Breaking News

AIKKMS ‘র ৫ জুন দেশ জুড়ে ‘কৃষি বাঁচাও, কর্পোরেট হটাও’ দিবস পালনের ডাক

আগামী ৫ জুন অল ইন্ডিয়া কিসান-খেতমজদুর সংগঠন (এআইকেকেএমএস) সারা দেশ জুড়ে ‘কৃষি বাঁচাও, কর্পোরেট হটাও’ দিবস পালনের ডাক দিয়েছে। কেন এই কর্মসূচি? কারণ কৃষি আজ পুরোপুরি কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে। কৃষকের ভালমন্দ, বাঁচা-মরা সবই এদের উপর। কৃষক তার ফসলের ন্যায্য দাম পাবে কিনা, ন্যায্য মূল্যে কৃষি উপকরণ পাবে কিনা, সবই এদের উপর নির্ভরশীল। আবার বিশাল সংখ্যক অ-কৃষি জনগণ খাদ্যের ব্যাপারে কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে তারাও কর্পোরেটদের গ্রাসের মধ্যে পড়বেন। সেই কারণে এটা শুধু কৃষি ও কৃষকের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম নয়, সমস্ত জনগণের সংগ্রাম।

সকলেই জানেন, বীজ, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে চাষের সব উপকরণ এখন বৃহৎ পুঁজিপতি বা কর্পোরেটদের নিয়ন্ত্রণে। তারা যে দাম নির্ধারণ করে সেই দামেই চাষিকে কিনতে হয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলনীতি যেহেতু সর্বোচ্চ মুনাফা, সেই কারণে তারা বিক্রির সময় যতদূর সম্ভব বেশি দাম বাড়ায়। এতে চাষের খরচ অত্যধিক বেড়ে যায়।

আবার পুঁজিবাদী বাজারে নানা নামে এরাই ক্রেতা। তারা মুনাফা সর্বোচ্চ করতে চাষির কাছ থেকে কেনার সময় দাম যতদূর সম্ভব কম দেওয়া যায় তার চেষ্টা চালায়। এই দ্বিমুখী শোষণে কৃষক সর্বহারায় পরিণত হয়। তারা জমি হারিয়ে পরিণত হয় কৃষি মজুরে। আবার গ্রামেও সারা বছর কাজ নেই। ফলে তারা গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে এ রাজ্যে বা ভিন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে। ভারতে এই যে পরিযায়ী শ্রমিকের বিপুল সংখ্যা বৃদ্ধি তার পিছনে রয়েছে পুঁজিবাদী শোষণে জমি থেকে কৃষকের উৎখাতের ইতিহাস।

এতদিন ছোট মাঝারি বড় পাইকার ও ফড়েদের মাধ্যমে কৃষককে অভাবি বিক্রিতে বাধ্য করার প্রক্রিয়াটি চলছিল। এবার এই শোষণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চলেছে সরাসরি কর্পোরেট পুঁজি। এই শোষণ প্রক্রিয়াটি যাতে কর্পোরেটরা নির্বিঘ্নে চালাতে পারে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে পাস করিয়ে নিয়েছেন নয়া কৃষি আইন, যার বিরুদ্ধে কৃষকরা ছ’মাস ধরে রাজপথে আন্দোলনে সামিল।

এই কৃষি আইনের জনবিরোধী ও কর্পোরেট স্বার্থবাহী চরিত্র বিশ্লেষণ করে ইতিপূর্বে গণদাবীর বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়েছে। আমরা দেখিয়েছি, মান্ডির বাইরে কৃষকদের থেকে সরাসরি কর্পোরেটদের কেনার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তাতে কী ভাবে চাষী ঠকবে। আমরা দেখিয়েছি, বৃহৎ পুঁজিপতিদের কালোবাজারির স্বার্থে কী ভাবে ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তৈলবীজ সহ বিভিন্ন পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় তালিকার বাইরে আনা হয়েছে। এর প্রভাব জনজীবনে পড়তেও শুরু করেছে। অতীতের সব হার ছাড়িয়ে রান্নার তেলের যে মূল্যবৃদ্ধি, তার পিছনে রয়েছে নয়া কৃষি আইন এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তা। কারণ এই আইনে বলা হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি ১০০ শতাংশ না হলে এই আইন অনুযায়ী সরকার কোনও ব্যবস্থা নেবে না। এই বিপজ্জনক কৃষি আইন প্রতিরোধ সংগ্রাম শুধু কৃষকের সংগ্রাম নয়, সমগ্র জনগণের সংগ্রাম। আসুন, ৫ জুন ‘কৃষি বাঁচাও কর্পোরেট হঠাও’ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিই।

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৪ সংখ্যা