২২ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘রোজগার মেলা’ কর্মসূচি থেকে ৭৫ হাজার চাকরিপ্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী। বছরে ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে ক’মাস আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ২০২৪-এর আগে আমরা ১০ লক্ষ চাকরি দেব। বছরে ২ কোটি বেকারের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ মোদিজি হঠাৎ ১০ লক্ষ চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করলেন কেন? কেনই বা ১০ লক্ষের মধ্যে মাত্র ৭৫ হাজার? অর্থাৎ একটা প্রতিশ্রুতিকে ভোলাতে আর একটা প্রতিশ্রুতি! তিনি কী ভাবছেন, দেশের মানুষ তাঁর আগের প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়েছেন? না। তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি দেশের মানুষ ঠিকই মনে রেখেছেন। আর সত্যিই যদি তিনি চাকরি দিতে চান, তবে রোজগার মেলা করার দরকার কীসের? সরকারি দপ্তর থেকেই তো তা দেওয়া যায়। নাকি তাহলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বেকার যুবকদের সঙ্গে হাসি হাসি মুখে ছবি তুলে দেশবাসীকে দেখানো যায় না যে, সরকার বেকার যুবকদের কথা কত ভাবে!
তিনি বলেছেন, এক শতাব্দীর কর্মসংস্থানের সমস্যার সমাধান ১০০ দিনের মধ্যে করা সম্ভব নয়। কেউ কি প্রধানমন্ত্রীকে ১০০ দিনের মধ্যে সব বেকারকে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছেন? ১০০ দিন কেন, ৮ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও তাঁর সরকার কর্মসংস্থানের ন্যূনতম ব্যবস্থা করতে পারল না কেন? কেন তাঁদের শাসনে বেকারত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছল?
এখনই বা হঠাৎ প্রধানমন্ত্রীর কর্মসংস্থানের ঘোষণা কেন? সামনে গুজরাট, হিমাচলপ্রদেশ মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন, হরিয়ানায় উপনির্বাচন এবং পুরভোট বলেই তো! ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। অত্যন্ত চড়া মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, দারিদ্রে জেরবার মানুষ বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিয়েও সর্বত্র কাজ হাসিল হচ্ছে না। ‘আচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন ফেরি করা বিজেপি নেতাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে জনরোষের দুঃস্বপ্ন। চাকরি দেওয়ার ভাঁওতাবাজিতে আর ভোলানো যাচ্ছে না দেশের যুব সমাজকে। ক্ষোভের প্রতিফলন যাতে ভোটবাক্সে না পড়ে সেজন্য যুব সমাজের সামনে এই প্রতিশ্রুতির গাজর ঝুলিয়ে রাখা প্রধানমন্ত্রীর।
অতিমারি ও তার পরবর্তী অনিশ্চয়তার কারণে বেকারত্বের বাড়বাড়ন্ত বলে জানিয়েছে সরকার। কথাটি আংশিক সত্য। সরকারি তথ্য থেকেই তো দেখা যাচ্ছে, শুধু কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরেই প্রায় ১০ লক্ষ পদ শূন্য। স্কুল-কলেজ সহ নানা ক্ষেত্রের দপ্তরগুলিতেও ফাঁকা পড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ পদ। কর্মসংস্থানের সদিচ্ছা থাকলে প্রধানমন্ত্রী তো সেগুলি অন্তত পূরণ করতে পারতেন! সেটুকুও না করে ভোটের মুখে মানুষের ক্ষোভ এড়াতে একের পর এক ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলা হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতা-মন্ত্রীদের কাজ। শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও ভুয়ো নিয়োগপত্র বিলি করে প্রতারণা করে চলেছেন বেকার যুবকদের সাথে। আসলে দেশজুড়ে বেকার যুবকদের যন্ত্রণার প্রতি, কি কেন্দ্র, কি রাজ্য–কোনও সরকারের কোনও কর্তারই বিন্দুমাত্র সহানুভূতি নেই। ভোট সামনে এলেই শুধু তাদের কথা মনে পড়ে নেতাদের এবং বন্যা বইতে থাকে চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতির।