালীর করার যে আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে, তা কার্যকর করতে আমরা আপনাদের সহযোগী হতে চাই।

আমাদের মতবিনিময় চলুক। আপনাদের পত্রপত্রিকা, বিবৃতি ও কংগ্রেসের দলিল আমাদের পাঠান। আমরাও তাই করব। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।