সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স সহ নানা পেশার কর্মচারীরা ন্যায্য ডিএ এবং স্বচ্ছভাবে নিয়োগের দাবিতে যে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তা ভাঙতে তৃণমূল সরকারের নখ-দাঁত বেরিয়ে এল। রাজ্য সরকারের অর্থ দফতর ২০ মে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের অফিসের কাজের সময়ে অন্য কোনও কর্মসূচি চলবে না। এমনকি টিফিনের জন্য বরাদ্দ সময়েও তা চলবে না। যাঁরা তা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। এমনকি তাঁদের সে দিন অফিসে গরহাজির বলেও ধরে নেওয়া হবে। অর্থাৎ সরকারি কর্মচারীরা কর্মরত অবস্থায় কোনও আন্দোলন বা প্রতিবাদ করতে পারবেন না। স্বাভাবিক ভাবে এই পদক্ষেপকে অগণতান্ত্রিক বলে তীব্র নিন্দা করেছে কর্মচারীদের সংগঠনগুলি। শ্রমিক কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন এই ফতোয়ার দ্বারা রাজ্য সরকার কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে।
এই সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রসঙ্গে এস ইউ সি আই (সি)-র রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ২০ মে এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকারি অফিসে শৃঙ্খলা রক্ষার নামে মুখ্যসচিব যে সার্কুলার জারি করেছেন তা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। এর ফলে কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের অর্জিত অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা হল, যা অভিসন্ধিমূলক। ডিএ সহ নানা দাবিতে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বে সরকারি কর্মীরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন–তা বানচাল করার জন্যই যে এই সুচতুর পদক্ষেপ তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না। আমরা এই কালা সার্কুলারের তীব্র বিরোধিতা করছি এবং অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
আন্দোলনের জন্য বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে গড়ে তুলেছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। মঞ্চের নেতৃত্বে শহিদ মিনারের তলায় চলছে লাগাতার অবস্থান। ১০ মার্চ সরকারি কর্মচারীরা যে ধর্মঘট পালন করেন তা রাজ্যজুড়ে সর্বাত্মক রূপ নেয়। স্বাভাবিক ভাবেই আন্দোলনের চাপে প্রশাসন খানিকটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনে লাগাম পরাতেই এমন প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি। একদিকে কর্মচারী সংগঠনগুলি, অন্য দিকে গণতান্ত্রিক সংগঠন ও ব্যক্তিমাত্রেই এর প্রতিবাদ করেছেন। এই পদক্ষেপকে মুখ্যমন্ত্রীর চূড়ান্ত স্বৈরাচারী মনোভাবেরই প্রকাশ বলে তাঁরা মনে করেন। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ক’দিন আগেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের এক বিচারপতি জানিয়েছেন, আন্দোলন সরকারি কর্মীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তা সত্ত্বেও এই বিজ্ঞপ্তি বিস্ময়ের। তিনি বলেন, আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ‘অপরাধে’ সরকার কর্মচারীদের যথেচ্ছ ভাবে শাস্তিমূলক বদলি করছে। সরকার যতই এ ধরনের দমনমূলক পদক্ষেপ নেবে কর্মচারীদের আন্দোলন ততই ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, কর্মচারীরা যে কোনও মূল্যে এই সিদ্ধান্তকে প্রতিরোধ করবেন।
আসলে যে দলই সরকারে থাকে তারাই পুঁজিপতিদের সেবাদাস হিসাবে এ কাজ করে থাকে। সিপিএম সরকার নানা অজুহাতে কলকাতার নানা জায়গায় মিটিং-মিছিল বন্ধ করা শুরু করেছিল। ১৯৮৪-র ১৬ অক্টোবর সিপিএম সরকার তৃণমূল সরকারের মতোই টিফিনের সময় সরকারি অফিসে স্লোগান, করিডরে মিটিং বন্ধ করতে সার্কুলার জারি করেছিল। বিরোধীদের ডাকা বনধ ভাঙতে সার্কুলার জারি, কর্মচারীদের বনধের আগের দিন অফিসে আটকে রাখা তারাই শুরু করে। এমনকি বনধ করার অপরাধে এসইউসিআই(সি)-র বিরুদ্ধে মামলাও তাদের সরকারের আমলেই হয়েছে। তৃণমূল ক্ষমতায় এসেই বনধ, ধর্মঘট, আন্দোলন বিরোধী হুঙ্কার দিয়ে একই ভাবে কর্পোরেট মালিকদের আস্থা পেতে চাইছে। বিজেপি তার শাসিত রাজ্যে একই কাজ করে চলেছে। সম্প্রতি হরিয়ানার বিজেপি সরকার শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সভা, মিছিল প্রভৃতি নিষিদ্ধ করেছে।