Breaking News

২০ মে সাধারণ ধর্মঘট সফল করুন এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর আহ্বান

দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম শ্রমজীবী মানুষ এবং সকল শোষিত নিপীড়িত জনগণের কাছে ২০ মে সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানিয়েছে। সংযুক্ত কিসান মোর্চাও এই ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের জীবনের জরুরি এবং ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলিতে লড়াই তীব্র করার জন্যই এই ধর্মঘট। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে শ্রমিকদের দীর্ঘ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত ২৯টি শ্রম আইন প্রত্যাহার করে শ্রমিক স্বার্থবিরোধী, একচেটিয়া পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষাকারী ৪টি শ্রম কোড চালু করতে। এই ধর্মঘট শ্রমিকস্বার্থ বিরোধী শ্রম কোড বাতিলের দাবি তুলেছে। এই ধর্মঘটের আরও দাবি– সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ বন্ধ করা, ‘ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন’-এর নামে ঘুরপথে বেসরকারিকরণের হীন কৌশল বাতিল করা, নতুন বিদ্যুৎ বিল-২০২৩ বাতিল এবং স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ করা। দাবি উঠেছে, কর্ম সময় বাড়ানো চলবে না, ৮ ঘণ্টার কর্মদিবস এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা শ্রমসময় সুনিশ্চিত করতে হবে, স্থায়ী কর্মী কমানো চলবে না, কর্মীস্বার্থ বিরোধী ‘জাতীয় পেনশন স্কিম’ (এনপিএস)“ ইউনিফায়েড পেনশন স্কিম (ইউপিএস) বাতিল করে ‘নন কন্ট্রিবিউটরি পেনশন’ ফিরিয়ে এনে ‘পুরনো পেনশন স্কিম’ (ওপিএস) চালু করতে হবে ও সমস্ত কর্মচারীকে নিঃশর্তে তার আওতায় আনতে হবে। সমস্ত কাজকে কন্ট্র্যাকচুয়াল করার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে, ‘ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট’-এর মাধ্যমে কাজ হাসিল হলেই কর্মীদের ছাঁটাই করার নিষ্ঠুর ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। দাবি উঠছে, সমস্ত স্কিম কর্মীদের সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতি ও উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং ন্যায্য মজুরি ও স্থায়ী কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করতে হবে। সমস্ত ক্ষেত্রের অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য ‘ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ গঠন করতে হবে এবং তাদের সকলের ‘সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা’ সুনিশ্চিত করতে হবে, সমস্ত গিগ কর্মীদের শ্রমিকের স্বীকৃতি দিয়ে শ্রম আইনের আওতায় আনতে হবে, সকল বেকারের চাকরি অথবা যতদিন চাকরি না হচ্ছে ততদিন পর্যাপ্ত বেকার ভাতা দিতে হবে, কর্মসংস্থানের অধিকারকে সংবিধানে মৌলিক অধিকারের মান্যতা দিতে হবে, কর্মক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে।

