Breaking News

জনগণের সম্পদ জনগণকেই বেচে মালিক সরকার তারই চৌকিদার

তেলের দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। রাজস্থানে ও মধ্যপ্রদেশে পেট্রল লিটারে ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এই লেখা তৈরির সময় কলকাতায় লিটার-পিছু পেট্রলের দাম হয়েছে ৯১.৭৬ টাকা, ডিজেল ৮৪.৫৬ টাকা। এবারের বাজেটে কিছু পণ্যের উপর কৃষি-পরিকাঠামো উন্নয়ন সেস চাপিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, যার মধ্যে দুটি হল পেট্রলও ডিজেল। এই দুই পণ্যে সেস বসেছে লিটারে যথাক্রমে ২.৫ টাকা এবং ৪ টাকা। কৃষি সেসের হাত ধরে বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকা আসবে কেন্দ্রের ঘরে। তেলের উপর কেন্দ্রীয় ট্যাক্স তার মূল দামের প্রায় সমান। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ট্যাক্স বাবদ কলকাতাবাসীদের লিটার প্রতি পেট্রলে ৪৯ টাকা ও ডিজেলে ৪২ টাকা গুনতে হচ্ছে। গত আড়াই মাস রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডারে ১৭৫ টাকা বেড়ে ৮০০ টাকা ছুঁতে চললেও ভর্তুকি প্রায় তুলেই দিয়েছে সরকার।

হিসাব বলছে, পেট্রল-ডিজেলের ওপর অস্বাভাবিক হারে শুল্ক ও সেস চাপিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এই ক’বছরে লুটে নিয়েছে ২৪ লক্ষ কোটি টাকা। উৎপাদন শুল্ক ও ভ্যাট ধরলে পেট্রোপণ্যের দামের তিনভাগের দু’ভাগই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ট্যাক্স। মানুষ প্রশ্ন তুলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে সরকার যদি দেশের বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ায়, তা হলে যখন অশোধিত তেলের দাম একেবারে তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছিল, তখন সেই অনুপাতে দাম কমানো হয়নি কেন? তা যদি করা হত, তা হলে অশোধিত তেলের দাম কিছুটা বাড়লেও এখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরিবর্তে খানিকটা হলেও কম থাকত। হিসাব বলছে, বাড়তি শুল্ক যদি সরকার তুলে নেয়, তা হলে ঠিক এই সময়ে পেট্রল-ডিজেলের দাম নেমে গিয়ে দাঁড়াবে লিটার পিছু যথাক্রমে ৬০.৪২ টাকা ও ৪৬.০১ টাকা। অর্থাৎ সরকারি ট্যাক্স না চাপলে এখন দেশের মানুষ ২০১৪ সালের চেয়েও কম দামে পেট্রল-ডিজেল পেতে পারে। এতে দাম কমতে পারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের। একটু হলেও সুসহ হতে পারে দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা।

ট্যাক্স না চাপালে, ট্যাক্স না বাড়ালে দেশ চলবে কী করে? দেশ চালানোর জন্য কিছু ট্যাক্স অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু এই ট্যাক্স আদায়ে কোথায় জোর দেওয়া উচিত? সরকার জনস্বার্থবাহী হলে সাধারণ মানুষের উপর ট্যাক্স কম করে, পুঁজিপতিদের উপর ট্যাক্স বাড়াবে। কিন্তু এদেশে নানা সময়ে শাসন ক্ষমতায় থাকা বিজেপি বা কংগ্রেসের ইতিহাস কী? তারা ক্ষমতায় থেকে পুঁজিপতিদের কোটি কোটি টাকা ট্যাক্স ছাড় দিয়েছে, বিপরীতে জনসাধারণের উপর ট্যাক্স বাড়িয়েছে। আবার এ কথা মনে করার কোনও কারণ নেই যে, ট্যাক্স আদায় হলেই তার সবটা দেশের স্বার্থে খরচ হয়। তেল কোম্পানিগুলি লাভ করছে বিপুল। রিলায়েন্স কোম্পানি সম্প্রতি জানিয়েছে তেল-গ্যাস থেকেই তাদের মুনাফা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সাধারণ মানুষ যখন নিঃস্ব হয়েছে, একচেটিয়া ধনকুবেররা ক্রমাগত এই ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার এই লুঠেরাদের হয়ে চৌকিদারির দায়িত্ব নিয়েছে। ১২ মে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ দিয়ে করোনা মহামারির ক্ষতিপূরণ করা হবে। কিন্তু সরকার কৌশলে ২৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করে যারা তাদেরই সুবিধার ব্যবস্থা করল। সম্প্রতি নীরব মোদি, মেহুল চোকসি সহ যে সমস্ত পুঁজিপতি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে বিদেশে পালিয়েছে, সরকার তাদের ঋণ শোধ করছে জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকে। অ’ফ্যাম ইন্টারন্যাশনালের ২০২০-র রিপোর্ট বলছে বিজেপির ‘সোনার রাজত্বে’ দেশে যত সম্পদ উৎপন্ন হয়েছে তার ৭৩ শতাংশ জমা হয়েছে ১ শতাংশের সিন্দুকে। সরকার বলছে, শুল্ক কমানো হলে নাকি ঘাটতি পড়বে রাজকোষে। রাজকোষ ঘাটতি নিয়ে এতই যদি দুশ্চিন্তা, তা হলে এই বিপন্ন সময়ে দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন বানানো সহ রাজকীয় সেন্ট্রাল ভিস্টার বিলাসবহুল প্রাসাদ তৈরিতে ২০ হাজার কোটি টাকা ঢালছে কেন সরকার?

জ্বালানি তেল সভ্যতার চালিকা শক্তি। সমস্ত উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ডে প্রয়োজন। এর দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সমস্ত পণ্যের দাম বৃদ্ধির রাস্তা খুলে দিল। এতে বাস-ট্রামের ভাড়াবৃদ্ধি, রেলের ভাড়াবৃদ্ধি, লঞ্চ -স্টিমারের ভাড়াবৃদ্ধি, ট্রাকের ভাড়াবৃদ্ধি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধিকে আকাশছোঁয়া করে তুলবে। চাষে সেচের খরচ বাড়ায় কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে জনসাধারণকে বাড়তি মূল্য দিতে হবে। বিপর্যস্ত হবে জনজীবন।

(ডিজিটাল গণদাবী-৭৩ বর্ষ ২৩ সংখ্যা_২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১)