৯ মে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সারা বাংলা সার্ধশত রবীন্দ্র জন্মবর্ষ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে প্রকাশিত হল প্রবন্ধ সংকলন ‘রবীন্দ্রনাথঃ নানা আঙ্গিকে– পর্বান্তরে’। গ্রন্থটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপিকা রঙ্গনা ব্যানার্জি। উপস্থিত ছিলেন কমিটির সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডঃ গার্গী দাস বক্সী, বিশিষ্ট চিকিৎসক কিসান প্রধান ও তরুণ মণ্ডল, অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর প্রমুখ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী মহুয়া রায়, অহনা সেন। আবৃত্তি পরিবেশন করেন অনুশ্রী নস্কর। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কমিটির কোষাধ্যক্ষ ডাঃ অশোক সামন্ত।
অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী কিছু ভাবনা সংবলিত একটি ফোল্ডার প্রকাশ করে চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য বলেন, রবীন্দ্রনাথ যে ভারত চেয়েছিলেন সে ভারতকে আমরা পাইনি। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে আজ যে পরস্পর বিচ্ছেদ ও বিদ্রোহ উত্তাল হয়ে উঠেছে, যদি দেখতেম, এর সহজ নিষ্কৃতি আছে তবে চুপ করেই থাকতেম। কিন্তু তার মূল প্রবেশ করেছে গভীরে, সহজে এর সমাধান হবে না। …এখন চুপ করে থাকবার সময় নয়। আমাদের ভাবতে হবে, বড়ো করে ভাবতে হবে– ভাবাবিষ্ট আর্দ্রচিত্তে নয়, বুদ্ধিপূর্বক চিন্তা করে। দেশের সম্বন্ধে, সমস্ত মানবসভ্যতার ভবিষ্যত সম্বন্ধে আমাদের ভাবতে হবে। ভাববার কারণ হয়েছে।’ আজ কবির আশঙ্কার ‘ভাঙন ধরা নদীর কূল’ যে একেবারে ভেঙে ধসে পড়ছে, তার প্রমাণ মেলে প্রতিনিয়ত। ভয়াবহ দারিদ্র আর কর্মহীনতায় মানুষ মরছে, অন্য দিকে মেরে ফেলা হচ্ছে মনুষ্যত্ব-নীতি নৈতিকতা-সুস্থ চিন্তাকে। যারা মারছেন, তাদের অন্যায় শাসন-শোষণ টিকিয়ে রাখার একমাত্র শক্তি মানুষে মানুষে বিভেদ-বিদ্বেষ। তাই ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত পরিচয়ের দেওয়াল তুলে দেশজুড়ে তারা আটকাতে চাইছে মানুষের চেতনার জাগরণ, রুখতে চাইছে প্রতিরোধ।
এর মধ্যেই আসে পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ। চলে অসংখ্য রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠান। আড়ম্বর-আয়োজনের অভাব চোখে পড়ে না, অভাব থেকে যায় উপলব্ধির। এই ভাঙনকালে দাঁড়িয়ে কী নিচ্ছি আমরা তাঁর থেকে? বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তানায়ক শিবদাস ঘোষ বলেছেন, ‘…রবীন্দ্রনাথের বাণী প্রচার করার তোমার তখনই অধিকার, যখন রবীন্দ্রনাথের বুকের বেদনাটা তুমি আজও বুকে বহন কর।’ রবীন্দ্রনাথকে যথার্থই শ্রদ্ধা জানাতে হলে শুধু কথায়-গানে-মালায় নয়, রবীন্দ্রচিন্তার সঠিক চর্চায়, সমকালীন সময়ের সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্য দিয়ে আজ তাঁকে স্মরণ করতে হবে।