৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনটিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবস হিসাবে পালন করার আহ্বান জানিয়ে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ২ ডিসেম্বর এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ৬ ডিসেম্বর এ দেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক দিন। ১৯৯২ সালের এই দিনটিতে ৪০০ বছরের এক ঐতিহাসিক সৌধকে উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনায় মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল এ দেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদকে শক্তিশালী করতে। জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিভেদ সৃষ্টি এবং নির্বাচনী স্বার্থে তা ব্যবহারের হীন উদ্দেশ্যে এই ধ্বংসকাণ্ড ঘটিয়েছিল এবং সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালিয়েছিল শাসক দল বিজেপি। এখনও একই ভাবে মিথ্যা অজুহাত তুলে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র চলছে।
সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক আক্রমণের ঘটনা ঘটছে, যা অত্যন্ত বেদনার। এ কথা ঠিক, সে দেশেও সাম্প্রদায়িক শক্তি আছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক অতীতে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানে মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে সকল স্তরের জনসাধারণ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি সেই গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে নষ্ট করতে উদ্যত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তি সাম্প্রদায়িকতার এই ক্ষতিকর উত্থান প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।
ভারতে বিজেপি শুধু হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ঘটাচ্ছে তাই নয়, প্রাদেশিকতা-জাত-পাত-উপজাতি ও বর্ণগত বিভাজন ও বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলছে। বিজেপি শাসিত মণিপুর এখন বীভৎস জাতিদাঙ্গায় রক্তস্রোতে ভাসছে। এই সাম্প্রদায়িকতা অবিভক্ত ভারতবর্ষে নবজাগরণের মনীষীদের এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর যোদ্ধাদের স্বপ্নকেও ধূলিসাৎ করছে এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের যতটুকু অবশিষ্ট আছে তাকেও নিশ্চিহ্ন করছে। মনে রাখতে হবে ভারত এবং বাংলাদেশ– দুই দেশেরই সাম্প্রদায়িক শক্তি একে অপরের পরিপূরক এবং একে অপরকে শক্তিশালী করছে। যখন চরম দারিদ্র, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, ছাঁটাই ইত্যাদি পুঁজিবাদসৃষ্ট সংকটে জনজীবন চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত এবং এই সবের বিরুদ্ধে সকল সম্প্রদায়ের শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম একান্ত প্রয়োজন, তখন সাম্প্রদায়িকতা সেই ঐক্যকেই বিনষ্ট করছে। দুই দেশের ক্ষেত্রেই কথাটি সত্য।
এ দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির উগ্র ধর্মান্ধতার যে কুৎসিত রাজনীতি শোষিত মানুষের ঐক্যকে বিনষ্ট করছে এবং যে ভাবে ক্ষমতসীন দলের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করছে, আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ করছি। আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি সমস্ত সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষের স্বার্থ এক। সরকার ও শাসক শ্রেণির জনস্বার্থবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আদর্শভিত্তিক গণআন্দোলনের পথেই আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যথাযথ লড়াই লড়তে পারি। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত-অঞ্চল নির্বিশেষে সমস্ত দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণকে এগিয়ে এসে সেই গণআন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
আগামী ৬ ডিসেম্বর দিনটিতে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির সমস্ত রকম ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে প্রতিরোধ সংগ্রামের শপথ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।