Breaking News

৩ এপ্রিল রাজ্য জুড়ে আইন অমান্যের ডাক এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর

মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় ছাত্রীদের উপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে ১১ মার্চ সারা বাংলা প্রতিবাদ দিবসে পুরুলিয়ায় মিছিল।

দাবি আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা সহ সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও হুমকি সংস্কৃতি, বেকারি ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি রদ এবং সর্বনাশা জাতীয় শিক্ষানীতি ও তার কার্বন কপি রাজ্য শিক্ষানীতি বাতিল, কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে সার, বিদ্যুৎ, সহজ শর্তে ঋণ সহ উপযুক্ত আর্থিক সহায়তা, নয়া বিদ্যুৎ নীতি ও স্মার্ট মিটার বাতিল, ফসলের ন্যায্য মূল্য, সমস্ত বেকার ও খেতমজুরদের কাজ, অভয়া এবং মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানায় নিগৃহীত ছাত্রীদের ন্যায়বিচার।

বেকারি মূল্যবৃদ্ধি আর সীমাহীন দুর্নীতিতে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। চূড়ান্ত আর্থিক দুর্দশা দেশের কোটি কোটি মানুষকে অনাহার-অর্ধাহারের এমনকি আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে চরম দুর্নীতি। আর জি কর কাণ্ডে অভয়ার মর্মান্তিক মৃত্যু ও তার বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় গণআন্দোলন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতির ভয়ঙ্কর চেহারা প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। দুর্নীতি শুধু স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই নয়, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা কয়লা পাচার, গরু পাচার, শিক্ষকদের চাকরি নিয়ে দুর্নীতি-দলবাজি, রেশন, আবাস যোজনা দুর্নীতি, চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সহ পঞ্চায়েত, পৌরসভা থেকে শুরু করে সরকার ও প্রশাসনের সর্বস্তরে আকণ্ঠ চুরি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। মানুষের প্রতিবাদকে যে কোনও উপায়ে দাবিয়ে রাখার জন্য সরকারি দলের সীমাহীন সন্ত্রাস, হুমকি ও দৌরাত্ম্য আজ চুরি দুর্নীতির অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে।

গরিব নিম্ন মধ্যবিত্তের সন্তানদের শিক্ষা প্রায় উঠে যেতে বসেছে। প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষায় কার্যত নৈরাজ্য চলছে। রাজ্য সরকার ৮২০৭টি প্রাথমিক স্কুল তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি প্রাথমিক থেকে উচ্চতম স্তর পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধবংস করে গোটা শিক্ষাক্ষেত্রকে লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা লুঠের বাজারে পরিণত করেছে। শুধু তাই নয়, দেশের বুকে রামমোহন বিদ্যাসাগর জ্যোতিবারাও ফুলে, রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র-নজরুল-সুভাষচন্দ্র সহ নবজাগরণ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মনীষীদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে ধর্মনিরপেক্ষ-বৈজ্ঞানিক শিক্ষার কাঠামো গড়ে উঠেছিল, তাকে সম্পূর্ণ ধবংস করে দিয়ে এই শিক্ষানীতি পরিকল্পিতভাবে অন্ধ কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় উন্মাদনা ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক মনোভাব গড়ে তুলছে। রাজ্য সরকার মদ বিক্রিকে রাজস্ব আয়ের প্রধান উপায়ে পরিণত করেছে। ফলে যুব সমাজের মধ্যে মদ-মাদকের প্রভাব ক্রমাগত বাড়ছে। নারীর অবমাননা, নির্যাতন, ধর্ষণ, প্রতিদিনের ঘটনায় পর্যবসিত। অন্যায় ভাবে পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আদায় করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার। তার বেশির ভাগ অংশ ধনকুবেরদের করছাড়, ঋণছাড়ে ব্যয় করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া বিদ্যুৎ নীতি, রাজ্য সরকারের বিদ্যুতের সীমাহীন মাশুল বৃদ্ধি এবং প্রিপেড স্মার্ট মিটার চালু করার চেষ্টার ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম নেই। সার, বীজ, কীটনাশক, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি লাগামছাড়া। কেন্দ্রীয় সরকারের একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থরক্ষাকারী কৃষি নীতি ও বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা সর্বস্বান্ত। নদী পরিকল্পনা নেই, প্রতি বছর রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। স্থায়ী নদী বাঁধের ব্যবস্থা নেই। খেতমজুরের কাজ নেই। একের পর এক চা বাগান বন্ধ হচ্ছে। চা বাগানের শ্রমিক, কারখানার ছাঁটাই শ্রমিক, কাজ না পাওয়া বেকার যুবক জীবনযন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। দিশাহারা কেউ কেউ আত্মহত্যার রাস্তা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

প্রতি বছর ২ কোটি করে নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার জনগণের টাকায় গড়ে ওঠা রেল, ব্যাঙ্ক, বিমা খনি সহ লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বিলগ্নিকরণের নামে প্রায় বিনামূল্যে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কেন্দ্রে ও রাজ্যে বিপুল পরিমাণ সরকারি চাকরির পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। সরকারগুলি নিয়োগ না করায় বেকাররা হাহাকার করছে। দেশে বেকারির সংখ্যা স্বাধীন ভারতের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে।

কর্মীর অভাবে সারা দেশে রেলের নিরাপত্তা, যাত্রী পরিষেবা বিপর্যস্ত। ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। অভয়ার ন্যায়বিচার এখনও অধরা। কেন্দ্র-রাজ্যের যোগসাজশে একদিকে ন্যায়বিচার উপেক্ষিত, অন্য দিকে এই আন্দোলনের প্রথম সারির নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে চলছে সরকারি হেনস্থা। শিক্ষামন্ত্রীর কনভয় প্রতিবাদী ছাত্রের ওপর দিয়ে চালানোর ঘটনা ঘটেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্রীদের ওপর মেদিনীপুর কোতোয়ালি মহিলা থানায় অকথ্য অত্যাচার করে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা চলেছে।

অন্য দলগুলি যখন জনজীবনের এই দুর্বিষহ অবস্থা দেখেও নির্বিকার, যখন ক্ষমতার গদি দখলের লোভে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে সমাজে সম্প্রীতির পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে, ধ্বংস করছে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার লড়াইকে তখন এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে একদিকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমস্ত অন্যায় অত্যাচার অপশাসন ও জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলছে, অন্য দিকে পুঁজিবাদী নির্মম শোষণের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আজ যখন বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসক দলগুলি সরকার পরিচালনায় জনগণের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে পুলিশ ও আমলাতন্তে্রর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং জনস্বার্থের পরিবর্তে পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষাই তাদের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে তখন জনগণের ন্যূনতম দাবি আদায় করতেও তীব্র গণআন্দোলন ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা খোলা নেই। তার জন্য প্রয়োজন একেবারে নিচের তলা থেকে জনসাধারণের উদ্যোগে গণকমিটি গঠন এবং গণউদ্যোগ তথা জনগণের নিজস্ব রাজনৈতিক শক্তির জন্ম দেওয়া। একমাত্র এই রাস্তাতেই যে কোনও অন্যায় অত্যাচার দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করে দেওয়া সম্ভব। পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের অসহনীয় শোষণ অত্যাচার নিপীড়ন, যুদ্ধের অভিশাপ মুক্তির উপযোগী বিপ্লবী আন্দোলনের জমি তৈরি হতে পারে গণআন্দোলনের পথেই।

সেই লক্ষ্যেই কলকাতা মহানগরীর বুকে ২১ জানুয়ারি ঐতিহাসিক মহামিছিল সংগঠিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী ৩ এপ্রিল রাজ্যের জেলায় জেলায় বিক্ষোভ, আইন অমান্য সংগঠিত হবে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতিগুলিকে প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রতিটি জেলার নিজস্ব দাবিগুলি মানতে বাধ্য করার লক্ষ্যে ওই দিন সমস্ত জেলাশাসক দপ্তর অভিযান ও আইন অমান্য সংগঠিত হবে। আন্দোলনকে সুসংগঠিত এবং তীব্রতর করার লক্ষ্যে এই বিক্ষোভ আইন অমান্য কর্মসূচিকে সর্বাত্মক সফল করতে রাজ্যের মানুষ নিশ্চয় অতীতের মতো সক্রিয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।