Breaking News

নোট বাতিলের ৭ বছরে প্রতিশ্রুতির একটিও পূরণ হল না

ফাইল ফটো, কলকাতা ২০১৬

অতীতের ঘটনার মূল্যায়নের জন্য কখনও কখনও পিছন ফিরে দেখতে হয়। এ রকমই একটি ঘটনা নোট বাতিল। বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, নোট বাতিলের উদ্দেশ্য হিসাবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন কিছু সমস্যা সমাধানের কথা বলেছিলেন, যা সহজে হওয়ার নয়। নোট বাতিলে তো নয়ই। ফলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণ হওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণই ছিল না। তবুও বিশাল অংশের মানুষ তাঁর কথায় বিশ্বাস করেছিল। ফলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবার মতো।

২০১৬-এর ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের ‘কালো’ দিন। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। আগাম কোনও ঘোষণা ছিল না। নোট বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এতে কালো টাকা উদ্ধার হবে, জাল নোটের সমস্যা মিটবে, বাজারে নগদের পরিমাণ কমে ডিজিটাল লেনদেন বাড়বে এবং সন্ত্রাসবাদ নির্মূল হবে।

সাধারণ মানুষ রাতারাতি পড়িমরি করে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে বাধ্য হলেন। অসুস্থ, বৃদ্ধরাও রেহাই পেলেন না। নোট বাতিলের খামখেয়ালিপনায় ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মারা গেলেন দেড়শোর বেশি মানুষ! নোট বাতিলের কারণে খুচরো ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও মার খেতে শুরু করল। ছোট ব্যবসা, অসংগঠিত ক্ষেত্র মুখ থুবড়ে পড়ল এই সিদ্ধান্তে। কোটি কোটি মানুষ কাজ হারালেন। বন্ধ হয়ে গেল লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসা। এগুলির সাথে যুক্ত অসংখ্য পরিবার রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে গেল। তবুও অধিকাংশ মানুষ এত কষ্ট মেনে নিয়েছিলেন যদি কালো টাকা নির্মূল হয়, সন্ত্রাসবাদ দূর হয় সেই আশায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, মাত্র ৫০ দিনেই তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ করবেন। ২০২৩-এর এই নভেম্বরে ৫১টি ৫০ দিন পার হয়ে গেল—কোনটা করতে পেরেছেন প্রধানমন্ত্রী? কত কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আমজনতাকে জানিয়েছেন কি? জাল নোটের সমস্যা কি মিটে গিয়েছে? বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেবেন বলেছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতিই বা কোথায় গেল? উল্টে, কালো টাকার কারবারিরা সরকারি নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে জাঁকিয়ে বসে মুনাফা লুঠছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কালো টাকা উদ্ধার না করতে পারলে যে কোনও শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। প্রধানমন্ত্রী মাথা পেতে কোন শাস্তি নিয়েছেন?

নোট বাতিলের পর বড়সড় সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে পুলওয়ামায় ২০১৯ সালে। তা হলে মোদিজির কথা অনুযায়ী, নোট বাতিলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মদত বন্ধ হওয়ার প্রতিশ্রুতিও অথই জলে।

নোট বাতিলে গরিব অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯৯ শতাংশ মানুষের ক্ষতি হলেও ১ শতাংশ পুঁজিপতিদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেদিকেই নজর দিয়েছে বিজেপি সরকার। সেজন্য নোট বাতিল, জিএসটি বসানোর পর একচেটিয়া কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের মুনাফা কয়েকশো শতাংশ করে বেড়েছে। ফলে নোট বাতিল করে সাধারণ মানুষের সমস্যা মেটানোর প্রতিশ্রুতি, প্রধানমন্ত্রীর ভোট চমক ছাড়া আর কী!

রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র এস ইউ সি আই (সি) নোট বাতিলের পরই বিবৃতি দিয়ে বলেছিল, এতে কালো টাকা বা সন্ত্রাসবাদের সমস্যা দূর হবে না। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এই দুটোরই জন্মদাতা। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফা, আরও মুনাফার পথে একচেটিয়া পুঁজির জন্ম এবং তার গর্ভেই দুর্নীতির জন্ম। আর পুঁজিবাদী শোষণ-জুলুম টিকিয়ে রাখতে গেলে, অন্যকে দাবিয়ে রাখতে সন্ত্রাসবাদকে হাতিয়ার করতেই হয় পুঁজিপতিদের। প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতা এই বক্তব্যেরই সত্যতা প্রমাণ করে দেখিয়ে দিল।

গণদাবী ৭৬ বর্ষ ১৪ সংখ্যা ২৪ নভেম্বর ২০২৩