পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় ‘পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে’র কলাভবনে ২৯ মার্চ এআইডিএসও-র সর্বভারতীয় কমিটির আহ্বানে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে এক মহতী কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, চণ্ডীগড় এবং জম্মু-কাশ্মীর থেকে ছাত্র, শিক্ষক এবং অভিভাবকরা এই কনভেনশনে অংশগ্রহণ করেন। পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়, পাতিয়ালা থেকে ছাত্র এবং গবেষকরাও এতে যোগ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে কলা ভবন পর্যন্ত মিছিল হয়। উদ্ধৃতি এবং ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জিএমসি অমৃতসরের পূর্বতন অধ্যাপক এবং অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির পাঞ্জাব রাজ্য সভাপতি ডঃ শ্যামসুন্দর দীপ্তি।
অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (এআইডিএসও) শুরু থেকেই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি যে বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ, সাম্প্রদায়িকীকরণ, কেন্দ্রীকরণ ও বৃত্তিমুখীকরণের পরিকল্পনা, তা তুলে ধরে দেশজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছে। সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটি এই শিক্ষানীতি প্রতিরোধে এক কোটি স্বাক্ষর প্রচারাভিযান এবং ২৫ লাখ স্বেচ্ছাসেবক নথিভুক্ত করে ১ লাখ কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। এতে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় পাতিয়ালায় হল এই কনভেনশন।
কনভেনশনের প্রথম অধিবেশনে বিভিন্ন রাজ্যের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে রয়েছেন ডঃ শ্যামসুন্দর দীপ্তি, সুরেন্দ্র রঘুবংশী (প্রখ্যাত কবি, মধ্যপ্রদেশ), হুকুম চাঁদ (প্রেসিডেন্ট, মালওয়া জোন, গভর্নমেন্ট কলেজ গেস্ট ফ্যাকাল্টিঅ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরস অ্যাসোসিয়েশন, পাঞ্জাব), বল্লী সিং চিমা (বিশিষ্ট কবি, উত্তরাখণ্ড), অধ্যাপক ভীম ইন্দর সিং (চেয়ারম্যান, শহিদ কর্তার সিং সারাভা চেয়ার, পিইউ, পাতিয়ালা), ডাঃ অংশুমান মিত্র (পিপলস হেলথ মুভমেন্টের নেতা ও মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারের সম্পাদক), অধ্যাপক বলবিন্দর সিং টিওয়ানা (পিইউটিএ-র পক্ষে) এবং ভি এন রাজশেখর (সর্বভারতীয় সভাপতি, এআইডিএসও) প্রমুখ। অধ্যাপক চমন লাল (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, জেএনইউ) এবং অধ্যাপক নরেন্দ্র শর্মা (অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়) সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের লিখিত বার্তা পাঠ করা হয়। বক্তারা দ্ব্যর্থহীনভাবে জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেন। তাঁরা জনশিক্ষা বাঁচাতে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান।
দ্বিতীয় অধিবেশনে বাম এবং প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে তাঁদের মতামত প্রকাশ করেন। এই অধিবেশনে এআইএসএফ, পিএসইউ, এসএফআই, পিএসইউ-লালকার, পিআরএসইউ, পিএসইউ-শহিদ রনধোয়া, ডিএসও, ডিএএসএফআই, ডিএসএফ সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তারা বক্তব্য রাখেন। এআইডিএসও-র পাঞ্জাব সংগঠনের ইনচার্জ শিবাশিস প্রহরাজ বক্তব্য রাখেন।
জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংগঠনের দিল্লি শাখার সম্পাদক শ্রেয়া। কনভেনশনে সভাপতিত্ব করেন এআইডিএসওর সাধারণ সম্পাদক সৌরভ ঘোষ।
পাঞ্জাবের আপ সরকার পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধ্যাপক কর্মচারীরা ‘পাঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাও মোর্চা’ গঠন করে যে যুক্ত আন্দোলন ও ধর্মঘট চালাচ্ছেন তার প্রতি কনভেনশন থেকে সংহতি জানানো হয় এবং এআইডিএসও ৬ এপ্রিল এই আন্দোলনের সমর্থনে সারা দেশে ‘সংহতি দিবস’ পালন করার কথা ঘোষণা কর়ে। কনভেনশনের সভাপতি ডঃ শ্যামসুন্দর দীপ্তি প্রকৃত বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে দেশব্যাপী আন্দোলনের আহ্বান জানান। শিক্ষা ও মানবতাকে বাঁচাতে জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।