কেমন শাসন দিতে পারে বিজেপি সরকার দেখিয়ে দিল কেন্দ্রীয় বাজেট। বাজেটটি পুঁজিপতি শ্রেণির জন্য উদারহস্ত, কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের উপর নির্মম। শ্রমজীবীদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্দশাগ্র্রস্ত যে অংশ তাদেরই উপর অর্থনৈতিক আঘাত সবচেয়ে বেশি হানা হয়েছে। এমনিতেই গ্র্রামীণ কৃষি শ্রমিকদের চাষের কয়েক মাস ছাড়া সারা বছর নিশ্চিত কাজ নেই। বহু আন্দোলনের পর কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কর্মসংস্থান প্রকল্প ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, মাত্র ১০০ দিন কেন? বাকি সময়টাতে খেতমজুরেরা কোথায় কাজ করবে? বছরে অন্তত ২০০ দিন কাজ দিতে হবে। দাবি উঠেছিল, ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সমতা বজায় রেখে মজুরি বাড়াতে হবে। কিন্তু এই দাবিগুলির কোনওটাই মান্যতা পেল না কেন্দ্রীয় বাজেটে।
তা হলে গ্র্রামীণ মজুরদের কী দিল কেন্দ্রীয় বাজেট? বাজেটে ১০০ দিনের কর্মসংস্থান বরাদ্দ প্রকল্প ৩৭ শতাংশ ছাঁটাই করা হল। গত বছরের বরাদ্দ ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এবার করা হয়েছে মাত্র ৭৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে গ্রামীণ কৃষি মজুরদের কাজের সুযোগ আরও কমে গেল। অথচ প্রয়োজন ছিল এই প্রকল্পে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর। প্রয়োজন ছিল লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ বরাদ্দ করা। তা না করে বরাদ্দ বিপুল পরিমাণে ছাঁটাই করা হল।
লকডাউনের আগে থেকেই ভারতীয় অর্থনীতি পুঁজিবাদের অনিবার্য নিয়মে মন্দা কবলিত। এই মন্দা থেকে অর্থনীতিকে বাঁচানোর নামে কেন্দ্রীয় সরকার দফায় দফায় হাজার হাজার কোটি টাকার ত্রাণ প্যাকেজ পুঁজিপতিদের দিলেও মন্দা কাটার কোনও লক্ষণই নেই। সরকারি ত্রাণ প্যাকেজ পেয়ে ভারতের প্রথম সারির় ১০০ জন পুঁজিপতির গড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ বাড়লেও মন্দা তাতে কাটেনি। মন্দা কাটাতে জরুরি প্রয়োজন জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি। সেটা সাময়িকভাবে হলেও কিছুটা বাড়ত যদি সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হত। অথচ সরকার বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটল। বরাদ্দ কমানো হল পিএম কিসান প্রকল্পেও। এই প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এবার সেখানে ১০ হাজার টাকা কম বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ কৃষি এবং কৃষি মজুর উভয়ের স্বার্থেই আঘাত হেনেছে মোদি সরকারের আর্থিক বাজেট।
এই বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে প্রচার করছে ক্ষমতায় এলে তারা সোনার বাংলা গড়বে। কিন্তু সেই সোনার বাংলায় গরিবের ঠাঁই হবে তো?