হিমঘরে আলু মজুত রেখে সরকারের মদতে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র

এই প্রতিবেদন লেখার সময় খুচরো বাজারে আলুর দাম ৩৪ টাকা কেজি। কেন এত দাম? বাজার অর্থনীতি বলে, জোগান কম হলে কিংবা চাহিদা বাড়লে পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু এই সময়ে আলুর চাহিদা হঠাৎ বাড়েনি। তাহলে জোগান কমের জন্যই কি দাম বেড়েছে?

জোগান কী ভাবে কমতে পারে? এক, আলুর উৎপাদন কম হলে, দুই, যথেষ্ট উৎপাদন হলেও তা মজুত করে রাখলে। আলুর ক্ষেত্রে ঠিক দ্বিতীয়টাই ঘটেছে। এ রাজ্যের হিমঘরে যথেষ্ট পরিমাণ আলু মজুত আছে। এক শ্রেণির বড় ব্যবসায়ী হিমঘরে মজুত আলু ধরে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। আর এই সুযোগে মাত্রাছাড়া দাম বাড়িয়ে বিপুল মুনাফা করছে তারা।

হিমঘরগুলি তৈরি হয়েছে কৃষকের উৎপাদিত আলু সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু বাস্তবে এখন হিমঘরে কৃষকের আলু থাকে সামান্যই। প্রতি বছরই আলু উৎপাদনের সময় হিমঘরগুলো খুলতে দেরি করে। কৃষকের ওই সময় ঋণ মেটানোর তাগিদ থাকায় তাদের পক্ষে আলু ধরে রাখা সম্ভব নয়। এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী শাসক দলের নেতা এমএলএ-এমপিদের নানা উপঢৌকন দিয়ে, হিমঘর মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে বেশির ভাগ বন্ড হাতিয়ে নেয়। ব্যবসায়ীরা হিমঘর যতদিনে খোলে, কৃষকের ঘরে তত দিনে আর আলু থাকে না। আলু যতদূর সম্ভব কম দামে কিনে ব্যবসায়ীরা এইসব হিমঘরে মজুত করে। তারপর সারা বছর ধরে কম কম করে আলু বাজারে আনে। এ ভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আলুর দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে তারা।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকারের কি কোনও ভূমিকা নেই? রাজ্যে একজন কৃষিমন্ত্রী আছেন। আছেন কৃষি-বিপণন মন্ত্রী। তাঁদের ভূমিকা কী? মূল্য নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনও ভূমিকাই মানুষ দেখছে না। আসলে সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীদের মদতেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এই ব্যবসায়ী চক্র। রাজ্য সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে সেখানেও রয়েছে এই ব্যবসায়ী চক্রের মাথারা। ফলে এই টাস্ক ফোর্স কালোবাজারির কারবারি বা মজুদারদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারে না, করার ইচ্ছেও তাদের থাকে না।

তাহলে জনগণের সামনে পথ কী? সরকার যদি মূল্যবৃদ্ধির সংকট থেকে মানুষকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই না করে তবে জনগণের সংগঠিত প্রতিবাদই একমাত্র রাস্তা। প্রয়োজন আলু, সবজি সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যাপক গণআন্দোলন। এসইউসিআই(কমিউনিস্ট) রাজ্য জুড়ে সেই আন্দোলনেই নেমেছে।