মহামারী করোনা প্রতিরোধে যে টিকা অবশ্যপ্রয়োজনীয় বলে বিজ্ঞানীরা বার বার বলছেন, সেই টিকা নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। এর যথাযথ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ২৯ জুন এসইউসিআই(সি) রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে নিম্নলিখিত চিঠিটি দেন।
মাননীয় মহাশয়া,
নকল টিকা, ভুয়ো টিকাকেন্দ্র ও জাল আইএএস-র ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে–
১) একজন জালিয়াত এতদিন ধরে রাজ্যের মন্ত্রী, কলকাতা কর্পোরেশন, শাসক দলের সাংসদ ও নেতা এবং পুলিশকে ধোঁকা দিয়ে ক্যাম্প করে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিলি করল, মন্ত্রী ও অফিসারদের সঙ্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফলকে নাম ছাপাতে পারল কেমন করে?
২) টিকা ও প্রতিষেধকের জন্য সাধারণ মানুষের হন্যে হয়ে বেড়ানোর সুযোগ নিয়ে উক্ত তথাকথিত জালিয়াত শাসক দলের সাংসদ ও বিধায়ককে দিয়ে প্রচার করে একাধিক ভুয়ো টিকাকরণ কেন্দ্র সংগঠিত করল অথচ পুলিশ কিছু জানতেই পারল না, তা কী করে সম্ভব হল?
৩) অভিযুক্ত ব্যক্তি কলকাতা কর্পোরেশন ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল কর্পোরেশনের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলল এবং তাতে ২ কোটি টাকার মতো লেনদেন হল, চাকরি দেওয়া, স্টেডিয়াম তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রভৃতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘুষ নেওয়া চলল, অথচ পুলিশ বা সরকার কোনও কিছুই টের পেল না, তা কেমন করে সম্ভব হল? অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের মধ্যে কি তাহলে আর একটি সুদীপ্ত সেনের মতো ঘটনা লুকিয়ে আছে?
৪) মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আপনি কেবলমাত্র কর্পোরেশন ও পুলিশের বিরুদ্ধে নামমাত্র কিছু মন্তব্য করেই দায়িত্ব এড়িয়েছেন। বাস্তবে শাসক দল, রাজ্য সরকার ও পুলিশের প্রভাবশালী অংশের মদত ছাড়া যে এই ঘটনা এতদূর পর্যন্ত যেতে পারে না স্বাভাবিকভাবেই সেই ধারণা সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কেবল রাজ্য সরকারের তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে তদন্ত করলে সত্য উদঘাটিত হওয়ার পরিবর্তে তা ধামাচাপা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আমাদের দাবি কোনও কর্মরত বিচারককে দিয়ে বা অন্য কোনওভাবে নিরপেক্ষ তদন্ত করে তার রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা হোক এবং দোষীরা যত প্রভাবশালীই হোন না কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শান্তির ব্যবস্থা করা হোক। আমরা আরও মনে করি, সরকারের তরফে কেবল ঘোষণা নয়, অসংখ্য মানুষের জীবন নিয়ে এমন জঘন্যতম অপরাধ এই চক্র চলতে পারল কী করে তারও জবাব সরকারকে দিতে হবে।