Breaking News

আশা, অঙ্গনওয়াড়ি ও পৌর স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়ন ভয়কে জয় করে অঙ্গীকারে দৃঢ় কর্মীরা

পশ্চিম মেদিনীপুর

স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আশা-অঙ্গনওয়াড়ি ও পৌরস্বাস্থ্য কর্মীরা ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের লাঠি, গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা, হাজতবাস মোকাবিলা করে এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যব্যাপী কর্মবিরতি পালন করে আন্দোলনের নয়া ইতিহাস তৈরি করেছেন।

১২ ফেব্রুয়ারি এআইইউটিইউসি অনুমোদিত আশা, অঙ্গনওয়াড়ি ও পৌর স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়নের প্রায় ৫০০০ কর্মী ধর্মতলায় বিভিন্ন দাবি নিয়ে জমায়েত হন। তাদের ক্ষোভের কারণ, সদ্য পেশ হওয়া কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বাজেটে আশা, অঙ্গনওয়াডি, মিড ডে মিল কর্মীদের জন্য কোনও বরাদ্দ না করা।

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যদপ্তরের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না করাটা এ রাজ্যের গ্রাম-শহরের প্রায় ৭০ হাজার আশাকর্মী এবং তিন লক্ষ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী-সহায়িকার প্রত্যাশাকে আঘাত করেছে। কোনও মোবাইল ফোন দেওয়া না হলেও মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রশাসনিক মিটিংয়ে ঘোষণা করেছেন যে আশা এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের তিনি তা দিয়ে দিয়েছেন। গ্রামীণ স্বাস্থ্য ও পুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের অস্বাভাবিক কর্মভারে আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা দিনরাত খেটে মরছে। কাজের বেশিরভাগ সময় চলে যাচ্ছে দুয়ারে সরকার, ভোটের ডিউটি, জনসংযোগ ও পাড়ায় সমাধান, খেলা, মেলা, পরীক্ষার সেন্টারে ডিউটি সরকারি বিভিন্ন মিটিং, মুখ্যমন্ত্রীর জনসভায় যোগদান করে ভিড় বাড়ানো ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে সমস্ত ধরনের কাজে। রাজ্য সরকারের দেয় অতিরিক্ত কাজে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক থাকলেও তা কর্মীরা পায় না। সরকার আদৌ সেই টাকা দিয়েছে কি না বা দিলেও মাঝপথে কারা বেহাত করে দিল ইত্যাদি নিয়ে সরকারের কোনও হেলদোল নেই। কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি—উপযুক্ত মর্যাদা দিয়ে মাসিক ভাতা বৃদ্ধি করা। সেটা করা হল না। এই বাজেট স্বাস্থ্য, পুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মীদের ন্যূনতম আর্থিক সমস্যার সমাধানও করল না। ফলে দীর্ঘ বঞ্চনা এবং ক্ষোভ ক্রমাগত ধূমায়িত হতে হতে ধৈর্যের বাঁধ অতিক্রম করেছে। বাধ্য হয়ে সেদিন ধর্মতলায় ধরনা ও পথ অবরোধ হয়েছে। সেদিন বহু টালবাহানার পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করলেও কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি। প্রতিনিধিদল ফিরে আসার পর সরকার পুলিশ দিয়ে জোর করে আশা কর্মী ইউনিয়নের সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুন, সভানেত্রী কৃষ্ণা প্রধান, পৌর স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়নের যুগ্মসম্পাদিকা কেকা পাল ও পৌলমী করঞ্জাই ও অন্যতম নেত্রী রুনা পুরকাইত, আইসিডিএসের রীতা মাইতি, তপতী ভট্টাচার্য সহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন পর্যন্ত লালবাজার লক-আপে আটকে রাখে এবং মিথ্যা কেস দেয়। অনেকে পুলিশের লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হন। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এর প্রতিবাদে পরদিনই ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সর্বত্র অভূতপূর্ব কর্মবিরতি, প্রতিবাদ মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রাজ্য জুড়ে সমস্ত স্কিমে সার্বিক বনধ পালিত হয়। সরকার কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমন করে ভয় পাইয়ে দিতে চেয়েছিল। তাদের এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে কর্মীরা। সমস্ত দপ্তরের সকল সহকর্মীর স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা এবং সহমর্মিতা আন্দোলনের পক্ষে প্রবল সমর্থন জুগিয়েছে।

দার্জিলিং

এ দিন কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, উত্তর ২৪ পরগণা, হাওড়া, হুগলি, বীরভূম, বর্ধমান জেলার ব্লকে ব্লকে কর্মীরা কর্মবিরতি করে মিছিল করে ব্লক এবং জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিককে ডেপুটেশন দেন।

 হাওড়া

মেদিনীপুর স্টেশন থেকে প্রতিবাদ মিছিল শহর পরিক্রমা করে কালেক্টরেট গেটে রাজ্য বাজেটের প্রতিলিপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায়। বেলদাতেও বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রতিলিপিতে অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি কর্মসূচি পালিত হয়। হাওড়া জেলার আশা, অঙ্গনওয়াড়ি ও মিড ডে মিল কর্মীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল উলুবেড়িয়া স্টেশন থেকে হাসপাতাল মোড়ে এসে অবরোধ করে।