দিল্লির কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে দেশব্যাপী সমস্ত রাজ্যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায়, ব্লকে ব্লকেও আন্দোলনের ঝাণ্ডা নিয়ে ধর্নামঞ্চে সামিল অল ইন্ডিয়া কিষান খেতমজদুর সংগঠন (এআইকেকেএমএস)। ধর্নামঞ্চের সংখ্যাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। ধর্নাস্থলে এসে বহু মানুষ, বহু সামাজিক সংগঠন সংহতি জানিয়ে যাচ্ছেন। ১৪-১৫ ডিসেম্বর কলকাতায় এসপ্ল্যানেডের ওয়াই চ্যানেলে ধর্নামঞ্চের উদ্বোধন করেন সংগঠনের রাজ্য নেতা কমরেড গোপাল বিশ্বাস। এই অবস্থানে এসে সংহতি জানায় বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠন অ্যাবেকাও। যে বিদ্যুৎ আইন (সংশোধনী)-২০২০ বাতিলের দাবিতে অ্যাবেকা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করছে, দিল্লির কৃষক আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি সেই আইন প্রত্যাহার। কারণ এই আইনে বিদ্যুৎকে পরিষেবার পরিবর্তে পণ্য করা হয়েছে। ফলে দাম বাড়বে মাত্রাছাড়া। সঙ্গত কারণেই আন্দোলনে কৃষক-বিদ্যুৎগ্রাহক মৈত্রী গড়ে উঠছে।
বাঁকুড়া : সংগঠনের বাঁকুড়া জেলা কমিটি শহরের কেন্দ্রস্থল মাচানতলায় ১০-১২ ডিসেম্বর প্রতিবাদী ধর্নামঞ্চ চালায়। বাঁকুড়া শহর ও পার্শ্ববর্তী দুটি ব্লক, শালতোড়া, বড়জোড়া, ওন্দা, বিষুiরপুর, সিমলিপাল ও সারেঙ্গা থেকে সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা ধর্নামঞ্চে যোগ দেন। বক্তব্য রাখেন জেলা সভাপতি কমরেড দিলীপ কুণ্ডু, বিদ্যুৎ শীট সহ অন্যান্য কৃষক নেতৃবৃন্দ। কৃষক আন্দোলনের উপর রচিত সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সংহতি জানায় বাঁকুড়া নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ, ডিএসও-র বাঁকুড়া জেলা কমিটি। সংগঠনের জেলা সম্পাদক কমরেড তারাশঙ্কর গোপের নেতৃত্বে ১০-১২ ডিসেম্বর মহকুমা শহর খাতড়ায় অপর একটি ধর্নামঞ্চ হয়। রানীবাঁধ, হীড়বাঁধ, খাতড়া, ইন্দপুরের কৃষকরা এতে যোগ দেন। বক্তব্য রাখেন কমরেড মানিক মহাপাত্র, বৈদ্যনাথ মণ্ডল, গৌতম মণ্ডল, সদানন্দ মণ্ডল সহ বিভিন্ন নেতৃত্ব।
মুর্শিদাবাদ : ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার ১৫টি জায়গায় এবং ১৪ ডিসেম্বর আরও ৭টি জায়গায় ধর্না অনুষ্ঠিত হয়। ভগবানগোলা, সুতি, হরিহরপাড়া, ইসলামপুর, বেলডাঙ্গা, লোচনপুর, চোঁয়া, রানিনগর সহ সব ধর্নাস্থলেই কৃষক নেতারা আন্দোলনকে রাজপথ থেকে খেতেখামারে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। কৃষি আইনের প্রতিলিপি পোড়ানো হয়।
পশ্চিম বর্ধমান : ১০ ডিসেম্বর লাউদোহায় সারাদিনব্যাপী ধর্না চলে। ১৪ ডিসেম্বর আসানসোলের ধর্নায় সংহতি জানান গুরুদুয়ারা প্রবন্ধ কমিটির বার্নপুর শাখার সম্পাদক সুরেন্দ্র সিংহ ও সঞ্চালক পরমজিৎ সিং। সংহতি জানায় অধ্যাপক সংহতি মঞ্চ। মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআরএসের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপিকা শিপ্রা ভট্টাচার্য।
