করোনা দেশ জুড়ে মহামারির আকার ধারণ করেছে, কাজ হারাচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তখন নতুন করে সারা দেশে ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের ফলে অথবা স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় ২১১৮টি শাখা। এদিন এক বিস্ময়কর তথ্য সামনে নিয়ে এলেন মধ্যপ্রদেশের অ্যাক্টিভিস্ট চন্দ্রশেখর গৌড়। আরটিআই-এ তার প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১০টি সরকারি ব্যাঙ্কের ২১১৮টি শাখা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাঙ্ক অফ বরোদার ১২৮৩ টি শাখা বন্ধ হয়েছে। অন্য দিকে সংযুক্তিকরণের জেরে ভারতের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ৩৩২ শাখা বন্ধ হয়েছে। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ১৬৯টি, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ১২৪টি, কানাড়া ব্যাঙ্কের ১০৭টি, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের ৫৩টি, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ৪৩টি, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের ৫টি, ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্রের ৫টি এবং পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্কের একটি করে শাখা বন্ধ হয়েছে (সূত্রঃ নিউজফাইন্ডার ডট ইন, ৯.৫.২১)।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ৩০ আগস্ট ২০১৯ ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন। ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংযুক্তি ঘটিয়ে সংখ্যাটা চারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। এর ফলে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মোট সংখ্যা ১৮ থেকে কমে দাঁড়ায় ১২-তে।
কর্পোরেট মালিকরা ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ আত্মসাৎ করার ফলেই ব্যাঙ্কগুলি অনুৎপাদক সম্পদের বোঝায় ধুকছে। কেন্দ্রীয় সরকার সেই টাকা আদায় না করে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির অজুহাতে এই সংযুক্তি ঘটিয়েছে। বাস্তবে কর্পোরেট মালিকদের কাছ থেকে টাকা আদায় না করে সঙ্কটের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। হচ্ছে ব্যাঙ্ক কর্মচারী, আমানতকারী সাধারণ মানুষের উপর। মোদি সরকারের এফআরডিআই বিল কার্যকর করার পিছনে উদ্দেশ্যই ছিল ঋণ নেবে ধনকুবেররা, শোধ করবে জনগণ।
প্রশ্ন উঠছে, শিল্পপতিদের হাজার হাজার কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণে রুগ্ন ব্যাঙ্কের বোঝা মানুষ বইবে কেন? অনাদায়ী ঋণের পাহাড় কি সরকারের ব্যাঙ্কনীতির ব্যর্থতা নয়? ব্যাঙ্ক লাভ করলেও আমানতকারীদের ভাঁড়ার শূন্য। ব্যাঙ্কের ক্ষতির বোঝা তবে সাধারণ সঞ্চয়ীদের কেন বহন করতে হবে? মানুষকে আর্থিক নিরাপত্তা দিতে সরকারের কি দায় নেই?
দেশের জনসংখ্যা বাড়ার সাথে ব্যাঙ্কের শাখা বাড়ানোর দরকার ছিল। ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের ফলে ব্যাঙ্কগুলির বহু শাখা বন্ধ হয়ে অসংখ্য কর্মচারী কাজ হারাবেন সাথে সাথে সেই শূন্য পদে আর নতুন করে নিয়োগ হবে না। এত দিন গ্রাহকরা সুদের হার বা। পরিষেবার মাশুল বিচার করে পছন্দ মতো ব্যাঙ্ক বেছে নেওয়ার যে সুযোগ পেতেন, তা সঙ্কুচিত করা হল। আমানতকারীদের গচ্ছিত টাকা বা সঞ্চয় ব্যাঙ্কে কতটা নিরাপদ, এই নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ রূপে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের লক্ষ্যেই আজ সরকারের এই সিদ্ধান্ত। ব্যাঙ্কক্ষেত্রে এই আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যাঙ্ক-কর্মচারী এবং আমানতকারীদের যুক্তসমিতি গঠন করে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।