সংসদীয় দলগুলি প্রায় সবাই বন্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পসংস্থা থেকে কেউ শত কোটি, কেউ সহস্র কোটি টাকা নিয়েছে। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নিয়েছে বিজেপি। দ্বিতীয় স্থানে রাজ্যের শাসক তৃণমূল। তারপরে কংগ্রেস। ২০১৯ থেকে ‘২৪ পর্যন্ত বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া টাকার যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ শিল্পসংস্থাই বড় দলগুলির প্রায় সবাইকে টাকা দিয়েছে– কাউকে বেশি, কাউকে কম। এই হিসেবে ১২,৭৬৯ কোটি টাকা চাঁদার প্রায় অর্ধেক, ৬০৬০ কোটি চাঁদা পেয়েছে বিজেপি। ১৬১০ কোটি পেয়েছে তৃণমূল, কংগ্রেস পেয়েছে ১৪২২ কোটি। অর্থাৎ যারা কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতায় রয়েছে তারা বেশি পেয়েছে, অন্যরা কম। এ থেকে স্পষ্ট যারা ক্ষমতায় রয়েছে, পুঁজিপতিরা যেমন তাদের টাকা দেয়, তেমনই যারা সাইড লাইনে অপেক্ষা করছে, যে কোনও সময় ক্ষমতায় আসতে পারে, তাদেরও টাকা দেয়। যেমন লটারি ব্যবসার ‘মুকুটহীন সম্রাট’ স্যান্টিয়াগো মার্টিনের সংস্থা ফিউচার গেমিংয়ের কথাই ধরা যাক। এই সংস্থাটিই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে (১৩৬৮ কোটি টাকা)। এরা তৃণমূলকে দিয়েছে সব চেয়ে বেশি– ৫৪২ কোটি টাকা। উল্লেখ্য এ রাজ্যে ফিউচারের গেমিংয়ের লটারির রমরমা ব্যবসা। ফিউচার বিজেপিকে দিয়েছে ১০০ কোটি টাকা, কংগ্রেসকে ৫০ কোটি টাকা, তামিলনাড়ূর দল ডিএমকে পেয়েছে ৫০৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক বড় মাপের প্রকল্প তৈরির কাজে যুক্ত হায়দরাবাদের সংস্থা মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং রাজনৈতিক দলগুলিকে বন্ডে মোট ৯৮০ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। তার মধ্যে ৫৮৪ কোটি টাকা পেয়েছে বিজেপি। এদেরই শাখা সংস্থা ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার দিয়েছে ৮০ কোটি টাকা। বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছে বেশ কিছু বড় সরকারি প্রজেক্টের বরাত। বেদান্ত গোষ্ঠী বিজেপিকে দিয়েছে ২২৬.৬৫ কোটি, কংগ্রেসকে দিয়েছে ১০৪ কোটি টাকা।
এ বার আসা যাক এ রাজ্যে বিদ্যুতের একচেটিয়া ব্যবসা করা সিইএসসি তথা আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠীতে। এদের নানা শাখা কোম্পানি রয়েছে। সবগুলি মিলিয়ে তৃণমূলকে দিয়েছে ৪৪৪ কোটি টাকা। এদের বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানি হলদিয়া এনার্জি তৃণমূলকে দিয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। এদের শাখা কোম্পানি ধারিওয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার দিয়েছে ৯০ কোটি, পিসিবিএল দিয়েছে ৪০ কোটি, ক্রিসেন্ট পাওয়ার দিয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। এই টাকা দেওয়ার ফলটাও পশ্চিমবঙ্গবাসী জানেন। এর জন্য সারা দেশের মধ্যে এ রাজ্যেই বিদ্যুতের দাম সবচেয়ে বেশি। আবার কয়লার দাম অর্ধেক, এবং জিএসটি কমে ৫ শতাংশ হওয়ায় যেখানে বিদ্যুতের দাম অর্ধেক হতে পারে সেখানে দ্বিগুণ দাম জনগণের ঘাড় ভেঙে দিব্যি আদায় করে চলেছে সিইএসসি। আবার যেহেতু গোয়েঙ্কারা দেশ জুড়ে এবং বিদেশেও ব্যবসা করে তাই বিজেপিকেও তারা বঞ্চিত করেনি। হলদিয়া এনার্জি বিজেপিকে দিয়েছে ৮১ কোটি টাকা। আম্বানিদের রিলায়েন্স দিয়েছে একটু ঘুরপথে। টাকা দেওয়ার অঙ্কে তৃতীয় কুইক সাপ্লাই চেন নামে একটি সংস্থা যা রিলায়েন্সেরই খোলস সংস্থা বলে অভিযোগ উঠেছে, তারা বিজেপিকে দিয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা, শিবসেনাকে দিয়েছে ২৫ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে যে ৩টি দল এবং সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে যে ১০টি সংস্থা, তার তালিকা
(সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২২ মার্চ ২০২৪)
বিজেপিঃ মোট ৬০৬০ কোটি টাকা |
তৃণমূল কংগ্রেসঃ মোট ১৬১০ কোটি |
কংগ্রেসঃ মোট ১৪২২ কোটি টাকা
|
মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং ৫৮৪ কোটি কুইক সাপ্লাই চেন ৩৭৫ কোটি বেদান্ত ২২৬ কোটি ভারতী এয়ারটেল ১৯৭.৪ কোটি মদনলাল লিমিটেড ১৭৫.৫ কোটি ক্যাভেন্টার ফুড পার্ক ১৪৪.৫ কোটি ডিএলএফ ১৩০ কোটি বিড়লা কার্বন ১০৫ কোটি ফিউচার গেমিং ১০০ কোটি হলদিয়া এনার্জি ৮১ কোটি |
ফিউচার গেমিং ৫৪২ কোটি হলদিয়া এনার্জি ২৮১ কোটি ধারিওয়াল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ৯০কোটি এমকেজে এন্টারপ্রাইস ৪৫.৯ কোটি এভিস ট্রেডিং ৪৫.৫ কোটি আইএফবি অ্যাগ্রো ৪২ কোটি চেন্নাই গ্রিন উডস ৪০ কোটি পিসিবিএল লিমিটেড ৪০ কোটি প্রারম্ভ সিকিউরিটিজ ৩৮.৭৫ কোটি ক্রিসেন্ট পাওয়ার ৩৩ কোটি |
ওয়েস্টার্ন ইউপি পাওয়ার ১১০ কোটি বেদান্ত ১০৪ কোটি এমকেজে এন্টারপ্রাইস ৯১.৬ কোটি যশোদা সুপার স্পেশালিটি ৬৪ কোটি এভিস ট্রেডিং ৫৩ কোটি ফিউচার গেমিং ৫০ কোটি শাসমল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ৩৯ কোটি ঋত্বিক প্রজেক্টস ৩০ কোটি এসইপিসি পাওয়ার ৩০ কোটি সিদ্ধি ট্রেডিং ২২ কোটি |