দায়ী মোদি সরকার বলল ল্যানসেট

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিক্যাল জার্নাল ‘দি ল্যানসেট’ ৮ মে তার সম্পাদকীয়তে আশঙ্কা প্রকাশ করে জানাল,  ১ আগস্টের মধ্যে ভারতে কোভিড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছুঁতে পারে। গত ১২ মে স্বাস্থ্যদপ্তরের ঘোষিত কোভিড মৃত্যুসংখ্যা ২,৫৪,১৯৭। তার মানে আগামী আড়াই মাসের মধ্যেই তা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ লক্ষে পৌঁছবে।

ল্যানসেটের এই আশঙ্কার ভিত্তি হল ‘দ্য ইন্সস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’-এর সমীক্ষা। অথচ তিন মাস আগে বিশেষজ্ঞরা যখন ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সৃষ্টির ভয়াবহতার কথা বলছিলেন,  তখন মোদি সরকার ছিল আত্মসন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দাভোসের ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’-এর সম্মেলনে ‘কোভিডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় হয়ে গিয়েছে বলে ঘোষণা করে এসেছিলেন। তার জন্য বিজেপির জাতীয় পদাধিকারীরা এক সভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসায় প্রস্তাবও গ্রহণ করে। এরপর মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধনও ঘোষণা করলেন ‘করোনার খেলা শেষ’। ফলে ঢেউ যখন আছড়ে পড়লো, তখন দেখা গেল তাকে মোকাবিলা করার কোনও ব্যবস্থাই সরকারের নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক পরীক্ষা করার প্রয়াোজনীয় কিট নেই। হাসপাতালে বেড অমিল। নেই পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী। অক্সিজেনের চূড়ান্ত আকাল। অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাচ্ছে। আইসিইউ বেড নেই। ভেন্টিলেশন নেই। দিশেহারা হয়ে মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সকল দেশবাসীকে টিকা দেওয়ার প্রশ্নেও সরকার দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। টিকার পর্যাপ্ত যোগান নেই। তাতেও সরকারের টনক নড়েনি। দেখা গেল উত্তরাখণ্ডে কুম্ভমেলায় লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হচ্ছে। সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সরকার নির্বিকার। বিজেপির নেতামন্ত্রীরা তখন এই ভয়াবহ সংক্রমণের ঢেউকে গুরুত্বহীন করে কয়েকটি রাজ্যে ভোট প্রচারে ব্যস্ত। দ্বিতীয় ঢেউকে রোখার পরিকল্পনা করবে কে? কেন্দ্রীয় সরকারের এই উদাসীন অবহেলায় হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। এই সংক্রমণের অতি মাত্রাকে প্রতিহত করার উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই। অথচ এই ভয়াবহতাকে স্বীকার করলে কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা প্রকাশ হয়ে পড়বে। ফলে ভোট প্রচারে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই অমার্জনীয় অপরাধেই ‘দি ল্যানসেট’ আশঙ্কা প্রকাশ করছে আগস্টের আগেই ভারতে মৃত্যুমিছিল ১০ লক্ষ ছাপাবে। কিন্তু মানুষের এই মৃত্যুস্রোত প্রতিহত করতে যুদ্ধকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের চেয়ে বিজেপির ভাবনা মোদির ধাক্কা-খাওয়া ভাবমূর্তিকে আবার কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে। সামনে উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন, আছে ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। তাই আবার হিন্দুত্বের রাজনীতি, কিম্বা পাকিস্তান বিরোধী উগ্র জাতীয়তার জিগির সৃষ্টির পরিকল্পনার ছক তৈরি হবে, কিন্তু অতিমারির হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা হবে না। মানুষের জীবন এদের কাছে এমনই মূল্যহীন।

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা