Breaking News

বাকস্বাধীনতা হরণকারী আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ

বাকস্বাধীনতা হরণকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ

বাক স্বাধীনতাবিরোধী ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনমুখর বাংলাদেশ। এই কালা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক লেখক-কার্টুনিস্ট-শিক্ষক-রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রকে পর্যন্ত গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষের অসন্তোষকে প্রতিবাদে পরিণত হতে দিতে চায় না আওয়ামি লিগ সরকার। তাই এ ধরনের জঙ্গলের আইন আওয়ামি লিগ সরকার পাশ করিয়েছে ও যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। করোনাকালীন সময়ে সরকারের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির নগ্ন চেহারা প্রকাশের পর থেকে এই আক্রমণ তীব্রতা পেয়েছে।

এ আইন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চললেও তীব্র রূপ পায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে। সেদিন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বন্দি থাকা লেখক মুশতাক মারা যান। কারাগারে নির্যাতন ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে তিনি মারা যান এ বিষয়ে নিশ্চিত বাংলাদেশের মানুষ। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার সাথে সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররা জড়ো হতে থাকে। সেদিন রাত সাড়ে ১২টায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে ছাত্ররা মিছিল বের করে।

পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাস ছিল উত্তাল। সারাদিনব্যাপী ক্যাম্পাসে মিছিল সমাবেশ চলতে থাকে। সন্ধ্যায় বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে মশাল মিছিল বের হলে শাহবাগ মোড়ে পুলিশ মিছিলের উপর নির্মমভাবে হামলা চালায়। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ সেদিন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্র ইউনিয়নের সাতজন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে। পুলিশকে হত্যার চেষ্টা সহ দশটি ধারায় তাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। তাঁরা এখনও কারাগারে। এরই মধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে খুলনায় শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্যের সংগঠক রুহুল আমিনকে দুই দিনের রিমান্ডে পুলিশ গ্রেফতার করে।

মূলত বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে এই আন্দোলেন শুরু হলেও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। সারা দেশের সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন ব্যক্ত করছেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের শীর্ষ সংবাদপত্রগুলোতে এ আইনের বিরুদ্ধে ও গ্রেফতার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে দেশের ৬৬ জন লেখকের বিবৃতি ছাপা হয়েছে। আওয়ামি লিগ ও তাদের জোটসঙ্গী ব্যতীত প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই আইন প্রত্যাখ্যান করেছে।

মুশতাককে গ্রেফতারের পর তাঁকে ১০ মাস কারাগারে আটকে রাখা হয়। ছ’বার তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। মুশতাকের সাথে কবীর কিশোর নামের এক কার্টুনিস্টকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। মুশতাকের মৃত্যুর পর আন্দোলনের চাপে গত ৪ মার্চ কিশোরকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

কিশোরকে গ্রেফতারের পর ৬৯ ঘন্টা তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। কিশোর-মুশতাকের সাথে গ্রেফতার হওয়া রাজনৈতিক কর্মী, রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর ২৪ ঘন্টা তাঁর কোনও হদিস পাওয়া যায়নি।

সাদা পোশাকে যখন তখন বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও গ্রেফতার না দেখিয়ে কখনও গুম করে ফেলা, কখনও পরে গ্রেফতার দেখানো বাংলাদেশে পুলিশের কাছে এখন প্রায় স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অনেকের ভাষ্যমতে, পাকিস্তান আমলে গভীর রাতে বাসা বা কোয়ার্টার থেকে শিক্ষক গ্রেফতার খুবই সাধারণ ব্যাপার ছিল। বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশে এই বিকট রীতি আবার ফিরে এসেছে বা আসা শুরু করেছে।

(গণদাবী-৭৩ বর্ষ ২৫ সংখ্যা_১২ মার্চ , ২০২১)