এই সাধারণ ধর্মঘটের দাবি– খাদ্য, ওষুধ, গ্যাস, পেCল সহ সমস্তনিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে হবে, ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে ৭০০-র বেশি কৃষকের জীবনদান এবং আরও অজস্র কৃষকের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের শক্তিতে বাতিল হওয়া ৩ কালা কৃষি আইনকেই ঘুরপথে ‘ড্রাফট ন্যাশনাল পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক অন এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং’ রূপে চালু করার জঘন্য চক্রান্ত সম্পূর্ণরূপে বাতিল করতে হবে। ‘C২ + ৫০%’ ফর্মুলার ভিত্তিতে নূ্যনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) চালু করতে হবে। ধর্মঘটে দাবি উঠছে– শিক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক কেন্দ্রীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণ করার হীন চক্রান্ত নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, নারীদের ওপর আক্রমণ ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে, নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে, অশ্লীলতা, মদ ও মাদক দ্রব্যের সম্প্রসারণ রোধ করতে হবে। যে ভাবে মোবাইলের প্রতি আসক্তি, যৌন আসক্তি ইত্যাদি সমাজের নৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দিচ্ছে এবং মানুষকে মনুষ্যত্বহীন করে তুলছে তা রুখতে হবে। এই সমস্যা বিশেষ করে ছাত্র এবং যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রকট ভাবে দেখা দিচ্ছে, অবিলম্বে এই সাংস্কৃতিক অবক্ষয় রুখতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বন্ধুগণ, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ৭৮ বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতা এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বেঁচে থাকার ন্যূনতম দাবি আদায় করতে হলে মেহনতি জনতার সামনে শক্তিশালী সংগঠিত ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই। ভারত একটি তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশ হলেও মুষ্টিমেয় ধনী এবং অসংখ্য দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য বাড়তে বাড়তে এক ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশের হাতে জমা হয়েছে শ্রমজীবী মানুষের কঠিন শ্রমের ফসল দেশের ৭০ শতাংশ সম্পদ, অথচ এই সম্পদের মাত্র ৩ শতাংশের ওপর নির্ভর করে দিন কাটাচ্ছে দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ।

এই সংকটময় পরিস্থিতির মোকাবিলায় সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা এক বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে মেহনতি জনতার সংগ্রামী ঐক্য প্রয়োজন– জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে শ্রমিক, খেতমজুর, গরিব চাষি, গ্রাম ও শহরের মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষের সংগ্রামী ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। শাসক পুঁজিপতি শ্রেণির স্বার্থে ও তাদের বিপুল মুনাফা অটুট রাখতে তাদের সেবাদাস সরকার, প্রশাসন ধারাবাহিক ভাবে চেষ্টা করে চলেছে এই ঐক্যকে ভেঙে দিতে। সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের অবশ্যকর্তব্য এই সংগ্রামী ঐক্যকে চোখের মণির মতো রক্ষা করা এবং আরও বলিষ্ঠ ভাবে গড়ে তোলা।

বন্ধুগণ, দেশের সাধারণ নাগরিকদের নিজেদের স্বার্থেই এ কথা উপলব্ধি করতে হবে যে, তাদের দেশপ্রেম এবং দেশের প্রতি আবেগকে উগ্র জাতীয়তাবাদী হাওয়া তুলে দেশের মেহনতি মানুষের ঐক্য ভাঙার কাজে শাসক শ্রেণি ব্যবহার করতে চাইছে। ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতপুষ্ট ইহুদিবাদী ইজরায়েলের প্যালেস্টাইনের ওপর আক্রমণ এবং দখলদারি এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে, যুদ্ধের দ্বারা কেবলমাত্র সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস হয়। আজকের দিনে পুঁজিবাদের যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রয়োজন, তার প্রয়োজন ক্রমাগত চলতে থাকা আঞ্চলিক যুদ্ধ, যার মধ্য দিয়ে অর্থনীতির সম্পূর্ণ সামরিকীকরণ করা সম্ভব হবে, জীবনের প্রধান সমস্যাগুলি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে এবং এই সুযোগে মুষ্টিমেয় ধনকুবের গোষ্ঠী অবাধে মুনাফা লুঠতে পারবে। তাই আমরা সকল শ্রমজীবী মানুষ এবং সাধারণ জনগণের কাছে ঐকান্তিক আবেদন জানাচ্ছি– ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল, জাতি ইত্যাদি নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী ও আন্দোলনবিরোধী সকল শক্তির ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসুন। ২০ মে সাধারণ ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সফল করে তুলুন। নিজেদের জীবন-জীবিকার ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আরও বিস্তৃত, ঐক্যবদ্ধ, ধারাবাহিক এবং শক্তিশালী আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করতে সচেষ্ট হোন।

জনগণের সংগ্রামী ঐক্য দীর্ঘজীবী হোক

দুনিয়ার মজদুর এক হও

লেখাটি গণদাবী ৭৭ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ১৮ এপ্রিল ২০২৫ এ প্রকাশিত