৭ থেকে ১৭ নভেম্বর ১৯১৭৷ মানুষের দ্বারা মানুষের শোষণের অবসানের বজ্র নির্ঘোষে কেঁপে উঠেছিল রাশিয়ার পুঁজিবাদী শাসন, শোষণের মসনদ৷ শতবর্ষ পরেও পৃথিবী জুড়েই মেহনতি মানুষ আশায় আবেগে উদ্বেলিত– সেই দুনিয়া কাঁপানো দশ দিনকে গভীর মর্যাদায় পালনের জন্য৷ ভারতের বুকে গরিব খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র দল এস ইউ সি আই (সি) ডাক দিয়েছে ১৭ নভেম্বর কলকাতার শহিদ মিনার ময়দানে লক্ষাধিক মানুষের কেন্দ্রীয় সমাবেশের৷ হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে শোষণমুক্ত ভারত গড়ার দৃপ্ত স্লোগানে সেদিন মুখরিত হবে বহু আন্দোলন–লড়াইয়ের সাক্ষী শহর কলকাতা৷
উত্তর থেকে দক্ষিণ ভারতের নানা শহরের দেওয়ালে এস ইউ সি আই (সি) কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রমে দেওয়ালে দেওয়ালে রঙ–তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন ‘শহিদ মিনার চলুন’– এই আহ্বান৷ মেহনতি মানুষের পবিত্র লাল ঝান্ডা আর মহান সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতা লেনিন–স্ট্যালিনের ছবি দেওয়ালে আঁকতে দেখে পথচলতি মানুষ, গরিব খেটেখাওয়া মানুষ দাঁড়িয়ে পড়ছেন৷ প্রশ্ণ করছেন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছেন এই মানবজাতিকে সমাজতন্ত্র কী সামাজিক সম্পদ দিয়েছিল সেই কথাগুলি৷
অনেকেরই প্রশ্ন এত মানুষ কীভাবে আসবেন? সব শুনে তাঁরা বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের হাত৷ যেমন উত্তরবঙ্গ থেকে অসংখ্য মানুষকে নিয়ে স্পেশ্যাল ট্রেন রওনা হবে কলকাতার শহিদ মিনার ময়দানের সমাবেশে যোগ দিতে একথা শুনে কোচবিহার জেলার দিনহাটাতে এক বয়স্ক্ নাগরিক খুশি হয়ে বাড়িয়ে দিয়েছেন ৫০০ টাকা৷ বলেছেন, ‘পারলে আরও দিতাম, শুধু তাই নয় শরীর খারাপ না থাকলে আমিও যেতাম তোমাদের সাথে৷ কিন্তু এই মহতী উদ্যোগের সাথে আমিও আছি৷’ সারা দেশজুড়ে যে প্রস্তুতি চলছে তাতে সামিল হয়েছেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ৷ নানা জায়গায় হচ্ছে অসংখ্য সভা৷ উত্তরবঙ্গের চা–বাগান শ্রমিকরাও তার বাইরে নয়৷ এমনই এক প্রস্তুতি সভার ডাক দিয়েছিল বীরপাড়া–মাদারিহাট নভেম্বর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন কমিটি, ২৯ অক্টোবর শিশুবাড়ি হাইস্কুলে৷ রামঝোরা, দলগাঁও, মুজনাই, চামুর্চ্চির চুনাভাট্টি চা–বাগানের শ্রমিকরা উপস্থিত হয়েছিলেন আলোচনা শুনতে৷ তাঁরা তৈরি হচ্ছেন কলকাতার সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য৷
১৯১৭ সালের সেই বিপ্লবকে বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণ আজও ভোলেননি৷ আজ পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদের কল্যাণে বিশ্বজুড়ে হাহাকার, দারিদ্র, বেকারি৷ দুনিয়াজুড়েই মানুষের মধ্যে চূড়ান্ত হতাশা, মানসিক অবসাদ, পারিবারিক বন্ধন ছিন্নপ্রায়, অপসংসৃক্তির বেনো জল মনুষ্যত্বকেই কলুষিত করছে৷ এই সময় বিশ্ব জুড়ে মানুষ স্মরণ করছে, শতবর্ষ আগে এই সমস্ত সমস্যার মূলে আঘাত করে মার্কসবাদের ভিত্তিতে কেমন করে মহান লেনিনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক সমাজ৷
ভারতবর্ষের শোষিত মানুষের সামনেও আজ এই পথই স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷ সারা দেশজুড়ে নারীর লাঞ্ছনা, অবমাননা, বিনা চিকিৎসায় শিশুমৃত্যু, কৃষকের আত্মহত্যা, অশিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য হীনতা– সব কিছু মিলে আমরা যেন এক নেই রাজ্যের বাসিন্দাতে পরিণত হয়েছি৷ কিন্তু সমস্যাই তো শেষ কথা নয়, তার সমাধানের যে পথ দেখিয়ে গেছেন মহান লেনিন, এগিয়ে যেতে হবে সেই পথে৷ এ দেশের মাটিতে মার্কসবাদ–লেনিনবাদকে বিশেষীকৃত রূপে প্রতিষ্ঠা করে বিপ্লবের পথ নির্দেশ দিয়েছেন এ যুগের মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ৷ ভারতের শোষিত মানুষ তাই মুক্তি পথের দিশার জন্য তাকিয়ে আছে তাঁর প্রদর্শিত পথের দিকেই৷
১৭ নভেম্বর শহিদ মিনার জুড়ে লক্ষাধিক মানুষের হাতে ধরা হাজার হাজার লাল পতাকা আর মার্কস–এঙ্গেলস–লেনিন-মাও সে তুঙ–শিবদাস ঘোষের প্রতিকৃতি বঞ্চিত মানুষকে দেবে লড়াইয়ের প্রেরণা৷ যে শিশু পুষ্টি–শিক্ষা–স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত, যে নারীর সম্ভ্রম লুন্ঠিত, যে বেকার যুবক একটা কাজের আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছে, যে কৃষক ঋণের জালে বাঁধা পড়ে আর্তনাদ করছে, যে শ্রমিক তার বেঁচে থাকার মতো মজুরিটুকুও পায় না– আসুন তাদের শক্তি দিই ওই লাল পতাকা ধরা শক্ত মুঠিগুলোর শরিক করে নিয়ে৷ তাদেরশোনাই কমরেড শিবদাস ঘোষের হাতে গড়া দল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষের উদাত্ত আহ্বান, যা লড়াইয়ে প্রেরণা দেবে৷ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে তীব্র করবে৷