কর্ণাটকের একটি কলেজে হিজাব পরে আসা ছয়জন ছাত্রীকে ক্লাস করতে না দেওয়ায় গত মাসে যে বিতর্কের সূত্রপাত, বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারের উস্কানিমূলক ভূমিকায় তা সারা ভারতেই ছড়িয়ে পড়েছে। হিজাবের বিরুদ্ধে গলায় গেরুয়া স্কার্ফ পরে কেউ কেউ যেমন এই বিতর্কে ইন্ধন দিচ্ছে, তেমনি তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে হিজাব পরা সাংবিধানিক অধিকার প্ল্যাকার্ড নিয়ে আর একদল রাস্তায় নেমেছে। এসইউসিআই (সি) কর্ণাটক রাজ্য সম্পাদিকা কমরেড কে উমা ১১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে বিষয়টি কলেজেই মীমাংসা হয়ে যেতে পারত সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক ভূমিকায় তা বিতর্ক হিসাবে রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সেকুলার ভারতের স্বপ্নকে উড়িয়ে দিয়ে প্রত্যেকটি সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠানে, শিক্ষালয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতির চর্চা করে চলেছে। প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ধারণা হল, রাষ্ট্র হবে ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ধর্ম ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের বিষয় হিসাবে থাকবে। ধর্মনিরপেক্ষতার এই মর্মার্থ লঙ্ঘন করে প্রত্যেকটি সরকার স্কুল, কলেজ, সরকারি অফিস, এমনকী বিধানসভায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান, আচার, রীতি পালন করে আসছে। এরই সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ভোটের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলির ধর্ম ও জাতপাতের বিভেদ উস্কে দেওয়ার চক্রান্ত। এইভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে শাসক শ্রেণি জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। চূড়ান্ত মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব সহ এই কোভিড পরিস্থিতিতে যে প্রবল অর্থনৈতিক সঙ্কট, যার বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ছে, সেই আন্দোলন ধ্বংস করতে শাসক শ্রেণি এই বিতর্ককে অত্যন্ত চতুর্যের সাথে কাজে লাগাচ্ছে। পাঁচ রাজ্যে সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচন এবং আগামী বছরে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে মেরুকরণের লক্ষ্যে এই অশুভ জিনিস ঘটে চলেছে। সংখ্যালঘু মুসলিমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
তিনি বলেন, কর্ণাটক রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সুনাম রয়েছে। এই সম্প্রীতি গড়ে ওঠার পিছনে কুভেম্পু, তেজস্বী, কোদাগিনা, গৌরাম্মা, পণ্ডিত তারানাথ সহ বিদ্বজ্জনদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শাসক শ্রেণি হীন উদ্দেশ্যে এর উপর আঘাত হানছে।
তিনি বলেন, প্ররোচনা সত্তে্বও শান্তিপ্রিয় মানুষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রছাত্রী এই বিভেদের খেলা থেকে দূরে রয়েছেন। এটা অত্যন্ত আশার কথা। এ জন্য তিনি তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সরকারকে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ঐক্য ভাঙার শক্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে নামতে হবে। এআইএমএসএস-এর সর্বভারতীয় সম্পাদক কমরেড ছবি মহান্তি এবং সভানেত্রী কমরেড কেয়া দে ১২ ফেব্রুয়ারি হিজাব বিতর্কে যুক্ত না হয়ে নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে সামাজিক সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।