বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ১৪.০৪.২০ তারিখে মূখ্যমন্ত্রীর নিকট নিম্ন লিখিত দাবি করেন।
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
নবান্ন, হাওড়া
বিষয়-COVID 19 প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে আমাদের পরামর্শ ও দাবি
মহাশয়া,
করোনা প্রতিরোধে বর্তমান স্তরে আমাদের দলের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত পরামর্শ ও দাবি আপনার কাছে তুলে ধরতে চাইছি –
(১) পরীক্ষার পরিকাঠামো – বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন বেশকিছু রাজ্যে করোনা কম্যুনিটি সংক্রমনের পর্যায়ে পৌঁছেছে – তা কেন্দ্রীয় সরকার মানুক বা না মানুক – তখন এই রাজ্য যত বেশি সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা করে লক্ষ্যহীন করোনা বাহকদের কোয়ারান্টাইনে রেখে কম্যুনিটি সংক্রমণ প্রতিরোধ করা এবং লক্ষণযুক্তদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। অত্যন্ত জরুরী এই কাজের জন্য রেপিড টেস্ট করার পরিকাঠামো প্রয়োজন, যার ব্যবস্থা এখনো এই রাজ্যে হয়নি। আমরা অবিলম্বে রেপিড টেস্টের পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবি করছি।
অন্যদিকে আই সি এম আর-এর রাজ্য প্রতিনিধি সাম্প্রতি বলেছেন, পরীক্ষার কিট পর্যাপ্ত (২৭৫০০টি) থাকা সত্বেও পরীক্ষা বেশি হচ্ছে না। তিনি আরো বলেছেন, এই রাজ্যের জনঘনত্ব অনুযায়ী যত পরীক্ষা হওয়ার কথা তার তুলনায় অনেক কম পরীক্ষা হচ্ছে। তিনি এও বলেছেন, গত ৩-৪ দিন ধরে মাত্র ৮০-৯০ টি স্যাম্পল পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ এই উদ্বেগজনক অবস্থাতেও সরকারি পরিকাঠামো অব্যবহুত থেকে যাচ্ছে। পাশাপাশি সকলেই জানেন, যেকোনো বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল, যা গরিব মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের দাবি, পরীক্ষার জন্য নিয়োজিত সরকারি পরিকাঠামোর সম্পূর্ণ ব্যবহার হোক এবং সরকারি উদ্যোগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আরো ল্যাব গড়ে তোলা হোক।
(২) ডাক্তার সহ সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্য কর্মীদের নির্দিষ্ট মানের সুরক্ষা -PPF, মাস্ক, গ্লাভ সহ নানা সুরক্ষা ব্যবস্থা ডাক্তার, নার্স, আশা, ঊষা, পৌরস্বাস্থ্যকর্মী সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের উপযুক্ত সংখ্যায় সরবরাহ না করার ফলে অনেকেই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তার ফলে বেশ কয়েকটি হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারান্টাইনে পাঠাতে হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই PPE সহ সমস্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার দাবি করছি।
এও আপনার অগোচরে নেই যে, হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী তাদের বাসস্থানেও আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের দ্বারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমরা বাসস্থানেও তাদের সুরক্ষার দাবি করছি।
(৩) গরীব মানুষের জন্য সরকারি সাহায্য – অটো, মোটর ভ্যান, টোটো রিক্সা চালক, পরিচারিকা, বেসরকারি পরিবহনে নিযুক্ত কর্মী, কর্মহীন দিনমজুর, চা- বাগানের শ্রমিক, ফল-ব্যবসায়ী এবং সমস্ত ক্ষুদ্র ও মরসুমি দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ী সহ গরিব মানুষের জন্য রেশন সমেত যা যা সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা হয়েছে তা অপ্রতুল, গুণমানের নিম্ন এবং সর্বোপরি বিলি বন্টনের ক্ষেত্রে দলবাজিতে দুষ্ট। বিডিও, এসডিও, ডিএম, পুলিশের এসব ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করার কথা বারবার বলা সত্ত্বেও তা তারা করছেন না। একে তো আরও বেশি সরকারি নজরদারি প্রয়োজন। আমাদের দাবি, মাথাপিছু মাসিক চাল ও আটা মিলিয়ে ১২ কেজি খাদ্য দেওয়া হোক এবং তার সঙ্গে কিছু আলু ও ভোজ্য তেল দেওয়ার ব্যবস্থা হোক।
যেসব গরীব মানুষের নানা কারণে রেশন কার্ড নেই তারা কোনভাবেই রেশন পাচ্ছেন না। সরকার ঘোষিত স্লিপও ঠিকমতো বিলি হচ্ছে না। তাদের রেশন দেওয়ারও ব্যবস্থা হোক।
(৪) পরিযায়ী শ্রমিক – পরিযায়ী শ্রমিকরা যারা বিভিন্ন রাজ্যে আটকে আছেন তারা বহু ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থায় খাদ্যদ্রব্য পাচ্ছেন না। তাদের খাদ্য দ্রব্য পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার গুলির সঙ্গে আরও উদ্যোগ নিয়ে কথাবার্তা বলা প্রয়োজন। এছাড়া এই রাজ্যের এক জেলার শ্রমজীবী কিছু মানুষ অন্য জেলায় আটকে রয়েছেন। তাদেরও ভয়াবহ অবস্থা। তাদের নিজস্ব বাসস্থানে ফেরার ব্যবস্থা অথবা যেখানে আছেন সেখানে লকডাউন চলাকালীন সময়ে উপযুক্ত খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে।
(৫) গ্রামীণ ডাক্তার (ইনফরমাল হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) – আপনি জানেন, বহু গ্রামীণ মানুষ এই সমস্ত ডাক্তারদের কাছে যে চিকিৎসা করাতে পারতেন এবং তারাও এর দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন — লকডাউন চলার ফলে দীর্ঘদিন তা সম্ভব হচ্ছে না। হাসপাতালেও নানা কারণে এই সময় অন্যান্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত। বিষয়টি উপযুক্ত সমাধানের জন্য সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
(৬) এই সময়ে উত্তরবঙ্গ সহ যে সমস্ত জায়গায় ঝড়বৃষ্টিতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সরকারি উদ্যোগে তাদের উপযুক্ত সাহায্য করতে হবে।
ধন্যবাদান্তে
চন্ডীদাস ভট্টাচার্য
সম্পাদক,
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকমিটি
এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)