সেভ এডুকেশন কমিটির সর্বভারতীয় ওয়েবিনার
ইংরেজির পরিবর্তে হিন্দিকে শিক্ষার মাধ্যম ও সরকারি কাজের ভাষা হিসেবে চাপানোর বিরুদ্ধে ২৭ নভেম্বর অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটির উদ্যোগে সর্বভারতীয় ওয়েবিনারে দেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও শিক্ষাবিদরা সরব হন৷ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক করুণানন্দন বলেন, এদেশে জাতীয় সংগ্রাম এবং দেশাত্মবোধ গড়েই ডঠেছিল ইংরেজিকে নির্ভর করে৷ পাঞ্জাব, গুজরাট, বালুচিস্তান, মহারাষ্ট্র, মাদ্রাজ, বাংলার মধ্যে যোগাযোগ হিন্দি বা সংস্কৃত ভাষার মাধ্যমে নয়, গড়ে ডঠেছিল ইংরেজির মাধ্যমে৷
ধর্ম, বর্ণের বিভাজনের মতোই আজ নাগরিকদের হিন্দিভাষী ও অহিন্দিভাষী এই দুটো ভাগে ভাগ করার চেষ্টা চলছে, যা উচিত নয়৷ এসবের দ্বারা দেশকে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র বানানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷
বিশিষ্ট ভাষাতত্ত্ববিদ অধ্যাপক গণেশ এন ডেভি বলেন, আমাদের দেশের জাতীয় নেতারা বুঝেছিলেন, ভাষায় বৈচিত্র্য অনুযায়ী ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন করতে হবে৷ ১৯২৬ সালে কংগ্রেসে এ বিষয়ে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল৷ স্বাধীনতার পর অষ্টম তফসিলে ২২টি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে দেশকে বহুভাষী রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, যাদের মাতৃভাষা হিন্দি বলা হচ্ছে তাদের অনেকেরই হিন্দি দ্বিতীয় মাতৃভাষা৷ পাঁচ কোটি ভোজপুরী ভাষীর মতো উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, পাঞ্জাব, ঝাড়খন্ড প্রভৃতি রাজ্যেও ‘দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিন্দি’র নজির রয়েছে৷ বাস্তবে দেশের ৭২ শতাংশ মানুষই অহিন্দিভাষী৷ এদের উপর জোর করে হিন্দি চাপানো উচিত নয়৷
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক শচীদানন্দ সিনহা বলেন, ভারতের উত্তর–দক্ষিণ ও পূর্ব–পশ্চিমের ঐক্যকে সুদৃঢ় করেছে শুধু ইংরেজি নয়, অন্যান্য ভাষায় আদান–প্রদান৷ এক ভাষা নয়, হিরে–মতি–জহরতের মতো নানা ভাষাকে মালার মতো গেঁথে ভারতে একতার সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে৷
আইআইটি মুম্বাইয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক রাম পুনিয়ানি বলেন, ইংরেজিকে বাতিল করে হিন্দি চাপানোর অপচেষ্টা একটি বিপজ্জনক বিষয়৷ হিন্দুত্ববাদীরা আজ উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্য তা ব্যবহার করছে৷ এক সময়ের মুসলিম মৌলবাদীদের দ্বারা উত্থাপিত ‘উর্দু–মুসলিম–পাকিস্তান’এর মতো আজ হিন্দুত্ববাদীরা ‘হিন্দি–হিন্দু–হিন্দুস্তান’–এর স্লোগান ব্যবহার করছে৷ অথচ ধর্মকে ভাষার সাথে যুক্ত করা কোনও মতেই উচিত নয়৷ অধ্যাপক পুনিয়ানি বলেন, মধ্যপ্রদেশ সরকার চিকিৎসাবিদ্যা হিন্দি ভাষার মাধ্যমে চালু করার জন্য অ্যানাটমির যে হিন্দি পুস্তক প্রকাশ করেছে তা আসলে দেবনাগরী বর্ণমালায় লেখা ইংরেজি পুস্তক ছাড়া কিছু নয়৷ হিন্দি ভাষা চাপানোকে আজ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ এটা সাম্প্রদায়িক প্রচেষ্টা৷ ওয়েবিনারের সঞ্চালক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তরুণকান্তি নস্কর বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উপর জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দিতে চাইছে তার বিরুদ্ধে অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি দেশ জুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলছে৷ উচ্চশিক্ষায় জোর করে হিন্দি চাপালে এমনকি হিন্দিভাষী ছাত্রছাত্রীরাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি ২৯ ডিসেম্বর চেন্নাইতে সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে কনভেনশন করতে চলেছে৷ অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও হিন্দি জোর করে চাপানোর বিরুদ্ধে সেমিনার, প্রতিবাদ সভা প্রভৃতি সংগঠিত হবে৷ তিনি দেশের মানুষকে এই আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান৷