উত্তর ২৪ পরগণা : ১০-১২ ডিসেম্বর হাবড়ার ধর্নামঞ্চ উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ পরিমল হালদার। এই ধর্নায় প্রগ্রেস সায়েন্স ফোরামের পক্ষ থেকে সভাপতি পার্থ শিকদার ও অফিস সম্পাদক চয়নিকা দেবনাথ সংগঠনের বিশিষ্ট নেতা গোপাল বিশ্বাসকে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধনা জানান। ব্যারাকপুর স্টেশন চত্বরে ধর্নায় বহু মানুষ যোগ দেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগণা : জয়নগর ২ নং ব্লকের প্রিয়র মোড়ের ধর্নায় বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিধায়ক জয়কৃষ্ণ হালদার। রায়দিঘী বাসস্ট্যান্ডে কয়েকদিন ধরে ধর্না হয়। ধোসা ও ভাঙড়েও ধর্না অনুষ্ঠিত হয়।
হাওড়া : ২৮ নভেম্বর হাওড়ার বাগনানে কৃষকদের মিছিল ও প্রতিবাদী সভা হয়। ৬-৭ ডিসেম্বর বাগনান থানা এলাকায় ব্যাপক প্রচার করা হয়। ৭ ডিসেম্বর শ্যামপুর মাণ্ডিতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর ধর্না চলে উলুবেড়িয়া শহরে।
পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাণকেন্দ্র শহরের কার্জন গেটে ১০ ডিসেম্বর ধর্নামঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। বীরভূম জেলার মুরারই, বোলপুর, সিউড়ি শহর ও সিউড়ি ২নং ব্লকে ধরনা হয়। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে কৃষক সংহতি মঞ্চের ধর্নায় বক্তব্য রাখেন কৃষিবিজ্ঞানী ডঃ মৃদুল দাস সহ কৃষক নেতৃবৃন্দ। মঞ্চের পক্ষ থেকে ১৪ ডিসেম্বর ডি এম দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুরে ৩ দিন ধরে ধর্না চলে। মেদিনীপুর শহরে ১০ ডিসেম্বর লাঙল হাতে বিক্ষোভ দেখায় এআইকেকেএমএস। দার্জিলিং-এর শিলিগুড়ি পোস্ট অফিস মোড়ে ধর্না হয়। শিবমন্দিরে ডিএসও-র পক্ষ থেকে মশাল মিছিল করা হয়। কোচবিহার শহরে ধর্নায় বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাংসদ ও এআইকেকেএমএসের নেতা কমরেড দেবেন্দ্রনাথ বর্মন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মেখলিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডেও ধর্না হয়। আলিপুরদুয়ারে ডিএম অফিসের সামনে অবস্থানে বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতা তরণী রায়। জলপাইগুড়ি শহরের সমাজপাড়া মোড়ে ধর্না মঞ্চে বক্তব্য রাখেন কৃষক নেতা হরিভক্ত সর্দার। উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদীঘির দোমোহনায় ধর্নামঞ্চ হয়। মালদা জেলার গাজলের বিদ্রোহী মোড়ে ধর্না হয়। সর্বত্র নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের গণকমিটি গড়ে তুলে আন্দোলনকে আরও বিস্তৃত ও দীর্ঘস্থায়ী করার আহ্বান জানান।
পশ্চিম মেদিনীপুর : ১০ ডিসেম্বর মেদিনীপুর শহরে লাঙল হাতে বিক্ষোভ দেখায় এআইকেকেএমএস। কৃষক ধর্নামঞ্চে কৃষক নেতাদের হাতে পুষ্পস্তবক দিয়ে সংবর্ধিত করেন সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতি এবং এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটি।
দার্জিলিং : শিলিগুড়ি পোস্ট অফিস মোড়ে ধর্না হয়। শিবমন্দিরে ডিএসও-র পক্ষ থেকে মশাল মিছিল করা হয়।
কোচবিহার : কোচবিহার শহরে ধর্নায় বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন সাংসদ ও কেকেএমএসের নেতা দেবেন্দ্রনাথ বর্মন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মেখলিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডেও ধর্না হয়।
উত্তর দিনাজপুর : করণদীঘির দোমোহনায় ধর্নামঞ্চ হয়।
মালদা : গাজলের বিদ্রোহী মোড়ে ধর্না হয়।