দুনিয়ার আর পাঁচটা পুঁজিবাদী দেশের মতো ফ্রান্সেও সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা চূড়ান্ত অবহেলার শিকার৷ সেখানে একের পর এক ক্ষমতাসীন সরকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ ক্রমাগত কমিয়ে চলেছে৷ এদিকে করোনা অতিমারি গোটা দুনিয়া জুড়েই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছাড়া মানুষের গত্যন্তর নেই৷ ফ্রান্সও তার ব্যতিক্রম নয়৷
এই অবস্থায় সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থা রক্ষার দাবিতে পথে নামলেন ফ্রান্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ গত ১৬ জুন চিকিৎসক–নার্স সহ সে দেশের লক্ষ লক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী গোটা দেশ জুড়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখান৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের দুটি সংগঠনের উদ্যোগে সংগঠিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছে ফ্রান্সের শ্রমিক সংগঠনগুলি, যাদের মধ্যে রয়েছে সেখানকার সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন জেনারেল কনফেডারেশন অফ লেবার (সিজিটি)–ও৷
এদিন শুধু রাজধানী প্যারিসেই পথে নামেন লক্ষাধিক স্বাস্থ্যকর্মী৷ মার্সেইল, তুলুস ইত্যাদি শহরগুলিতেও হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী বিক্ষোভ দেখান৷ সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিকল্পিত অবহেলা ও ব্যয়বরাদ্দ কমানোর জন্য ইমানুয়েল ম্যাকরঁ সরকারের নিন্দায় সরব হন বিক্ষোভকারীরা৷
উদ্যোক্তা সংগঠনের এক মুখপাত্র বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ও চিকিৎসা–উপকরণের অভাবে রোগীদের ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না৷ সমস্যার কথা জানিয়ে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন তাঁরা৷ অথচ হেলদোল নেই সরকারের৷
বছরখানেক ধরেই স্বাস্থ্যকর্মীদের বিক্ষোভ চলছে ফ্রান্সে৷ গত বছর প্রায় আড়াইশোটি সরকারি হাসপাতালের দুর্ঘটনা ও জরুরি বিভাগের কর্মীরা ধর্মঘট করেছিলেন৷ কর্মীসংখ্যা, হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ও চিকিৎসার অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর দাবি ছাড়াও বেতনবৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছিলেন তাঁরা৷ দীর্ঘ আন্দোলনের চাপে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গত মার্চ মাসে বেশ কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে ধর্মঘট ওঠে৷ কিন্তু আজও সেইসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি ম্যাকরঁ সরকার৷ তাঁকে সে কথা মনে করিয়ে দিতে এবং দেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নের দাবিতে তাই আবার পথে নেমেছেন ফ্রান্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তাঁদের এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন সেখানকার বামপন্থী সংগঠনগুলিও৷ তাঁদের অনেকেই এ দিন বিক্ষোভকারীদের পায়ে পা মিলিয়েছেন৷
(সূত্র : পিপলস ডিসপ্যাচ, ১৭ জুন, ’২০ সংখ্যা)