বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে চলা ভারত-বাংলাদেশ টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ পণ্ড করতে হিন্দু মহাসভা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিপীড়নের অভিযোগে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কোনও মতেই দুটি দেশের ক্রিকেট ম্যাচ তারা হতে দেবে না। ওই দিন তারা গোয়ালিয়র বনধের ডাক দিয়েছে। কিন্তু নিপীড়ন যদি ঘটেও এই কি তার প্রতিকারের উপায়? নাকি এর দ্বারা হিন্দু-মুসলিম উভয় সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই আরও উস্কানি দেওয়া হবে?
খেলা দুটি দেশের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে, দুটি দেশের মানুষের ঐক্যকে সংহত করতে সহায়ক হয়। কিন্তু যখন একটি দেশের মৌলবাদী সংগঠন আর একটি দেশের বিরুদ্ধে হুমকি ও শাসানির ক্ষেত্র হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রকে ব্যবহার করে, তখন তা উভয় দেশের মানুষের পক্ষে হয়ে দাঁড়ায় দুশ্চিন্তার বিষয়। খেলার আনন্দের বদলে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে। বিশেষ করে যখন খবরে প্রকাশ হল, কানপুরে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে কে বা কারা বাংলাদেশের এক সমর্থককে বেধড়ক মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
কিন্তু কেন এই হানাহানি, শাসানি? আসলে ক্রিকেটকে ছাপিয়ে উঠেছে শাসক বিজেপির মদতপুষ্ট পঙ্কিল দুষ্ট রাজনীতি। সে জন্য হিন্দু মহাসভার বনধ ডাকার কথা জেনেও বিজেপি সরকার কড়া পদক্ষেপের কথা বলেনি, শুধু মৌখিক ভাবে পুলিশ বলেছে খেলা হবে। কিন্তু তাদের মৌখিক প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে হিন্দু মহাসভার মতো বিজেপির আশ্রয়পুষ্ট একটি চরম হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর হুমকির মোকাবিলা করা সম্ভব কি, না কি নির্ভয়ে খেলা সম্ভব?
আশ্চর্যের বিষয়, আন্তর্জাতিক মানের একটি ক্রিকেট ম্যাচ পণ্ড করতে নামা হিন্দু মহাসভার হুমকি নিয়ে কেন্দ্রের নেতা-মন্ত্রীরাও চুপ। অথচ তখনই দেখা যাচ্ছে আমেরিকায় নির্বিঘ্নে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সারছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা। বাংলাদেশে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ ব্যবসা করে লক্ষ কোটি টাকা মুনাফা লোটা দেখেও চুপ করে থাকেন এই হিন্দুত্ববাদীরা। সেই টাকা হিন্দুদের না মুসলিম ব্যক্তির পকেটের টাকা, তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন এরা আদতেই করেন না, করতে পারেন না। কারণ, তা নিয়ে তাদের আদৌ কোনও মাথাব্যথা নেই। আসলে আম্বানি-আদানিদের মদত ছাড়া বিজেপি-আরএসএস-হিন্দু মহাসভার অর্থভাণ্ডার পুষ্ট হবে কী ভাবে?
বাস্তবে বিজেপি এবং তার শাখা সংগঠনগুলির এই বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক আচরণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুসলিম মৌলবাদীদের শক্তিবৃদ্ধিতেই সাহায্য করবে। আবার তার প্রতিক্রিয়ায় এ দেশে হিন্দু মহাসভা, আরএসএস গলা চড়াবে– এটাই এদের রাজনীতি। এর সাথে জনস্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই।
দুই দেশের মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে দু’দেশেই গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে গলা তুলতে হবে। বাংলাদেশে যে মৌলবাদীরা বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সুফলকে আত্মসাৎ করে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে, তারা হিন্দু মহাসভার এই কাজে বল পাবে। তা থেকে সতর্ক থাকতে হবে গণতন্ত্রপ্রিয় ধর্মনিরপেক্ষ সমস্ত মানুষকে।