একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করে তাঁর ন’বছরের কীর্তি ঘোষণা করছেন, নতুন ভারত গড়ার কথা বলছেন, আগামী দিনগুলিতে গণতন্ত্রকে কোন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন তার ফিরিস্তি দিচ্ছেন, ঠিক তখনই তার অদূরে তাঁর সরকারের শত শত পুলিশ প্রকাশ্য দিবালোকে ধুলোয় লুটিয়ে দিল গণতন্ত্রকে, গণতান্ত্রিক অধিকারকে৷ তারা হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল বিশ্বে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা অলিম্পিকে পদকজয়ী সাক্ষী মালিক, কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম স্বর্ণপদকজয়ী মহিলা কুস্তিগির বিনেশ ফোগট, টোকিয়ো অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগির বজরং পুনিয়া, তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা ফোগটদের উপর৷ পুলিশ বর্বরের মতো টেনে–হিঁচড়ে, চ্যাংদোলা করে গ্রেফতার করল তাঁদের৷ যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের শাস্তির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে যেখানে অবস্থান আন্দোলন চালাচ্ছিলেন এই ক্রীড়াবিদরা, পুলিশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল তাঁদের সেই ধর্নার তাঁবু৷ গ্রেফতার হওয়া ক্রীড়াবিদরা তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, দেশের জন্য পদক এনে এটাই কি আমাদের প্রাপ্য ছিল?
পুলিশের এই বর্বরতায় স্তম্ভিত সারা দেশ৷ মানুষ জানতে চায়, এমন নতুন ভারত গড়ার কথাই কি তবে বললেন প্রধানমন্ত্রী? এই গণতন্ত্রই কি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন তিনি নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে? অবাক বিস্ময়ে মানুষ দেখছে, অপরাধী বিজেপি সাংসদ সরকারের আশ্রয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছে, অথচ ন্যায়বিচার চাওয়া ক্রীড়াবিদরা জেলবন্দি৷ ন্যায্য দাবিতে প্রখ্যাত ক্রীড়াবিদদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ভাঙতে এ দিন যে নৃশংস বর্বরতায় পুলিশ লেলিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদি সরকার, তাতে গোটা বিশ্বের সামনে তার গণতান্ত্রিক মুখোশটি টুকরো টুকরো হয়ে ছিঁড়ে পড়ল৷
ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে মহিলা কুস্তিগিরদের উপর দীর্ঘদিন ধরে যৌন নিগ্রহ চালিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তারই বিচারের দাবিতে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছিলেন কুস্তিগিররা৷ এক মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এত বড় একটা অন্যায়ের অভিযোগের কোনও সুরাহার আশ্বাস তো কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কোনও নেতা–মন্ত্রীর পক্ষ থেকে আসেইনি, উপরন্তু সেই ব্রিজভূষণের মতো ‘সম্পদ’কে পাশে বসিয়েই নতুন সংসদের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷
গ্রেফতারির পর্ব শুরু হয়েছিল এ দিন ভোর থেকেই৷ এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) এবং তার গণসংগঠনগুলি কুস্তিগিরদের ন্যায়বিচারের দাবিকে প্রথম থেকেই সমর্থন করেছে, পাশে থেকেছে সক্রিয় ভাবে৷ এই প্রতিবাদের অংশ হিসাবেই এ দিন ‘মহিলা সম্মান মহাপঞ্চায়েতের’ ডাক দিয়েছিলেন প্রতিবাদকারীরা৷
দলের মহিলা সংগঠন, ছাত্র–যুব ও কৃষক সংগঠনও এই মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল৷ তাই এ দিন ভোরেই পুলিশের বিশাল বাহিনী দলের দিল্লি অফিস ঘিরে ফেলে এবং মহিলা সংগঠন এআইএমএসএসের রাজ্য সম্পাদক ঋতু কৌশিক, দলের দিল্লি রাজ্য কমিটির সদস্য রাজেন্দ্র সিং অ্যাডভোকেট সহ দলের নেতাদের তুলে নিয়ে গিয়ে থানায় আটক করে৷ অন্য দিকে হরিয়ানা থেকে দলের কৃষক সংগঠনের নেতা–নেত্রীরা এ দিন যখন মহাপঞ্চায়েতে যোগ দেওয়ার জন্য ভোরেই রওনা হয়েছেন, তখন তাঁদের বিভিন্ন রেল স্টেশন থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ৷
দলের কৃষক সংগঠন এআইকেকেএমএস–এর হরিয়ানা রাজ্য সম্পাদক কমরেড জয়করণের বাড়ি পুলিশ ঘিরে রেখে তাঁকে গৃহবন্দি করে৷ এ ছাড়াও বিজেপি সরকারের পুলিশ দিল্লি সীমান্তে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ থেকে দলে দলে আসা কৃষকদের আটকে দেয়৷ প্রতিবাদে তাঁরা সেখানেই ধর্নায় বসেন৷
রাজভবনে সামনে বিক্ষোভ
দিল্লিতে বিক্ষোভ