এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু ২৪ ডিসেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘সিপিএম, সিপিআই সহ বামফ্রন্টের শিক্ষক সংগঠনগুলো যেভাবে এক সুরে প্রতারণামূলক বক্তব্যে স্কুলছুটের অজুহাত তুলে প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল চালুর বিরোধিতা করেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা করছি৷ এ রাজ্যের জনসাধারণ ভুলে যাননি যে, সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার এ রাজ্যে সরকারি ক্ষমতায় বসেই প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ও পাশ–ফেল প্রথা তুলে দিয়েছিল৷ তখন তারা স্কুলছুটের একই ‘তত্ত্ব’ দিয়েছিল৷ অথচ তাদেরই মাননীয় মন্ত্রী অশোক মিত্রের নেতৃত্বে তাদের সরকার নিয়োজিত কমিশন বলেছিল, ‘‘এর (পাশ–ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার) ফলে প্রাথমিকে শিশুদের যতটুকু শেখা ডচিত ছিল তা হচ্ছে না৷ স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ছে৷’’ তবু সিপিএম সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে৷ প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি ও পাশ–ফেল চালুর দাবিতে বুদ্ধিজীবী–শিক্ষাবিদদের নেতৃত্বে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে ডঠেছিল৷ আমাদের দল সর্বশক্তি নিয়োগ করে আন্দোলন চালিয়েছে৷ কিন্তু এ দেশের মানুষের সার্বজনীন শিক্ষার জন্য বিদ্যাসাগর–রবীন্দ্রনাথের মতো মনীষীদের আকাঙক্ষাকে পদদলিত করে সিপিএম সরকার শিক্ষার মূলোচ্ছেদ করতে চেয়েছে৷ তারা শেষপর্যন্ত প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি চালু করতে বাধ্য হলেও পাশ–ফেল চালু করেনি৷ তার পরে সারা দেশে কংগ্রেস ও পরবর্তীকালে বিজেপি সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল প্রথা তুলে দেয়৷ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারও কেন্দ্রীয় আইনের দোহাই দিয়ে এ রাজ্যে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ–ফেল প্রথা তুলে দেয়৷ ফলে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের শিক্ষার মূলোচ্ছেদ প্রতিহত করতে প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল প্রথা চালুর দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকে এবং তীব্র আকার ধারণ করে৷ বিশেষ করে প্রথম শ্রেণি থেকেই পাশ–ফেল চালুর দাবিতে গত ১৭ জুলাই যে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়, তা ব্যাপক অংশের মানুষের সমর্থন পায়৷ এরই চাপে রাজ্য সরকার যখন পাশ–ফেল চালুর কথা ঘোষণা করেছে, তখন সিপিএম, সিপিআই প্রভৃতি বামপন্থী নামধারী দলগুলির বিশ্বাসঘাতক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে প্রাথমিক স্তরে পাশ–ফেল চালুর বিরোধিতা করে তৃণমূল সরকারকে আরএসএস ‘জুজুর’ ভয় দেখিয়ে পাশ–ফেল চালু না করার যে প্ররোচনা দেওয়া হল, তা এ রাজ্যের জনসাধারণের প্রতি চরম প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা৷ প্রাথমিক স্তরে পাশ–ফেল তুলে দিয়ে শিক্ষার বনিয়াদ ধ্বংস করার জন্য শাসক–শোষক শ্রেণি যে চক্রান্ত করছে, তাকে রূপদানের ক্ষেত্রে সিপিএম–কংগ্রেস–বিজেপির কোনও তফাৎ নেই৷ আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি এবং এই শিক্ষাবর্ষেই প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ–ফেল পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানাচ্ছি৷’’