গত ২৪ এপ্রিল এস ইউ সি আই (সি)-র প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ যে সুচিন্তিত বক্তব্য সুললিত ভাষায় তুলে ধরেছেন তা আবারও পড়লাম। এ যেন এক দিকদর্শী কম্পাস। সমকালীন ভারতবর্ষ এবং বিশ্বের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শোষণবিহীন, শ্রেণিহীন সমাজের জন্য যাঁরা জীবন দান করেছেন, তাঁদের চিন্তার প্রেক্ষিতে কী ভাবে আজও সেই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, সুস্থ মানবসমাজের পরিস্ফূরণের জন্য এক অনন্য চেতাবনি এই বত্তৃতায় পরিস্ফূট।
তাঁর বক্তব্যের ছত্রে ছত্রে মহান মার্ক্সবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের ১৯৪৯ সালের মূল্যবান পর্যবেক্ষণ। যেখানে তিনি দেখিয়েছেন, যে কোনও পুঁজিবাদী দেশে গণতন্ত্র ধীরে ধীরে প্রাণসত্তা হারাবে, বিলুপ্ত হবে–তারই ধারাবাহিক চিত্র আমাদের সামনে উদ্ভাসিত।
এই বক্তব্যে পুরো বক্তব্যটি পরিসংখ্যানগত তথ্যে সমৃদ্ধ। মানবপ্রেমী স্ট্যালিন কী ভাবে পশ্চাদপদ রাশিয়াকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করেন, শোষণমুক্ত, দাসত্ববিহীন সমাজ সৃষ্টি করেন, আর বর্তমানে পুতিনের বৃহৎ পুঁজির স্বার্থে যুদ্ধ শুরু করা ও ন্যাটোর সামরিক চুক্তির ভয়াবহতা, মন্দাক্রান্ত বুর্জোয়া ব্যবস্থার যুদ্ধাস্ত্র শিল্পের মাধ্যমে খড়কুটো ধরে অর্থনৈতিক সঙ্কট সামাল দেওয়ার প্রচেষ্টা, ভারত সরকারের যুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্য না রাখার কারণ, সবই প্রাঞ্জল ভাবে তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে।
বৃহৎ পুঁজির ভজনায় লিপ্ত ভারত সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠান বিক্রিতে কেন আগুয়ান, রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের মাধ্যমে কী ভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কালোবাজারির ফাঁস থেকে সমাজকে মুক্ত করা যায়, তা তিনি পরিষ্কার দেখিয়েছেন এই বক্তব্যে।
পুঁজিপতিরা এস ইউ সি আই (সি) পার্টিকে অর্থের বিনিময়ে কিনতে পারেনি, পারা সম্ভবও নয়। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, ভোট ও বিপ্লব সমার্থক নয়। বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ প্রয়াত কমরেড ঘোষের পার্টিকে গোপনে, প্রকাশ্যে সম্মান ও সহায়তা করেন। এই পার্টি আজও ক্ষুদ্র স্বার্থে, প্রচারের স্বার্থে কোথাও অন্যায়ের সাথে কোনও সমঝোতা করে না। ২০১১-তে মন্ত্রীত্বের হাতছানি উপেক্ষা করে আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড়াতে পারে।
কমরেড প্রভাস ঘোষের গোটা বত্তৃতাটাই চুম্বকের মতো টানে। এই আকর্ষণের ভিত্তি নিহিত মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ-কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তার মধ্যে।
কমরেড শিবদাস ঘোষের উত্তরসূরীরা যেভাবে সমাজ সেবা করে চলেছেন, তা উৎসাহব্যঞ্জক। বিপ্লবের পর বিপ্লবীর নিজের ভিতরের প্রতিবিপ্লবীকে অবদমিত করার বিষয়ে কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষা এক দিগন্তও হতে পারে বলে এই কলমচির অভিমত।
অতনু ভট্টাচার্য, জয়শ্রী, বেহালা, কলকাতা