অভিনেতা রণদীপ হুডা বিনায়ক দামোদর সাভারকরের একটি জীবনচিত্র তৈরি করছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিজেপি দলের কাছে সাভারকর জাতীয় বীর। সাভারকর প্রথম জীবনে ব্রিটিশবিরোধী হলেও পরবর্তীতে ব্রিটিশভক্ত হয়ে যান। ‘স্বতন্ত্র বীর সাভারকর’ নামে এই সিনেমায় তিনি বলেছেন, সাভারকর ছিলেন ব্রিটিশদের এক নম্বর শত্রু (মোস্ট ওয়ান্টেড ইন্ডিয়ান বাই দি ব্রিটিশ)। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ভগৎ সিং এবং ক্ষুদিরামের মতো বিপ্লবীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন তিনি।
এই বক্তব্য শোনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন নেতাজি ও ক্ষুদিরাম বসুর পরিবারের সদস্যরা। ক্ষুদিরামের ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র (গ্র্যান্ড নেফিউ) সুব্রত রায় বলেন, ‘ক্ষুদিরাম ছিলেন বিপ্লবী দল ‘অনুশীলন সমিতি’র সদস্য। তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন হেমচন্দ্র কানুনগো, সত্যেন বসু এবং অরবিন্দ ঘোষের মতো নেতারা’। তিনি বলেন, সাভারকরের দ্বারা তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এমন তথ্য ‘আমি কোথাও পাইনি’।
নেতাজি পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন, ‘সাভারকরের আদর্শ নেতাজি ও ভগৎ সিংয়ের আদর্শের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। নেতাজি, ভগৎ সিংরা লড়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যবদ্ধ ভারতের জন্য। আর সাভারকর দাবি করেছিলেন হিন্দু রাষ্ট্র, যেমন জিন্নার দাবি ছিল মুসলিম রাষ্ট্র। নেতাজি যে সাভারকরের চিন্তা-ভাবনার বিরোধী ছিলেন, সে বিষয়ে প্রচুর লেখা এবং বক্তৃতা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লিগের কাছ থেকে কারও প্রত্যাশা করার মতো কিছু ছিল না। বহু বত্তৃতায় নেতাজি জোরের সাথে বলেছেন, মহম্মদ আলি জিন্না এবং সাভারকরের কাছ থেকে পাওয়ার কিছু নেই। নেতাজি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতার ঘোর বিরোধী। নেতাজি পরিবারের এক সদস্য অভিজিৎ রায় বলেন, নেতাজি ও ভগৎ সিং ছিলেন বামপন্থায় বিশ্বাসী। অন্য দিকে সাভারকর ছিলেন চরম দক্ষিণপন্থী। শুধু চিন্তাধারাতে নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামে সাভারকর ছিলেন নেতাজি বিরোধী। নেতাজির আইএনএ যখন ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে বার্মা ফ্রন্টের দিকে এগিয়ে আসছে, সেই সময় সাভারকর যুবকদের ট্রেনিং ক্যাম্প করছেন ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য। এগুলো ঐতিহাসিক তথ্য। অভিনেতা রণদীপ হুডার উদ্দেশে তিনি বলেন, এ ভাবে ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করুন।
(সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া ১ জুন ‘২৩)