বরাবরের মতো এবারও সংবাদ মাধ্যম ১৭ নভেম্বর সমাবেশকে ব্ল্যাক আউট করেছে৷ তার ফাঁক–ফোকর গলেও যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তার কিছু আমরা তুলে দিলাম৷
ভিড় টানল এস ইউ সি
আনন্দবাজার পত্রিকা (১৮.১১.’১৭) : এক সপ্তাহ আগে একই জায়গায় কেন্দ্রীয় শাসক দলের সমাবেশ ঘিরে প্রচার হয়েছিল বিস্তর৷ সেই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়েই শুক্রবার সমাবেশের বহরে বিজেপিকে টেক্কা দিল এস ইউ সি৷ যাদের হাতে ক্ষমতা দূরে থাক, রাজ্যে এখন এক জন বিধায়কও নেই৷ নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে এস ইউ সি–র সমাবেশে বক্তা ছিলেন প্রভাস ঘোষ, মানিক মুখোপাধ্যায়েরা৷ রানি রাসমণির তিনটি লেন ছাপিয়ে ভিড় ছিল ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত৷ রেড রোডের ধারে সার দিয়ে ছিল বাস, ভাড়ার গাড়ি৷ নিবিড় প্রচার ও তার পরে সমাবেশের চেহারা দেখে তৃপ্ত বহু বাম কর্মীই৷
ইতিহাস মোছার চেষ্টা চলছে
আজকালের প্রতিবেদন (১৮.১১.’১৭) : নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে কলকাতায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ করল এস ইউ সি আই৷ শুক্রবার এই সভা উপলক্ষে সারা দেশ থেকে এস ইউ সি আইয়ের কর্মী ও নেতারা যোগ দেন৷ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও এদিনের সভায় লোকসমাগম ছিল যথেষ্ট৷ এস ইউ সি আইয়ের নেতারা ছাড়াও এদিনের সভায় বক্তা হিসাবে ছিলেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)–র সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী৷ নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীও এদিনের সভায় ছিলেন৷
এ বিষয়ে এস ইউ সি আইয়ের নেতা ডাঃ তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা অনেককেই এদিন আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম৷ সেই হিসেবেই বিভাসবাবু এসেছিলেন’৷
এদিনের সভায় মূল বক্তা দলের সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিযোগ করে বলেন, ‘পুঁজিবাদী শক্তিরা এই ঐতিহাসিক বিপ্লবের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করছে৷ লেনিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত ইউনিয়নে হওয়া এই নভেম্বর বিপ্লব দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে শ্রেণিহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়৷ পরে স্ট্যালিন যার দায়িত্ব নেন৷ এই বিপ্লব বিংশ শতাব্দীতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ পরবর্তীকালে যে ক’টি স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে তাতে সাহায্য করেছে এই সমাজতন্ত্র৷ গান্ধীজি থেকে নেহেরু, সকলেই এই নভেম্বর বিপ্লবকে সমর্থন করেছেন’৷
তাঁর অভিযোগ, ‘এই দেশে গরিব মানুষ ভোটে দাঁড়াতে পারেন না৷ জনপ্রতিনিধিদের ভোটের পর আর দেখা পাওয়া যায় না৷ যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি করার জন্য যেটা করা দরকার ছিল সেটা করে দেখিয়েছেন আমাদের পার্টির প্রতিষ্ঠাতা শিবদাস ঘোষ’৷
কর্মীদের উদ্দেশ্য প্রভাসবাবু বলেন, ‘দল যেমন ভোটে অংশগ্রহণ করবে, তেমনি লড়াই ও গণ আন্দোলনও চালিয়ে যাবে৷ চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করতে গেলে সেখানে জয়–পরাজয় থাকেই৷ এটা ইতিহাস৷ …’ সভায় বক্তব্য পেশ করেন হরিয়ানার রাজ্য সম্পাদক সত্যবান এবং কর্ণাটক রাজ্যের সম্পাদক কে রাধাকৃষ্ণ৷
বৃষ্টিতেই সমাবেশ এস ইউ সি–র
বর্তমান (১৮.১১.’১৭) : প্রকৃতি অনুকূল নয়, তাই শহিদ মিনার ময়দান থেকে সভা সরাতে বাধ্য হয়েছিল এস ইউ সি৷ কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টির হাত থেকে রেহাই পেল না তাদের নভেম্বর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান৷ একনাগাড়ে বৃষ্টি চললেও সমস্ত জেলা থেকে তো বটেই, দেশের ২৩টি রাজ্য থেকে আসা এস ইউ সি নেতা–কর্মী–সমর্থক খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে নেতৃত্বের ভাষণ শুনলেন৷ সংসদীয় ক্ষমতায় না থেকে প্রশাসনিক নির্ভরতা ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে এই জনসভা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের (বাসদ) মার্কসবাদী নেতা মুবিনুল হায়দার চৌধুরী৷
এস ইউ সি–র সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ বলেন, ৩৪ বছরে বামপন্থী আদর্শের ক্ষতি হয়েছে৷ তাই মানুষ বামপন্থার প্রতি আকর্ষণ হারাচ্ছিল৷ কিন্তু নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপনে কমিটি গড়ে রাজ্যে রাজ্যে নানা ধরনের প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল৷ সেখানে মানুষের সাড়া মিলেছে বলেই প্রভাসবাবুর দাবি৷ তিনি বলেন, এদিনের জমায়েতে তারই প্রতিফলন পড়েছে৷ এই জনসভায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে দলীয় কর্মীরা যোগ দেন৷ উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুর দুয়ার ও জলপাইগুড়ি এই চার জেলা থেকে ট্রেন ভাড়া করে সাড়ে চার হাজার কর্মী–সমর্থক কলকাতা স্টেশন হয়ে ধর্মতলার সভায় এসেছিলেন বলে দলের তরফে জানানো হয়৷