Breaking News

রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির নামে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতারণা

ফাইল চিত্র

 

মোদি সরকারের অন্যতম বড় প্রতারণা যদি উল্লেখ করতে হয়, তা হলে প্রথমেই মনে পড়ে গ্যাসে ভর্তুকির কথা। রান্নার গ্যাস এখন আধুনিক জীবনের অঙ্গ। শুধু শহর বা মফঃস্বল নয়, গ্রামেও। এই রান্নার গ্যাসকেই ক্রমাগত দুর্মূল্য করে তুলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ৪০ টাকা কেজি সবজি, ৫০ টাকা কেজি চাল এবং ১২০ টাকা কেজি ডাল রান্না করে খেতেও প্রায় হাজার টাকা সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গ্যাসের দাম এখন খাতায়-কলমে ৯২৬ টাকা। গৃহস্থকে দিতে হয় ৯৫০ টাকা (গ্যাস-কর্মচারীর বকশিশ, উপরের তলায় তোলা মিলিয়ে প্রায় হাজার টাকা)।

ক্ষমতায় বসে মোদি সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, গ্যাসের দাম বাড়ানো হবে না। বাড়লেও গৃহস্থ যে বাড়তি টাকা দিয়ে গ্যাস কিনবেন তা ভর্তুকি হিসাবে ফেরত দেওয়া হবে। এর জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে আধার লিঙ্ক বাধ্যতামূলক করেছিল সরকার। মানুষ দৌড়ঝাঁপ করে তা করল। কিন্তু কী ভর্তুকি সরকার দিচ্ছে? ভর্তুকি কমাতে কমাতে নেমে এসেছে মাত্র ১৯ টাকায়।

বহু গ্রাহক সেটাও পাচ্ছেন না। কারও অ্যাকাউন্টে কোনও মাসে ঢুকছে তো কারও ঢুকছে না। এমনকি ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার নামে মহিলাদের বিনামূল্যে গ্যাস দেওয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই যোজনা এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

বাস্তবে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়ার বিজেপি সরকারের প্রতিশ্রুতিটি ছিল পুরোটাই প্রতারণা। ওএনজিসি-র মতো সরকারি সংস্থা ছাড়াও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কিংবা ভারত পেট্রোলিয়ামের মতো বেসরকারি কোম্পানিরও দাম নির্ধারণে সরকারি অনুমোদন লাগে। অর্থাৎ গ্যাসের চড়া হারে দাম বৃদ্ধি মোদি সরকারের প্রত্যক্ষ অনুমোদনে হয়ে চলেছে। বিজেপি সরকার এ ভাবেই গ্যাস কোম্পানিগুলিকে মুনাফা লোটার সুযোগ করে দিচ্ছে। এমনকি বিশ্ববাজারে অশোধিত তেল ও গ্যাসের দাম যখন একেবারে তলানিতে, তখনও বহুজাতিক কোম্পানিগুলি এখানে দাম বাড়াচ্ছিল, সরকারও দামবৃদ্ধিতে সিলমোহর দিয়েছে। লকডাউনে সাধারণ মানুষের যখন খাবার জোগাড়ে প্রাণান্ত হচ্ছে, তখন গ্যাস কোম্পানিগুলির মুনাফা চড়চড়িয়ে বেড়েছে। চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ওএনজিসি-র নিট মুনাফা গত বছরের তুলনায় সাত গুণ বেড়েছে। এই সময়ে ৮৭৬৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে তারা। হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম ২০২২-এর প্রথম ত্রৈমাসিকেই শুধু ২,০০৩.৯০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। অর্থাৎ এ কথা স্পষ্ট, গ্যাসের দামবৃদ্ধির সাথে কোম্পানিগুলির লোকসানের কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের মুনাফাকে আকাশছোঁয়া করতেই এই দামবৃদ্ধি।

আর ওদের এই সর্বোচ্চ মুনাফা-ক্ষুধারই বলি সাধারণ মানুষ। সরকার আসে, সরকার যায়। এই শোষণ, প্রতারণা, বঞ্চনা চলতেই থাকে। তবে কি এর ব্যতিক্রম হওয়ার জো নেই? অবশ্যই আছে। সরকার এবং তেল কোম্পানিগুলি মনে করে জনগণের উপর মূল্যবৃদ্ধির যত বোঝাই চাপানো হোক না কেন, তারা মুখ বুজেই তা সয়ে যাবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা যে সম্পূর্ণ ভুল, তা আজ মানুষকে প্রমাণ করে দিতে হবে। আর তা প্রমাণ করতেই সাধারণ মানুষ সরকারের এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামছেন, প্রতিবাদ হচ্ছে। এসইউসিআই(সি)-র ২২ মার্চের মিছিল এবং ২৮-২৯ মার্চের ধর্মঘট সেই আহ্বানই রেখেছে জনজীবনে।

গণদাবী  ৭৪ বর্ষ ৩০ সংখ্যা ১১ মার্চ ২০২২