বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো এখন প্রিপেড মিটার বসানোর জন্য তোড়জোড় করছে। জনবিরোধী বিদ্যুৎ আইন সংশোধনী বিল (২০২২)-এ পরিষ্কার বলা আছে প্রায়র গ্যারান্টি অফ রেভিনিউ ব্যতীত বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। অর্থাৎ গ্রাহকদের স্মার্ট প্রিপেড মিটারের মাধ্যমেই বিদ্যুৎ নিতে হবে, কারণ এটাই একমাত্র প্রায়র গ্যারান্টি অফ রেভিনিউ। গ্রাহকদের কানেকশনের লোডকে ভিত্তি করে আগে টাকা জমা দিতে হবে, তারপর মিটারে বিদ্যুৎ সংযোগ হবে। মিটারে টাকা শেষ হবার পূর্বেই মোবাইলে মেসেজ আসবে। আবার টাকা না জমা করলে বিদ্যুৎ সংযোগ আপনা-আপনি বিচ্ছিন্ন হবে। অর্থাৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে আগে টাকা আদায় করে সেই টাকা দিয়েই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা ব্যবসা করবে।
এই জনবিরোধী বিল সংসদে পাশ হবার আগেই কয়েকটি রাজ্যে স্মার্ট প্রিপেড মিটার লাগানো শুরু হয়েছে। আসামে বিজেপি সরকার এ বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে। স্মার্ট মিটার প্রিপেড বা পোস্ট পেড দুই রকমই হয়। আসামে স্মার্ট মিটারকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে নানা অভিযোগ উঠছে। গত ২-৩ মাস ধরে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। কোথাও কোথাও ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। মাসে ২ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ১৫ হাজার টাকার বিলও হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ স্মার্ট মিটার লাগানোর পরই বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু আসাম পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিডিসিএল) তা মানতে চায়নি।
১৬ সেপ্টেম্বর (এপিডিসিএল) বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, গরমের ফলে ও বৃষ্টি কম হওয়ায় বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়েছে এবং তার ফলেই নাকি বিল বেশি হয়েছে। তাছাড়া তারা জানায় এফপিপিসিএ (ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার পারচেজ কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট) এর জন্য প্রতি ইউনিটে ৩০ পয়সা করে নেওয়া হচ্ছে যা গ্রাহকদের বিলকে কিছুটা বাড়িয়়েছে। এদিকে আসাম ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, গত মার্চ মাসের পর কোনও মাশুল বৃদ্ধি হয়নি। প্রশ্ন গ্রাহকদের, তা হলে এই অস্বাভাবিক বিল হচ্ছে কেন?
অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশনের বক্তব্য গরমের জন্য বিদ্যুতের ব্যবহার একটু বেশি হলেও বিল ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি অস্বাভাবিক। এর প্রতিবাদে সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনের পর দিন চলতে থাকে গ্রাহকদের প্রতিবাদ, অবস্থান বিক্ষোভ হয়। আন্দোলনকে বিপথগামী করতে রাজ্যের তথ্য-জনসংযোগ ও পরিষদীয় মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা দাবি করেন সরকারি কর্মীদের প্রতি মাসে মাইনে বাড়ে, তাই বিদ্যুতের মাশুলও বাড়তেই পারে। কিন্তু এসব কথায় গ্রাহকদের আন্দোলন থামানো যায়নি। প্রবল সমালোচনার সামনে পড়ে শেষ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, নতুন করে লাগানো স্মার্ট মিটারগুলির ত্রুটিপূর্ণ রিডিং-এর কারণেই বিলের অঙ্ক বেড়েছে এবং সমস্ত মিটার পরীক্ষা ও পরিবর্তন করা হবে। এটা গ্রাহক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ জয়।
আসামের বিদ্যুৎ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক ইঞ্জিনিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, এপিডিসিএল-এর বিলিং প্রক্রিয়ার প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্যই বিল অস্বাভাবিক বেড়েছে। আসামে মোট ৬৫ লাখ গ্রাহকের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে অতি সামান্য সংখ্যা প্রিপেড মিটার। অথচ অস্বাভাবিক বিল এসেছে স্মার্ট নির্বিশেষে। এপিডিসিএল অত্যন্ত অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স সফটওয়ার ক্রয়ের টেন্ডার সম্পন্ন করে এবং কলকাতার সিংহাল উদ্যোগ ও এনভিল কেবল কোম্পানিকে এই কাজের দায়িত্ব দেয়। বিল প্রস্তুত প্রক্রিয়ার জন্য সিংহাল উদ্যোগকে মাসে ৩৩ লাখ টাকা দিচ্ছে এপিডিসিএল, এদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির জন্যই এসব হচ্ছে। তিনি এপিডিসিএল-এর বিলিং প্রক্রিয়ার আই টি তদন্তের দাবি জানান।
অল আসাম ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (এএইসিএ) এসবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে যে, পুরোনো ডিজিটাল মিটারে কোনও ত্রুটি না থাকা সত্তে্বও বিদ্যুৎ বিভাগ একটি বেসরকারি সংস্থার সাথে মাসে ৩৩ লাখ টাকার চুক্তি করে স্মার্ট মিটার প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করে। স্মার্ট মিটার গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে বিলের মেসেজ সরাসরি পাঠিয়ে দেয়। ফলে গ্রাহকদের ঘরে ঘরে গিয়ে মিটার চেক করার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু মেসেজে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয় না, যা বিলে দেওয়া হত। ফলে গ্রাহকরা জানতে পারেন না যে কত ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ করেছেন তিনি। এভাবে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের পকেট কাটা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে তীব্র গ্রাহক আন্দোলনে সকলকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অল ইন্ডিয়া ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (এআইইসিএ)।